২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে (Delhi) প্রতিবাদী কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালিতে (Tractor Rally) ট্র্যক্টর নিয়ে যোগ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসক ডঃ কাফিল খান (Kafeel Khan) – এই দাবি সহ একটি ছবিকে ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করা হয়েছে। বুম যাচাই করে দেখে কাফিল খান ওইদিন দিল্লিতে ট্র্যাক্টর নিয়ে মিছিলে যোগদান করেননি। ওইদিন কাফিল খান রাজস্থানের জয়পুরে ছিলেন, স্থানীয় থানার সাবইনস্পেক্টর বুমকে নিশ্চিত করে বলেন যে ডঃ কাফিল খান ওইদিন রাজস্থানের লঙ্গরিয়াস গ্রামে ছিলেন।
গত ২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কৃষি ও খামার সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত উত্তর ভারতের কৃষকরা ট্র্যাক্তর নিয়ে দিল্লিতে প্রবেশ করে। কৃষকদের এই ট্র্যাক্টর মার্চকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজধানী দিল্লির লাল কেল্লা এবং ITO এলাকা।
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের ২০১৭-র অগস্টে বিআরডি মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে শিশু-মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল সেই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় সেই মেডিকেল কলেজ হাঁসপাতালের ডক্টর কাফিল খানকে। দুবছর পর ২০১৯ এ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। আবার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পরেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সমালোচনা করায় কাফিল খানকে গ্রেপ্তার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।সেবার ডঃ কাফিল খানকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়। অগস্ট ২০২০ এ মথুরা জেল থেকে মুক্তি পান কাফিল খান, সেপ্টেম্বরে কাফিল খানের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ উচ্চ আদালত।
ফেসবুকে যে গ্রাফিক ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ডঃ কাফিল খান হলুদ পাগড়ি মাথায় দিয়ে একটি ট্র্যাক্টরের চালকের বসে আছেন। ছবিতে লেখা রয়েছে, "ইনি হলেন উত্তরপ্রদেশের শিশু মৃত্যু কাণ্ডের ডাঃ কাফিল খান, দিল্লির কৃষক আন্দোলনে ট্র্যাক্টর নিয়ে গেছেন, তিনি ডাক্তারের সাথে সাথে মনে হয় চাষ করেন।"
টুইটারে ভাইরাল
ইন্ডিয়ান ফিল্ম এন্ড টিভি ডিরেক্টরস এসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক পন্ডিত খাফিল খানের এই ছবিটি সহ টুইট করেন এবং লিখেন, "ইনি হচ্ছেন গোরক্ষপুরের অক্সিজেন চোর কাফিল খান যে এখন কৃষক সেজে দিল্লিতে হিংসা ছড়াচ্ছে। যোগীর পুলিশ একে ভুলে গেছে।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ কর আছে
এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম কাফিল খানের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল ঘেটে তাঁর
ফেসবুকে ও
ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৬ জানুয়ারিতে আপলোড করা একটি ভিডিও খুঁজে পায়, যেখানে কাফিল খানকে ভাইরাল ছবির মতো একটি ট্র্যাক্টরে বসে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওটির ১৭ সেকেন্ডের সময়কার ফ্রেমটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল গ্রাফিকে বসিয়ে ভুয়ো দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।
ডঃ কাফিল খানের আপলোড করা ভিডিওর স্ক্রিনশট
কাফিল খানের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "চলুন আজ ট্র্যাক্টর চালানো শিখি। কৃষক ভাইয়েরা এখন পর্যন্ত চরম সংযম এবং অনুশাসন দেখিয়ে এসেছেন। একমাত্র শর্ত হচ্ছে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা।" (হিন্দ: ''चलो आज ट्रैक्टर चलना सीखते हैं। किसान भाइयों ने अबतक ज़बरदस्त धैर्य और अनुशासन का परिचय दिया है। शर्त बस यही शांति और अनुशासन बनायें रखना है ।'')
বুম ডঃ কাফিল খানের সাথে যোগাযোগ করলে ডঃ খান জানান তিনি ২৫ জানুয়ারি জয়পুরের নিকটে লঙ্গরিয়াস গ্রামে ছিলেন এবং ট্র্যাক্টরের ভিডিওটি ওই গ্রামে রেকর্ড করা হয়েছে। "আমি রাজস্থানের গ্রামে মনরেগা প্রকল্পের সাথে যুক্ত মহিলাদের সাথে মতবিনিময় করেছি। তারা আমাকে কোভিড ১৯ লকডাউনের সময়ের কঠিন পরিস্থিতির কথা বলছে, সরকার তাদেরকে ন্যায্য পাওয়া দিচ্ছে না ফলে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। তাই তারা নিজেদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবি রেখেছে।" ডঃ খান জানান। ডঃ খান আরও জানান যে ওইদিন গ্রামে ভিডিও রেকর্ডের সময়ে রাজস্থান পুলিশের এক সাবইনস্পেক্টর তেজপাল তাদের সাথে ছিলেন।
বুম এই বিষয়ে সাবইন্সপেক্টর তেজপালের সাথে যোগাযোগ করলে তেজপাল ২৫ জানুয়ারি লঙ্গরিয়াস গ্রামে ডঃ কাফিল খানের উপস্থিতি নিয়ে বুমকে নিশ্চিত করে।
ডঃ খান ওই গ্রামের অনুষ্ঠানের আরও কয়েকটি ছবি বুমের সাথে ভাগ করেন।
মহিলা শ্রমিকদের সাথে ডঃ কাফিল খান
মহিলা শ্রমিকদের সাথে ডঃ কাফিল খান
ডঃ কাফিল খান বুমকে বলে ২৬ জানুয়ারি শাহিন অ্যাকাদেমিতে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। "আমি গত এক মাসের মধ্যে দিল্লি যাইনি।" ডঃ খান উল্লেখ করেন।
শাহিন অ্যাকাদেমিতে পতাকা উত্তোলনের আরও কিছু ছবি ডঃ খান বুমকে শেয়ার করেন।
প্রজাতন্ত্র দিবসে শাহিন অ্যাকাদেমিতে ডঃ কাফিল খান
শাহিন অ্যাকাদেমিতে ডঃ কাফিল খান
কাফিল খান নিজের টুইটারে ২৬ তারিখে ওই স্কুলে পতাকা তুলার ভিডিও রিটুইট করেছেন।