বিহারে বরের যৌতুক চাওয়ার ভাইরাল ভিডিওটি সাজানো
বুম যাচাই করে দেখে বিহারে পণ চাওয়ার ভিডিওটি কোনও সত্য ঘটনা নয়—সাজানো চিত্রনাট্যের দৃশ্য।
বরের পণের (Dowry) দাবি কন্যাপক্ষ না মেটালে সে কনেকে বিয়ে করবে না এমন একটি দৃশ্যের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং অনেক সংবাদ-প্রতিবেদনেও এটা একটা সত্য ঘটনা বলে বিবৃত করা হয়েছে যা আসলে একটি সাজানো নাট্যরূপ।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, বর-কনের সাজে সজ্জিত এক যুগল একটি মঞ্চের ওপর বসে রয়েছে এবং ছবিতে দেখা যাচ্ছে না, এমন চিত্রগ্রাহকের সঙ্গে কথা বলছে।
বরবেশী যুবকটি বলছে যে, সে একজন সরকারি চাকুরে এবং তার বাবাও একজন শিক্ষক ছিলেন, তাই তার পণ চাওয়ার দাবি ন্যায়সঙ্গত। চিত্রগ্রাহককে তখন বলতে শোনা যাচ্ছে, যদি শিক্ষিত লোকেরা এমন অদ্ভূত দাবি করে, তাহলে যারা লেখাপড়া শেখেনি, সেই মানুষরা কেমন করে এ ধরনের কুপ্রথা থেকে বেরিয়ে আসবে!
মঙ্গলবার এই ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং নেটিজেনরা তা দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেন।
ভিডিওটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ডিএনএ, জি-নিউজ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং লোকমত সংবাদমাধ্যমও শেয়ার করেছে।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: না, এটি ইউক্রেনে পাঠ্যরত পাকিস্তানি পড়ুয়াদের দেশে ফেরার ছবি নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি একটা সাজিয়ে তোলা চিত্রনাট্য এবং 'দিব্য বিক্রম' নামের এক ফেসবুক পেজ এটা বানিয়েছে।
ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 'দিব্য বিক্রম' এটি ফেসবুকে আপলোড করে। তার আগে 'বিক্রম মিশ্র' নামের জনৈক ফেসবুক পেজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটি পোস্ট করেছিল।
'দিব্য বিক্রম' পেজ-এর পোস্টটিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, "বিহারে একজন শিক্ষকের ছেলে মঞ্চের ওপর বসেই পণ দাবি করে গোলমাল সৃষ্টি করে এবং পণ না পেলে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।"
আমরা অবশ্য দেখেছি, 'দিব্য বিক্রম' পেজটি এই ধরনের আরও কিছু বানানো ভিডিও পোস্ট করেছে।
উপরন্তু এই পেজটি নিজেকে ভিডিও-নির্মাতা বলেও দাবি করে এবং একই নারী-পুরুষ যুগলকে দিয়ে আরও অনেক ভিডিও পোস্ট করেছে। যেমন ৮ মার্চ পোস্ট করা একটি ভিডিওতেও এই দুজনকে নিয়েই তৈরি আরও একটি ভিডিও এই পেজ আপলোড করেছে যাতে বরকে মাতাল অবস্থায় দেখা যাচ্ছে এবং কনে মাতাল বলে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছে।
ভিডিওটি নীচে দেখুন।
অন্য একটি ভিডিওতে আবার এই একই যুগলকে পরস্পরকে মালা-বদল করে বিয়ে করতেও দেখা যাচ্ছে।
ফেসবুক-এর এই দুটি পেজেরই পরিচালক বিক্রম মিশ্রের সঙ্গে বুম যোগাযোগ করেছে। তিনি বুম-এর কাছে স্বীকার করেছেন যে, তিনি এই ধরনের ভিডিও বানিয়ে সেগুলো আপলোড করে থাকেন।
তিনি জানান, "আমিই বিক্রম মিশ্র ও দিব্য বিক্রম নামের এই পেজদুটি চালাই। সেই পেজ থেকেই আমি দুই অভিনেতাকে দিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটি বানাই এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি সেটি 'বিদ্যা বিক্রম' পেজে আপলোড করি।"
"এটা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে এই বার্তা দেওয়া যে, এমনকী শিক্ষিত লোকেরাও পণের মতো এমন কুপ্রথা অনুশীলন করে থাকে। যে-সব সংবাদমাধ্যম এই ভিডিওগুলো বাস্তব ও সত্য ঘটনার প্রতিফলন বলে প্রচার করেছে, তাদের উচিত ছিল আগে ভিডিওগুলি যাচাই করে নেওয়া।"
আরও পড়ুন: গ্লোবাল টাইমসের ভুয়ো দাবি রাশিয়া সমর্থনে আলোয় সাজলো ভারতের কুতুব মিনার