ভিডিও গেমের দৃশ্যকে বলা হল ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কেরামতি
বুম দেখে ভিডিও ক্লিপের বেশির ভাগ দৃশ্য একটি জনপ্রিয় ভিডিও গেম এআরএমএ-৩ (আর্মা-৩) এর সম্পাদিত অংশ থেকে নেওয়া।
সামরিক ভিডিও গেম (Video Game)-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি এক গুচ্ছ ভিডিও শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, এগুলি তুরস্ক (Turkey), জর্ডন (Jordan) ও লেবাননের (Lebanon) ফাইটার বিমান (Fighter Jet) হানা ধবংস করতে তৈরি ইজরায়েলের অন্তরীক্ষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (Israeli Air Defence System) দৃশ্য। তবে এই ভিডিওতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটা সত্যিকারের প্রত্যাঘাতের দৃশ্যও, যাতে রকেট, কামান ও মর্টার থেকে পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে।
৫ মিনিটের এই ভিডিও ক্লিপটির অধিকাংশটাই একটি জনপ্রিয় ভিডিও গেম-এর অংশ, যার নাম আর্মা-৩ (এআরএমএ-৩)। স্যান্ডবক্স গেম নামের এই যুদ্ধের খেলাটি বাজারে ছাড়ে বোহেমিয়া ইন্টারঅ্যাক্টিভ, যাতে ২০০৯ সালের একটা সত্যিকারের পাল্টা আক্রমণের ফুটেজও সংযোজন করে দেওয়া হয়, যাতে ফুটেজটি সাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।
এই ফুটেজটি ইজরায়েল বনাম প্যালেস্টিনীয়দের চলতি সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। সংঘর্ষের সূত্রপাত পূর্ব জেরুজালেমে ইসলামের পবিত্র তীর্থ আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্যালেস্টিনীয়দের উপর ইজরায়েলিদের আক্রমণকে কেন্দ্র করে। ১১ মে থেকে সংঘর্ষ তীব্রতর আকার ধারণ করে, যখন ইজরায়েলি বিমান গাজা-য় প্যালেস্টিনীয়দের ঘাঁটির উপর মুহুর্মুহু বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো শুরু করে। জবাবে গাজায় ঘাঁটি গেড়ে থাকা প্যালেস্টিনীয় জঙ্গিরাও সমানে তেল আভিব ও অ্যাস্কেলন শহরে এবং ইজরায়েলের প্রধান বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হানতে থাকে, খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর।
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, আল-হামাসের রকেট হানা ঠেকাতে ইজরায়েলি বা আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে যদিও ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডনের এক গাদা হানাদার বিমানকে গুলি করে নামায় । আর তাতেই পরিলক্ষিত হয় সর্বাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, যা লেসার প্রযুক্তির সাহায্যে বিমানগুলিকে ভূপতিত করে"।
ফেসবুকেও ভাইরাল
একই ক্যাপশন ব্যবহার করে আমরা দেখি, ফেসবুকেও ফুটেজটি একই ভুয়ো দাবি সহ ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলি বাহিনীর আল আকসা মসজিদ দখল দাবিতে ইরাকের ভিডিও ভাইরাল
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। তাতে আমরা দেখি, এই একই ক্লিপগুলি ইউ-টিউবেও আপলোড করা রয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে এগুলি আর্মা-৩ সামরিক ভিডিও গেম-এর বানিয়ে নেওয়া অংশ।
আর্মা-৩ ভিডিও গেম-এর এই অংশগুলি আমরা খুঁজেও পাই।
আমরা এও দেখতে পাই য়ে, শত্রুপক্ষের বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামাতে সি-রাম অর্থাৎ পাল্টা রকেট, কামান ও মর্টার হামলার (Counter rocket, artillery and mortar) প্রযুক্তিও সিমুলেশনে ব্যবহৃত হয়েছে।
আমরা এ বিষয়েও নিশ্চিত হতে পারি যে, এই দৃশ্যটি যারা গেমটি খেলছে, তাদের মধ্যেই কেউ একজন নিজের মতো করে পরিবর্তন, পরিমার্জন করে নিয়েছে, যদিও সেই অংশটুকু মূল গেমটিতে ছিল না।
মূল গেমটিতে কালের প্রেক্ষাপট ২০৩০ সাল, যাতে অংশগ্রহণকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরাল বেন কেরি নামক কাল্পনিক চরিত্রের হাত ধরে রকমারি সামরিক বিকল্পের যে-কোনও একটি অবলম্বন করতে পারে। বুম ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এই একই গেম থেকে আহরণ করা অন্য একটি ভাইরাল ক্লিপকে নস্যাৎ করেছিল, যাতে মিথ্যা দাবি করা হয়েছিল যে, এগুলি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার মার্কিন প্রতিরক্ষা বন্দোবস্ত।
আমরা এও দেখি যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর শেষদিকে একটি দৃশ্য রয়েছে, যাতে জবাবি ক্ষেপণাস্ত্র, কামান ও মর্টার হামলার (C-RAM) ২০০৯ সালের একটি দৃশ্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেটি ইউ-টিউবে আপলোড করা হয়েছিল ইরাক যুদ্ধের ঘটনা বলে।
ভিডিওটির শেষ দিকে জুড়ে দেওয়া অংশের ঘটনাবলীর সত্যতা বুম নিজে থেকে যাচাই করে উঠতে পারেনি, তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে, দৃশ্যগুলি ২০০৯ সালের এবং আদৌ বর্তমানে ঘটমান ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, যেমনটা ভাইরাল ভিডিওয় দাবি করা হচ্ছে।
উপরন্তু বুম এমন কোনও সংবাদ-প্রতিবেদনেরও খোঁজ পায়নি যাতে তুরস্ক, জর্ডন ও লেবানন একযোগে ইজরায়েলের উপর জঙ্গি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়েছে, যা নাকি ভাইরাল ভিডিওর দাবি।
(অতিরিক্ত তথ্য: সুজিত এ)
আরও পড়ুন: ২০২০'র কায়রোর তেলের পাইপলাইনে অগ্নিকাণ্ড ছড়াল ইজরায়েলে বিস্ফোরণ বলে