ইরাকের এক পথনাটিকার ভিডিওকে আইএসআইএস এর যৌনদাসী নিলাম বলে ছড়ানো হচ্ছে
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি ইরাকের একটি পথনাটিকার দৃশ্য, তার সঙ্গে আইএসআইএস কিংবা যৌনদাসী নিলামের কোনও সম্পর্কই নেই।
ইরাকের (Iraq) একটি পথনাটিকার (Street Play) দৃশ্য অনলাইনে শেয়ার করে ভুয়ো দাবি ছড়ানো হয়েছে যে, তাতে নাকি ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী (ISIS) আইএসএস-এর নিলামে যৌনদাসী (sex slave) কেনাবেচার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে এই ভিডিওটি ইরাকের ইরবিল (Erbil) অঞ্চলে তোলা একটি পথনাটিকার দৃশ্য, যার লক্ষ্য হলো নাগরিকদের সামাজিক (awareness video) সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি লোক কয়েকজন বোরখা পরা মহিলার দিকে এগিয়ে আসছে, তারপর তাদের নিকাব বা মুখের ঢাকনা সরিয়ে ভালো করে মহিলাদের পরখ করার পর আবার ঢাকনা ফেলে দিচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই মহিলাদের দাসী বানানো হচ্ছে এবং একমাত্র যে তাদের মালিক সে-ই তাদের মুখ দেখার অধিকারী। একটি টুইটে ভিডিওটি রেখে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে—“এই হলো একবিংশ শতাব্দীতে চালু যৌন দাসত্বের বাজার! উদারনৈতিক ও নরমপন্থী মুসলিমরা যদি নিজেদের সব শ্রম ও উদ্যম ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর প্রতিবাদে ব্যয় না করে এই ক্রীতদাস-বাজারের বর্বরতা দূর করতে ব্যয় করতো, তাহলে নিশ্চয় এত দিনে তা দূর হতো। কিন্তু তারা সে সব না করে বলে যাচ্ছে, আইসিস ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না!”
বুম এর আগেও অন্য একটি এই ধরনের ভিডিওর পর্দাফাঁস করেছিল, যা যৌন-দাসত্বের বিরুদ্ধে জনচেতনা বাড়াতে বানানো হয়েছিল। সেই ভিডিওটাও বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী সংবাদ-চ্যানেল শেয়ার করে ভুয়ো বার্তা দেবার চেষ্টা করে, আমরা সেটি তথ্য-যাচাই করেছিলাম।
টুইটটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বিতর্কিত হিন্দি চলচ্চিত্র ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মুক্তির পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রেক্ষাপটেই এই টুইট ভাইরাল হয়েছে। ওই চলচ্চিত্রে কেরালার মহিলাদের অপহরণ করে আইএসআইএস তাদের আফগানিস্তান ও সিরিয়ার দাস-বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে দেখানো হয়েছে, এমনই দাবি। এই প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রটির নির্মাতাদের দাবি জানতে হলে পড়ুন এখানে।
টুইটটি দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফেসবুকেও একই দাবিতে ছবিটি ছড়িয়েছে।
ফেসবুক রিলটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি ইরাকের এরবিল-এ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত একটি পথ নাটিকার দৃশ্য, যার নাম—“এজিদখান দেবদূতদের অশ্রুত কান্না”।
গুগলে ভিডিওর দৃশ্যে রিভার্স সার্চ করে আমরা টিকটক-এ একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখি জায়ার-এল-বারজানির দ্বারা। ৭ মে আপলোড হওয়া পোস্টটির ক্যাপশন ছিল—এরিয়ান রফিক আর্ট পারফরমেন্স দ্বারা প্রযোজিত “এজিদ খান দেবদূতদের অশ্রুত কান্না, ২০২৩”। ভিডিওটির প্রথম ২২ সেকেন্ড আমাদের ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
পোস্টটি দেখুন এখানে।
এই ক্যাপশনের সূত্র ধরেই আমরা পথ-নাটিকাটির অনুষ্ঠান সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে সচেষ্ট হই এবং নাটকের পরিচালক আরিয়ান রফিক-এর ফেসবুক প্রোফাইলও ঘাঁটাঘাঁটি করি, যিনি ৮ মার্চ নাটকটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পোস্টটিতে নাটক কোথায় (এরবিল সিটাডেল) অনুষ্ঠিত হবে এবং কখন (৮ মার্চ, বিকেল ৩টেয়), সে সবও উল্লেখ করা ছিল।
এরিয়ান রফিক নিয়মিত ইরাকি ও ইরানি মহিলাদের উপর সংঘটিত নির্যাতন ও অনাচারের প্রতিবাদে রচিত শিল্পকলা ও অনুষ্ঠান সংগঠিত করেন। আমরা এরবিল সিটাডেল নামের স্থানটিও শনাক্ত করতে পেরেছি যা ইরাকের কুর্দিস্তানে অবস্থিত।
এই জায়গাটির স্থাপত্যের কাঠামোর সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওয় দেখা স্থাপত্যের হুবহু মিল রয়েছে, নীচের ছবিতে যার পরিচয় মেলে।
আমরা এও লক্ষ করেছি যে, দর্শকদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের মোবাইল ফোনে নাটকের দৃশ্য রেকর্ড করছেন।
বুম ফেসবুক মারফত এরিয়ান রফিকের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলেই এই প্রতিবেদনটি সংরক্ষণ করা হবে।
এরিয়ান জানিয়েছেন, ভিডিওটি তাঁর পরিচালিত নাটকেরই। তিনি নিজে ইরাকের কুর্দ জনজাতির মানুষ। তাঁর বক্তব্য—“ইয়াজিদি কন্যাদের বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল এবং আইসিস-এর পুরুষ যোদ্ধারা নিকাব বা পর্দা তুলে-তুলে দেখে নিত মেয়েগুলো সুন্দরী কিনা।”