প্যালেস্টিনীয়দের উপর অত্যাচার বলে ছড়াল সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের পুরনো ভিডিও
বুম যাচাই করে দেখে, ভিডিওটি ২০১৩ সালে সিরিয়ায় হওয়া গণহত্যার ঘটনার।



নিরস্ত্র কিছু মানুষের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে তাদের উপর সৈন্যবাহিনীর গুলি চালানোর এক ভয়াবহ ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দাবি করা হয়, ভিডিওতে প্যালেস্টাইনের (Palestine) সাম্প্রতিক করুণ অবস্থার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
বুম দেখে, ২০১৩ সালের এই ভিডিওতে তৎকালীন সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার-আল-আসাদের অনুগত সশস্ত্র বাহিনীর করা গণহত্যার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
ইজরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণে মৃত্যমিছিল অব্যাহত গাজায়। স্বজন হারানোর কান্না, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহের দৃশ্য ছাড়াও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় বারবার উঠে আসছে যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত গাজার শোচনীয় ছবি। বিশ্বের বিভিন্ন নেতাদের পাশাপাশি প্যালেস্টাইনের দৈন্যদশার সেই ছবি পোস্ট করে ইতিমধ্যে অনেকেই যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছেন সমাজমাধ্যমে।
এরই মধ্যে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভাইরাল এই ভিডিও পোস্ট করে তার ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "এই হত্যা দেখার পরেও বিশ্ব মানবতা আজ নীরব! হে আল্লাহ আপনি জালিমদেরকে ধ্বংস করে তাদের হাত থেকে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করুন।"
মর্মান্তিক দৃশ্য থাকার কারণে বুম এই প্রতিবেদনে ভিডিওটি উল্লেখ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম ২০২৩ সালে এই ভিডিও অন্য এক ভুয়ো দাবিতে ভাইরাল হলে সেবিষয়ে এক তথ্য যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। আমরা জানতে পারি, এই ভিডিওতে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের দক্ষিণাঞ্চলের শহরতলির তাদামন এলাকায় আসাদপন্থী সামরিক বাহিনীর করা ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধের দৃশ্য দেখা যায়।
এই গণহত্যা ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল ঘটলেও ২০১৯ সালে গবেষকদের কাছে একাধিক ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ২০২২ সালে অবশেষে তা প্রকাশ্যে আসে।
২০১৩ সালের এপ্রিলে সিরিয়া সামরিক বাহিনীর করা গণহত্যার ভিডিও
ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ঘটনা সম্পর্কিত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে আমরা ২৭ এপ্রিল, ২০২২ তারিখের আমেরিকান ম্যাগাজিন নিউ লাইনস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই, যা ভিডিওটি নিয়ে প্রথম প্রকাশিত রিপোর্ট বলে জানা যায়। নিউ লাইনস জানায়, তারা ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেছে।
ওই প্রতিবেদনের প্রধান ছবিতে ভিডিও শুরুর প্রথম কয়েক সেকেন্ডে দেখতে পাওয়া একই সৈনিককে দেখা যায়, যাকে আমজাদ ইউসুফ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ভিডিওতে উপস্থিত আরেক অভিযুক্ত, যিনি ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিজেকে পরিচয় দেন, তাকে নিউ লাইনসের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে মৃত নাজিব আল-হালাবি ওরফে আবু উইলিয়াম হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গণহত্যার ভিডিওগুলি ২০১৯ সালে লেখক আনসার শাহহুদ ও উগুর উমিত উঙ্গোরের কাছে ফাঁস হয়েছিল, যারা ফুটেজটি তদন্ত করে ২০২২ সালে এটি সম্পর্কে রিপোর্ট করেছিলেন।
"প্রায় সাত মিনিট দৈর্ঘ্যের তিনটি আলাদা ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দুই ব্যক্তি প্রকাশ্য দিবালোকে ৪১ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করছেন। পরে তারা মৃতদেহগুলো গাড়ির টায়ার ভর্তি একটি গর্তে ফেলে পুড়িয়ে দেয়," নিউ লাইনস জানায়।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ভিডিওর দীর্ঘ সংস্করণে দেখা যায়, সৈন্যরা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য তৈরি গর্তে আগে থেকেই রাখা টায়ার ব্যবহার করে নিহতদের দেহে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।
২৭শে এপ্রিল, ২০২২ তারিখে প্রকাশিত গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনেও আমরা এই ভিডিওর কিছু অংশ দেখতে পাই। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সেই সংঘাত তৎকালীন সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ এবং বৃহত্তর আরব বসন্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুরু হয়।