না, মুসলিম গোষ্ঠীগুলি আদালতকে বলেনি হালাল মানে খাবারে লালা ফেলা
বুম দেখে এক হিন্দু ব্যক্তির অভিযোগ সহ পিটিশানের জবাবে মুসলিম গোষ্ঠীগুলি বিষয়টি স্বীকার করেছে, এই ভাইরাল বার্তা ভুয়ো।
তামিলনাড়ুর আদালতে এক শুনানিতে মুসলিম (Muslims)গোষ্ঠীগুলি স্বীকার করে নিয়েছে যে, কোনও খাবার তখনই হালাল (Halal) বলে গণ্য হবে যখন তাতে লালা (Spitting) ফেলা হবে— এই ভাইরাল বার্তাটি ভুয়ো (Fake) এবং বিভ্রান্তিকর।
তামিলনাড়ুর একটি উগ্র দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী ইন্দু মাক্কাল কাটচি এই ভুয়ো বার্তাটি হিন্দি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই শেয়ার করেছে।
বুম দেখে দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং কেরল হাইকোর্টে ত্রিবাঙ্কুর দেবাসম বোর্ডের বিরুদ্ধে দাখিল হওয়া একটি আবেদনের একটি অংশকে ভুল ব্যাখ্যা করে এটি তৈরি করা হয়েছে। আবেদনকারী এস জে আর কুমারই এই ভুয়ো অভিযোগটি করেন। এই কুমার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কেরল শাখা সহ বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের সদস্য।
ফেসবুকে একটি হিন্দি বয়ানে এই দাবিটি ভাইরাল হয়েছে, যার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, "তামিলনাড়ুর একটি মামলায় মুসলিমরা স্বীকার করেছে যে, 'হালাল' মানে খাবারে থুতু ফেলা এবং যতক্ষণ না রাঁধুনি তার রান্না করা খাবারে থুতু দিচ্ছে, ততক্ষণ সেটাকে ঠিকঠাক 'হালাল' বলা যাবে না। অর্থাৎ মুসলিমদের তৈরি খাবার ততক্ষণ পরিবেশনযোগ্য হবে না, যতক্ষণ তাতে থুতু না দেওয়া হচ্ছে। একটি মামলায় তারা স্বীকার করেছে যে, তামিলনাড়ু সহ সারা দেশেই থুতু ফেলার পরেই 'হালাল' সম্পূর্ণ হয়।"
পোস্টটিতে মুসলিম মালিকানার খাবারের দোকানে খাওয়ার ব্যাপারে হিন্দুদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
হালাল পদ্ধতি নিয়ে দক্ষিণপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলির দীর্ঘ দিনের আপত্তি ও ক্ষোভ এবং হালাল-শংসাপত্র পাওয়া খাবারের পরিবেশন নিয়ে আপত্তির ধারাবাহিকতায় এটি সর্বশেষ সংযোজন।
এই একই বার্তা একই ভুয়ো দাবি সহ হোয়াটসঅ্যাপেও ভাইরাল হয়েছে ইংরাজি ও মারাঠি ভাষায়।
তথ্য যাচাই
প্রথমেই আমরা মুসলিমদের খাবারে থুতু ফেলায় সেটা হালাল হওয়া সংক্রান্ত স্বীকারোক্তি নিয়ে কোনও সংবাদ-প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে কিনা, তার খোঁজ করি। বলা বাহুল্য, তেমন কোনও প্রতিবেদন আমাদের চোখে পড়েনি।
আরও অনুসন্ধান করে আমরা বিখ্যাত সবরিমালা মন্দিরের পরিচালক ত্রিবাঙ্কুর দেবাসম বোর্ডের বিরুদ্ধে কেরল হাইকোর্টে জনৈক এস জে আর কুমারের দাখিল করা একটি আবেদনের হদিশ পাই।
কুমার বর্তমানে সবরিমালা কর্মসমিতির সাধারণ আহ্বায়কও বটে, যে-সংগঠন ওই মন্দিরের প্রথা ও ঐতিহ্য রক্ষা করার ওপর নজরদারি চালায়। বোর্ডের বিরুদ্ধে তাঁর আবেদনে কুমার অভিযোগ করেন, মন্দির কর্তৃপক্ষ ভক্তদের কাছে নষ্ট হওয়া গুড় পরিবেশন করেন, যা নাকি হালাল করা। একটি হিন্দু মন্দিরে হালাল শংসাপত্র পাওয়া খাদ্যসামগ্রী কেন বিতরণ করা হবে, তাই নিয়ে তাঁর আপত্তি। গুড় আখের রস ঘন করে তৈরি একটি জিনিস, যা গোটা ভারতে খাবারকে মিষ্টি করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আদালতে পেশ করা আবেদনটি পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি, তাতে আবেদনকারী কেবল অভিযোগ করেছেন, কোনও মুসলিম সংগঠন বা গোষ্ঠীর তরফে এই মর্মে কোনও স্বীকারোক্তি করা হয়নি, যা ভাইরাল হওয়া বার্তায় দাবি করা হয়েছে।
নীচে আবেদনের প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধৃত হলো।
আবেদনকারী কুমার তাঁর দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেননি। শুধু বলেছেন, "মুসলিম ধর্মবেত্তারা দাবি করে থাকেন, কোনও খাদ্যবস্তুকে হালাল-এর শংসাপত্র পেতে হলে তার সঙ্গে মুখের লালা যুক্ত হওয়া আবশ্যক। তাঁরা তাঁদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ও তার ব্যাখ্যা অনুসারেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তবে অন্য কিছু ধর্মীয় নেতা এ থেকে স্বতন্ত্র অভিমতও পোষণ করে থাকেন।"
আমরা এও দেখেছি যে, কেরল হাইকোর্ট বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত শুনানি চেয়ে আবেদনকারীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, তারা হালাল কথাটির প্রকৃত তাত্পর্য জানে কিনা। লাইভ ল গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী আদালত বলেছে, "হালাল-এর ধারণাটির মূল কথা হল, কয়েকটি খাদ্যসামগ্রী বর্জনীয়, বাকিগুলি সবই গ্রহণ করা যেতে পারে, অর্থাৎ হালাল। হালাল শংসাপত্রের উদ্দেশ্য হল, নিষিদ্ধ বা বর্জনীয় বস্তুগুলি যে কোনও পণ্যে ব্যবহৃত হয়নি, তা নিশ্চিত করা।"
এর আগেও বুম সবরিমালা মন্দিরে বিতরণ করা আরাভানা প্রসাদ নাকি হালাল-শংসায়িত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এক কোম্পানি আল-জাহার তৈরি, এই মর্মে একটি ভুয়ো রিপোর্টের পর্দাফাঁস করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে রাস্তায় নামাজের ছবি মিথ্যে দাবিতে ছড়াল ভারতের বলে