কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ছড়াল কানাডার আরএসএসকে নিষিদ্ধ করার ভুয়ো দাবি
বুম দেখে ভিডিওতে উপস্থিত ব্যক্তি হলেন এক স্বাধীন এনজিওর প্রধান। তিনি কানাডার কোনও সরকারি পদমর্যাদার ব্যক্তি নন।
ভারতের সাথে চলা কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই একজন ব্যক্তির কানাডায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (RSS) নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বক্তব্য রাখার এক ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সমাজ মাধ্যমে। ভিডিওটি পোস্ট করে মিথ্যা এক দাবিতে বলা হয় কানাডা (Canada) সরকার হিন্দু সংগঠন আরএসএসকে নিষিদ্ধ করতে প্রস্তুত।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ওই ভিডিওতে যে ব্যক্তি কথা বলছেন তিনি হলেন স্বাধীন এক এনজিওর প্রধান, কানাডার কোনও সরকারি কর্মকর্তা নন।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিকে মূলতঃ চারটি দাবি করতে শোনা যায়; ভারতে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা, কানাডায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করা এবং আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা।
এবছরের জুন মাসে হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার ঘটনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতকে অভিযুক্ত করার পরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক এক অচলাবস্থা দেখা দেয়। ভারত এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। ৪৫ বছরের নিজ্জার একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা কানাডিয়ান-শিখ নেতা ছিলেন যিনি পৃথক এক শিখ মাতৃভূমি তথা খালিস্তানের স্বপক্ষে আন্দোলনের জন্য পরিচিত ছিলেন। দুজন মুখোশধারী লোক কানাডার সারেতে তাকে তার গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে। ট্রুডোর অভিযোগের পরে কানাডা একজন ভারতীয় কূটনীতিককে দেশে তাদের পদ থেকে অপসারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতও একজন কানাডার কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ও কানাডার সমস্ত ভিসা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ব্যাঙ্গাত্মক ঢঙে লেখেন, "কানাডায় আরএসএস নিষিদ্ধ !?! যদি এটি সত্য হয় তবে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, কানাডা অখণ্ড ভারতের পরিকল্পনা / চিত্র/ ছবি বুঝতে অক্ষম হয়েছে!!"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা এই ব্যক্তি হলেন স্বাধীন এক সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমসের (এনসিসিএম) প্রধান এবং তাতে কানাডা সরকারের কোনও কর্মকর্তাকে বিবৃতি দিতে দেখা যায় না।
আমরা ভিডিওটি খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে @nccmuslims এক টিকটক অ্যাকাউন্টের জলছাপ লক্ষ্য করি। অতঃপর, ওই টিকটক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে খোঁজ করার পর আমরা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে আপলোড হওয়া ওই ভিডিওর দীর্ঘতর অংশের সন্ধান পাই।
ওই ভিডিওর ক্যাপশনে এনসিসিএমের সিইও স্টিফেন ব্রাউনের কানাডার ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশনের সাথে যৌথভাবে বিবৃতির কথা বিশদে উল্লেখ করা হয়।
এনসিসিএমের স্টিফেন ব্রাউন সংক্রান্ত জন্য অনুসন্ধান করে আমাদের ওই সংগঠনের ওয়েবসাইটটি খুঁজে পাই। ওই ওয়েবসাইটের 'সম্পর্ক' বিভাগে সংগঠনটিকে স্বাধীন, নির্দলীয় এক এনজিও হিসেবে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়।
এখানে তা দেখতে পাওয়া যাবে। ওই ওয়েবসাইটে কানাডা সরকারের সাথে সংগঠনটির কোনও যোগসূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায় না।
আমরা ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আল জাজিরার এক প্রতিবেদনও খুঁজে পাই, যার শিরোনাম হিসেবে লেখা হয়, 'শিখ, মুসলিম নেতারা কানাডায় শিখ নেতার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন'। এই রিপোর্টের মূল ছবির পটভূমিতে স্টিফেন ব্রাউনকেও দেখতে পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ সংক্রান্ত খবরের পর কানাডার শিখ ও মুসলিম নেতারা কানাডায় সাম্প্রদায়িক অপরাধ প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সেদেশের সরকারকে অনুরোধ জানান। কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের পাওয়া হুমকির কথা তুলে ধরতে অটোয়ায় হাউস অফ কমন্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই নেতারা এই আবেদন করেন। কানাডার ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশনের বোর্ড সদস্য মুখবীর সিংও ভারত সরকার শিখদের বিরুদ্ধে "গুপ্তচরবৃত্তি ও ভুয়ো তথ্য" সংক্রান্ত নিশানা করছে বলে অভিযোগ করেন।
ওই প্রতিবেদনে এনসিসিএমের অফিসিয়াল এক্স পেজ থেকেও করা পোস্ট রয়েছে যা ভারতে সম্প্রতি উপলব্ধ নয়। নীচে এনসিসিএম ও কানাডার ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশনের প্রেস কনফারেন্সে করা একই দাবি সহ পোস্টটির এক স্ক্রিনশট দেখতে পাওয়া যাবে।
তার আর্কাইভ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
২০ সেপ্টেম্বর এনসিসিএমের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা স্টিফেন ব্রাউনের বক্তৃতাও আমরা খুঁজে পাই।
আমরা আরএসএসের উপর নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে এধরণের কোনও বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাইনি। এছাড়াও আমরা জাস্টিন ট্রুডো এবং কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির দেওয়া এমন কোনও বিবৃতির সন্ধান করে তার সদর্থক কোনও ফলাফল পাইনি।