কপিল মিশ্রের মিথ্যে দাবি বেসরকরি স্কুলের ছবি রয়েছে আপের দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে
বুম নিশ্চিত হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ ব্যবহৃত ছবিতে দিল্লির কাক্রোলা সর্বোদয় স্কুলের নবম শ্রেণীর পড়ুয়াদের দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির ( Bharatiya Janata Party) নেতা কপিল মিশ্র (Kapil Mishra) শুক্রবার মিথ্যে দাবি করেন। তিনি বলেন, দিল্লি (Delhi) সরকার পরিচালিত স্কুলগুলির রূপান্তর ঘটানোর ক্ষেত্রে আম আদমি পার্টি ( Aam Aadmi Party) যে চেষ্টা চালিয়েছে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (New York Times) সেই সম্পর্কিত প্রতিবেদনে রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের ছবি ব্যবহার করেছে।
দিল্লির মাদার মেরিজ স্কুলের পড়ুয়াদের ছবি শেয়ার করে মিশ্র দাবি করেন যে, এনওয়াইটি-র লেখায় যে ছবিটি রয়েছে, সেটি একটি বেসরকারি স্কুলের ছবি। সেটি আপ সরকার পরিচালিত সর্বোদয় বিদ্যালয়ের ছবি নয়।
বুম নিজস্ব উপায়ে যাচাই করে দেখে যে, এনওয়াইটি-র প্রকাশিত ছবিগুলি নতুন দিল্লির কাক্রোলার সেক্টর ১৬বি-তে অবস্থিত সর্বোদয় বিদ্যালয়েই তোলা হয়।
মিশ্র দুটি ছবি টুইট করেন। একটি ছিল এনওয়াইটি-তে প্রকাশিত সর্বোদয় বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমের ছবি। এবং অন্যটি, দিল্লির মাদার মেরিজ বেসরকারি স্কুলের ছবি। উনি দাবি করেন যে, দুটি ছবিতেই পড়ুয়াদের একই ইউনিফর্ম পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
লেখাটি ১৬ অগস্ট ২০২২, এনওয়াইটি অনলাইনে এবং ১৮ অগস্ট ২০২২, তাদের আন্তর্জাতিক সংস্করণের প্রথম পাতায় প্রকাশ করে। ভারতের রাজধানীতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে খোলনলচে বদলে দেওয়ার জন্য আম আদমি পার্টির প্রশংসা করা হয় ওই লেখায়। এবং ২০১৫ থেকে সরকার পরিচালিত স্কুলগুলির আমুল পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আপ নেতা মনীশ সিসোদিয়ার অবদানের উল্লেখ করে। এনওয়াইটি-র প্রতি কৃতজ্ঞতা শিকার করে ওই একই লেখা খালিজ টাইমস-এও প্রকাশ করা হয়।
আরও একটি দাবি ভাইরাল হয়। তাতে বলা হয়, এনওয়াইটি-র প্রতিবেদনটি একটি পেড বা টাকার বিনিময়ে প্রকাশিত নিবন্ধ। কিন্তু বুম দেখে, এই দাবিটিও মিথ্যে। আমাদের তথ্য যাচাই নীচে পড়ুন।
আরও পড়ুন: দিল্লির সরকারি স্কুল নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন কি বিজ্ঞাপণ?
মিশ্র দুটি ছবির একটি কোলাজ টুইট করেন। সেটির বাঁ দিকে ছিল এনওয়াইটি-র প্রতিবেদনের একটি স্ক্রিনশট ও ডান দিকে ছিল মাদার মেরি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রীদের ছবি। তাঁর হিন্দিতে লেখা টুইটে মিশ্র দাবি করেন যে, এনওয়াইটি-র লেখাটি অর্থের বিনিময়ে ছাপা একটি প্রচারধর্মী প্রতিবেদন। এবং তা সত্ত্বেও একটি বেসরকারি স্কুলকে সরকার পরিচালিত স্কুল বলে চালানো হয়েছে। অনুবাদ করলে সেটি দাঁড়ায় এই রকম: "টাকা দিয়ে খবরটি এনওয়াইটি ও খালিজ টাইমস-এ প্রকাশ করানো হয়। তা সত্ত্বেও মিথ্যে বলা ও চুরি করার অভ্যাসটা গেল না। এই ছবিগুলি দিল্লির সরকারি স্কুলের নয়। ময়ূর বিহারে, মাদার মেরি স্কুলের বাচ্চাদের ছবি সেগুলি। কেজরিওয়াল ও সিসোদিয়া দেশে ও বিদেশে মিথ্যের কারবার চালাচ্ছেন।
(হিন্দিতে মূল টুইট: न्यू यॉर्क टाइम्स और ख़लीज़ टाइम्स में पैसे देकर ख़बर तो छपवा ली , पर झूठ और चोरी की आदत नहीं गयी. ये फ़ोटो दिल्ली के सरकारी स्कूल की नहीं बल्कि मयूर विहार के मदर मैरी स्कूल के बच्चों की हैं. केजरीवाल और सिसोदिया देश में भी झूठ बेच रहे हैं और विदेश में भी)
দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
একাধিক কংগ্রেস ও বিজেপি নেতা মিথ্যে দাবি করেন যে, এনওয়াইটি-র প্রতিবেদনের যে ছবিটি আপ নেতারা ও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল শেয়ার করেছেন সেগুলি ভুয়ো এবং ফোটোশপে তৈরি।
