দুই নারীর সঙ্গে গরম জলের বাথটবে পোপ ফ্রান্সিসের ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি
বুম যাচাই করে দেখে পোপ ফ্রান্সিসের ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে ছবি তৈরির ওয়েবসাইটে নির্মিত।
দুই মহিলার সঙ্গে একই বাথটবে পোপ ফ্রান্সিস-এর (Pope Francis) ভাইরাল হওয়া ছবিটি ভুয়ো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের (AI Generated) কৌশল দিয়ে সেটি অনলাইনে তৈরি করা হয়েছে।
ছবিটি দেখিয়ে দিচ্ছে সহজে ব্যবহার যোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে অতিবাস্তবিক ছবি ও ভিডিও তৈরি করা সম্ভব এবং সেগুলির সাহায্যে কী ভাবে বিশ্বজুড়ে মিথ্যে তথ্যকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যায় আর তার ফলে, উদ্বেগ বাড়ছে।
এবছরের মার্চ মাসে , ‘পাফার’ জ্যাকেট-পরা রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধানের একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। অনেকেই মনে করেছিলেন ছবিটি আসল। কিন্তু সেটিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে তৈরি ওয়েবসাইট ‘মিডজার্নি’র সাহায্যে তৈরি করা হয়েছিল।
সাম্প্রতিকতম ছবিতে দেখানো হয়েছে, একটি গরম জল ভর্তি বাথটবে পোপ ফ্রান্সিস দুজন মহিলাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন।
হিন্দু দক্ষিণপন্থী ব্যবহারকারীরা বিদ্রুপাত্মক ক্যাপশন সহ ছবিটি টুইটার ও ফেসবুকে শেয়ার করছেন।
টুইটটি দেখুন এখানে।
একই মিথ্যে দাবি সমেত ছবিটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম এটা নির্ধারণ করতে পারে যে, ভাইরাল ছবিটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি। পোপ ফ্রান্সিস-এর আসল ছবি নয় সেটি।
ছবিটিতে অনেকগুলি অসঙ্গতি আমাদের নজরে আসে। যেগুলি ইঙ্গিত করে যে, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
বাঁ দিকের মহিলার হাত ও আঙ্গুল মানুষের হাত ও আঙ্গুলের মতো দেখতে নয়। এবং তা স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তৈরি একটি ছবি। একাধিক গবেষক ও সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনও ছবিতে মানুষের হাত ও আঙ্গুল সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে না।
একটি ছবি আসল কিনা তা যাচাই করার সময় আমরা অনেক সময় রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তা থেকে জানা যায় যে, ছবিটি আগে অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা। এবং কী পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়েছিল সেটি। তাছাড়া আমরা অন্যান্য ছবি, ভিডিও, সংবাদ প্রতিবেদন ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে জানার চেষ্টা করি কোনও একটি ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল কিনা।
কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি ছবির ক্ষেত্রে আমাদের যাচাই করতে হয় এমনই সব ঘটনা যেগুলি বাস্তবে ঘটেনি। ফলে, আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত একটি সরঞ্জাম ব্যবহার করে দেখে নিই কী ভাবে ভুয়ো ছবি তৈরি করা যায়।
আমরা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা পরিচালিত ওয়েবসাইট মিডজার্নি ব্যবহার করি। সেটিকে লিখিত নির্দেশ দিলে, সেটি অতিবাস্তবিক ছবি তৈরি করে দেয়।
আমরা ওই সরঞ্জামটিতে ভাইরাল ছবিটির বিবরণ দিই। তাছাড়া সরঞ্জামটির সুবিধের জন্য আমরা সেটিকে লিখে জানাই: “জল ভর্তি একটি জাকুজিতে (বড় বাথটবে) বসে আছেন পোপ ফ্রান্সিস। সঙ্গে রয়েছেন বিকিনি-পরা দু’ জন ককেশান মহিলা। একজন রয়েছেন হাসিমুখের পোপ ফ্রান্সিস-এর বাঁ দিকে আর ডান দিকের মহিলা পোপ ফ্রান্সিস-এর দিকে তাকিয়ে আছেন।”
মিডজার্নি’র তৈরি করা নীচের ছবিটি ভাইরাল ছবিটির সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।
ভাইরাল ছবিটির সঙ্গে এটির মিলের জায়গাগুলি সহজেই চোখে পড়ে। যেমন পোপ ফ্রান্সিস-এর পোশাক ও বাঁ দিকের মহিলার মুখের মিল রয়েছে। এবং তাঁদের বসার ভঙ্গিও একই রকম। তাছাড়া দু’টি ছবির গভীরতাতেও মিল রয়েছে।
দু’টি ছবিতে যে চারজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে বাস্তবে তাঁদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাঁরা সম্পূর্ণ ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টি। ওই সরঞ্জামটিতে বহু মহিলার চেহারার বিবরণ ভরে দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই সরঞ্জামটি ওই মহিলাদের ছবি তৈরি করেছে।
ভাইরাল ফটো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মিডজার্নির তৈরি ছবির মধ্যে সাদৃশ্য দেখিয়ে দিচ্ছে, ভাইরাল ছবিটিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়।