গণমাধ্যমে ভুয়ো দাবি বিহারের পূর্ণিয়ায় প্রজাতন্ত্র দিবসে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন
বুম এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে বিহারের পূর্ণিয়ায় ওই পতাকাটি একটি ইসলামীয় পতাকা, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়।
বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ভুয়ো রিপোর্ট (fake news reports) প্রকাশ করে যে বিহারের (Bihar) পূর্ণিয়া (Purnia) জেলার একটি বাড়ির ছাতে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে পাকিস্তানের (Pakistan Flag) পাতাকা তোলা হয়েছিল। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, এর ফলে এলাকায় নাকি উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং পুলিশ গিয়ে ওই পতাকা নামিয়ে দেয়।
বুম এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে যে পতাকাটি ইসলামীয় (Islamic flag) ধর্মীয় পতাকা, পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়।
সংবাদসংস্থা এএনআই খবরে লেখে—“প্রজাতন্ত্র দিবসে পূর্ণিয়া জেলার মধুবনি সিপাহি টোলা এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা তোলা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।”
গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভি, সিএনএন নিউজ-১৮, ভাস্কর, অমর উজালা, লাইভ হিন্দুস্তান, নবভারত টাইমস ও ফ্রি প্রেস জার্নাল এই গুজবটিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে। প্রতিবেদনগুলিতে আরও বলা হয় যে, বিহার পুলিশ নাকি ওই পতাকা নামিয়ে আনে।
ইন্ডিয়া টিভি-র প্রতিবেদনে সংবাদসংস্থা এএনআই-কে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, “পূর্ণিয়া জেলার মধুবনি সিপাহি টোলা এলাকায় একটি বাড়ির ছাদে পাকিস্তানের পতাকা টাঙানো হয়েছিলl এই বিচিত্র ঘটনাটি তখন ঘটে, যখন সারা দেশ ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে তেরঙা ঝান্ডা ওড়াতে মেতেছিল।”
দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট দ্য নিউ ইন্ডিয়ান একই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সিএনএন নিউজ-১৮-এর একটি সংবাদ বুলেটিনে লেখা হয়—‘প্রজাতন্ত্র দিবসের চমক! বিহার থেকে এই চমকপ্রদ খবর এনেছি, যেখানে এ দিন পাকিস্তানের পতাকা তোলা হয়!’
নিউ ইন্ডিয়ান প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি ভিডিও প্রকাশ করে। পুলিশকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের তোলা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ছাদ থেকে নামিয়ে আনতে দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয় ওই রিপোর্টে।
সাংবাদিক অনুপম ত্রিবেদী নিউজ-১৮ প্রকাশিত একটি ভিডিও টুইট করে তার ক্যাপশনে লেখেন, “দেশ যখন প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করছে, বিহার পুলিশ তখন পূর্ণিয়া জেলায় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নামাচ্ছে!”
অপ ইন্ডিয়া, এবিপি বিহার, টাইমস নাউ নবভারত, নিউজ-১৮ বিহার, মিড ডে.কম ইত্যাদিতে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পড়তে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম সেই ভিডিওগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে, যেখানে পতাকা তোলার দৃশ্যগুলো ধরা রয়েছে। তবে এগুলো পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নয়। পতাকাগুলোর শাদা বর্ডারে এমন নকশা রয়েছে, যা পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় থাকে না।
এর পর আমরা টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই, যাতে বিভিন্ন সংবাদসংস্থার খবর অস্বীকার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পুলিশকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, “স্থানীয় একটি মসজিদের কাছে অবস্থিত মহম্মদ মোবারকউদ্দিনের বাড়ির ছাদে টাঙানো পতাকাটি একটি ধর্মীয় পতাকা। এবং এই ধর্মীয় ধ্বজাটি প্রায় মাসখানেক আগে লাগানো হয়েছিল।”
বুম এ ব্যাপারে মহকুমা পুলিশ অফিসার সুরেন্দ্র কুমার সরোজের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান—“আমরা ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওর ভুয়ো দাবিটি খণ্ডন করেছি, ওই পতাকাটি কোনও দেশের জাতীয় পতাকা নয়।” এসডিপিও সরোজ আরও বলেন, “এটি একটি ইসলমীয় পতাকা এবং পুলিশও তদন্ত করে সেটাই নিশ্চিত করেছে।”
পূর্ণিয়া জেলার জনৈক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।
তা ছাড়া, বুম ভাইরাল হওয়া পতাকাটির ছবি নাগালে পেয়ে সেটির সঙ্গে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার তুলনা করেও দেখেছে, দুটি আদৌ এক নয়। পূর্ণিয়া জেলায় ছাদে টাঙানো পতাকার সঙ্গে পাক জাতীয় পতাকার ছবি পাশাপাশি রেখে তুলনা করলেই উভয়ের ফারাক স্পষ্ট হয়ে যায়।
পরে আমরা ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখি, ওই পতাকাটি এক ইসলামি সংগঠন দাওয়াত-এ-ইসলামীর পতাকা একই ধাঁচের পতাকার ছবি এখানে দেখে নিতে পারেন। আধফালি চাঁদ এবং তারা ইসলাম ধর্মের সব নিশানেই প্রতীক হিসাবে থাকে।