একই মিথ্যে দাবি সমেত, ওই ছবির সেটটি ফেসবুকেও ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালের ছবি সংবাদমাধ্যম ছড়াল কাবুলে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ যে ছবি ছাপা হয়েছে, সেটি মাদার মেরিজ স্কুলের ছবি – এই দাবি মিথ্যে।
দিল্লির কাক্রোলায় সর্বোদয় বিদ্যালয় ঘুরে দেখে বুম। এবং স্বাধীন ভাবে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছই যে, এনওয়াইটি-তে ক্লাসরুমের যে ছবিটি ছাপা হয়েছে, সেটি একটি সরকার-চালিত স্কুলেরই ছবি।
পূর্ব দিল্লির ময়ূর বিহারে মাদার মেরিজ স্কুলের ওয়েবসাইট খুলে আমরা দেখি তাতে বলা হয়েছে, সেটি একটি মেয়েদের স্কুল।
এনওয়াইটি-তে প্রকাশিত সর্বোদয় বিদ্যালয়ের ছবিতে কিন্তু ছেলে ও মেয়ে উভয় ধরনের পড়ুয়াদেরই ক্লাসে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। শুধুই মেয়েদের স্কুল হলে, তেমনটা হওয়া সম্ভব হত না।
এর থেকে বোঝা যায় যে, কপিল মিশ্র যে ছবিগুলি প্রকাশ করেন সেগুলি একই স্কুলের নয়।
তাছাড়া দুটি ছবির ছাত্রীদের ইউনিফর্ম ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, সেগুলির কলারের রঙ এক নয়।
এছাড়া, প্রথম ছবিটি, যেটি এনওয়াইটি-তে ছাপা হয়, সেটিতে ইউনিফর্মের গায় 'সর্বোদয়' লোগোটি লাগানো আছে। তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যে, সেটি মাদার মেরিজ স্কুলের ছবি নয়, যেমনটি দাবি করা হয়েছে।
এনওয়াইটি-র লেখাটিতে, ক্লাসের ছবিগুলি চিত্রসাংবাদিক সৌম্য খান্ডেলওয়াল-এর তোলা বলে জানানো হয়। এবং ক্যাপশনে সুস্পষ্ট ভাবে লেখা হয়, ছবিগুলি সর্বোদয় বিদ্যালয়ের। ফোটো ক্যাপশনটি এই রকম: "নতুন দিল্লির সর্বোদয় বিদ্যালয়ের একটি ক্লাসরুম। দিল্লির শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, সরকারি স্কুলগুলিকে আরও সফল ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।"
এনওয়াইটি-র ছবি সর্বোদয় বিদ্যালয়ে তোলা: দিলীপ যাদব, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য কাক্রোলার সেক্টর-১৬য় সর্বোদয় বিদ্যালয়টি বুম পরিদর্শন করে। এবং স্বাধীন ভাবে নিশ্চিত হয় যে, এনওয়াইটি-তে ছাপা ছবিটি ওই স্কুলেরই ছবি।
দিলীপ সিংহ আপ-এর মতিয়ালা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক গুলাব সিংহ যাদবের প্রতিনিধিত্ব করেন স্কুল কমিটিতে। তিনি বুমকে নিশ্চিত করে বলেন যে, এনওয়াইটি-তে প্রকাশিত ছবিগুলি কাক্রোলার সর্বোদয় বিদ্যালয়েই তোলা হয়। তাছাড়া, ভাইরাল ছবিটিতে যে ছাত্রছাত্রীদের দেখা যাচ্ছে, সিংহ তাদের শনাক্তও করেন।
যাদব বুমকে বলেন, যখন এনওয়াইটি-র সাংবাদিকরা তাঁদের প্রতিবেদন লেখার জন্য স্কুলে আসেন, প্রকাশিত ছবিগুলি তখন স্কুলেই তোলা হয়। "এনওয়াইটি-র ছবিতে যে ইউনিফর্ম দেখা যাচ্ছে, সর্বোদয় বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ওই ইউনিফর্মই পরে। ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে, তারা স্কুলের ৯-এ ক্লাসে পড়ে," বলেন যাদব।
এনওয়াইটি-র ছবিতে যে পড়ুয়াদের দেখা যাচ্ছে, যাদব তাদের মধ্যে তিন জনকে শনাক্ত করেন। সুরক্ষার স্বার্থে, বুম ওই অপ্রাপ্তবস্কদের নাম প্রকাশ করছে না।
বাইরে থেকে সর্বোদয় বিদ্যালয়: ছবি রঞ্জয় কুমার
এ ছাড়াও, শিক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে দেওয়া স্কুলের তথ্যগুলি যাদব বুমকে দেখান। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি একটি সরকারি স্কুল হিসেবে নথিভুক্ত করা আছে। তার সঙ্গে রয়েছে একটি কোড নম্বরও। যাদব ওই তথ্যগুলির প্রিন্টআউটও আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
নথিটিতে দেখা যায়, স্কুলটির কোড নম্বর হল ১৬১৮০০৯। দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে ওই নম্বরটিই রয়েছে।
আরও পড়ুন: অলৌকিক দৃশ্য ভুয়ো দাবিতে ছড়াল পুরনো সম্পাদিত অ্যানিমেশন ভিডিও