না, পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিম ব্যবসায়ীদের জন্য জিএসটি মকুব করেনি
মুসলিম ব্যবসায়ীদের জিএসটি মকুব করেছে সরকার—ভুয়ো দাবি রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মহম্মদ গোলাম রব্বানি খারিজ করেছেন।
একটি ভুয়ো খবরের (newspaper) ক্লিপিং (Clipping) সোশাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে (Fake) ও সাম্প্রদায়িক দাবি (Communal Claims) সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিম (Muslims) ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে গুডস অ্যান্ড সারভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি) (GST) মকুব করে দিয়েছেন।
বুম যাচাই করে দেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিম ব্যবসায়ীদের জন্য জিএসটি আদৌ মকুব করেনি। বুম রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মহম্মদ গোলাম রব্বানি'র সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি ওই দাবিটি মিথ্যে বলে খারিজ করে দেন।
ভাইরাল ভিডিওটিতে একটি হিন্দি খবরের ক্লিপিং দেখা যায়। সেটির শিরোনামে বলা হয়, "মুসলমান ব্যবসায়ীদের জন্য জিএসটি মকুব করা হল। মমতার সরকার জিএসটি দিয়ে দেবে।"
(হিন্দিতে লেখা মূল শিরোনাম: मुस्लिम व्यापारियों का GST माफ़ GST भरेगी ममता सरकार")
ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, "পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মমতা-সরকার মনে করে, জিএসটি মুসলমান ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। তাই মুসলমান ব্যবসায়ীদের যে কর দিতে হয়, সেটা সরকার দিয়ে দেবে। তার মানে, মুসলমান ব্যবসায়ীদের কর মকুব করা হল। বাংলায় মুসলমানদের সংখ্যা হল ৩৫ শতাংশ। ফলে, তাঁরা সরকারের গঠন ও পতন নিয়ন্ত্রণ করেন। মমতা-সরকারের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, বাংলা একটি ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।"
ওই ছবিটি ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হয়েছে। সেই রকম একটি পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "জানি না এটা সত্যি কিনা। কিন্তু যদি সত্যি হয়, তা হলে খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার। #জিএসটি #পিএম মোদি"।
একই দাবি সমেত ছবিটি টুইটারেও শেয়ার করা হয়েছে।
একটি টুইটের আর্কাইভ এখানে।
আরও পড়ুন: মৃত মায়ের পাশে সদ্যজাত ও ডাক্তারের দুটো ছবি সম্পর্কহীন, কাহিনী মনগড়া
তথ্য যাচাই
পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিম ব্যবসায়ীদের জন্য জিএসটি মকুব করেছে কিনা তা জানতে, বুম গুগলে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে। কিন্তু আমরা সেই মর্মে কোনও সরকারি আদেশ বা সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই না।
রাজ্যের ক্যাবিনেটের সদস্য এবং সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী মহম্মদ গোলাম রব্বানি'র সঙ্গে বুম যোগাযোগ করলে, তিনি দাবিটি উড়িয়ে দেন। উত্তরবঙ্গের গোয়ালপোখর কেন্দ্র থেকে রব্বানি ভোটে জিতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বুমকে মহম্মদ গোলাম রব্বানির কার্যলয় থেকে জানানো হয়, "মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সব নাগরিকদের জন্য কাজ করে। ওই তথাকথিত ভাইরাল খবরটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যে। এবং এটি হল বিজেপি'র তথ্যপ্রযুক্তি শাখার কারসাজি, তারা একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়।"
১১ মার্চ ২০২২, পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ₹৩.২১ লক্ষ কোটি টাকার রাজ্য বাজেট পেশ করেন। ২০২২-২৩ থেকে দু'বছরের জন্য, ব্যাটারি-চালিত বৈদ্যুতিক গাড়ি ও প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজি-চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ও পথকরের ওপর ছাড় ঘোষণা করা হয় বাজেটে। ওই বাজেটে, পরের আর্থিক বছর থেকে, চা শিল্প ও চা বাগানগুলির ক্ষেত্রেও কর ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। এবং কর্মীদের ক্ষেত্রে, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা মাশুল রদ করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া কৃষি আয়করও স্থগিত রাখার ঘোষণাও করা হয়েছে বাজেটে।
আরও পড়ুন: টিভি সিরিজের ভিডিও ছড়াল ইউক্রেনীয়দের নকল আঘাত বলে