না, ওনাম পালনের জন্য কেরলে মুসলিম ছাত্রীদের বাড়ি পাঠানো হয়নি
বুমকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও শিক্ষক জানান ভিডিওর ছাত্রীরা স্কুলের পোশাক না পরায় স্কুল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কেরলের কাসাগড় জেলার একটি সরকারি স্কুলের মুসলিম ছাত্রীদের বাড়ি ফেরার পথে হেনস্থা হওয়ার ভিডিও ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার করে হচ্ছে যে ওনাম উৎসবে যোগ দেওয়ার ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ শাস্তিস্বরূপ তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছে।
বুম কাসারগড়ের জেলা-শাসক এবং পালিকেরে সরকারি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক সঙ্গে কথা বলেছে, উভয়েই এই অভিযোগ ভুয়ো দাবি করে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
ওনাম কেরলের বাৎসরিক ফসল তোলার উৎসব, সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পালিত হয়। ২০২২ সালে ওনাম ৩০ অগস্ট শুরু হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর পালন করা হবে, ওনাম কেরলের
৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একদল স্কুল ছাত্রীকে ( অনেকেই হিজাব পরিহিত ) রাস্তার কিছু ভিডিওতে অদৃশ্য পথচারী নারীবিদ্বেষী মন্তব্য মারফত হেনস্থা করছে।
ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "কেরলের কাসারগড়ের জেহাদিরা সরকারি স্কুলের ছাত্রীদের ওনাম উৎসব পালন করা হারাম দাবি করে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।" ভিডিওটিতে লেখা ক্যাপশন অনুবাদ করলে হয়, "ওনাম উৎসব বন্ধ করে দেওয়া হল।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে অবশ্য 'হারাম' কিংবা 'ওনাম' দুটোর একটি শব্দও শোনা যায়নি। কেবল মালয়ালি ভাষায় একটি পুরুষকণ্ঠে চিৎকার করতে শোনা গেছে—"আজ বাদে কাল তোমাদের বিয়ে হবে, তখন কে তোমাদের বিয়ে করতে আসবে, তোমাদের কোনও লজ্জাও নেই, সংকোচও নেই!"
পোস্টটি দেখুন এখানে।
ফেসবুকেও ওই একই ভিডিও মালায়ালি ভাষায় ভুয়ো ক্যাপশন সহ ভাইরাল হয়েছে।
ক্যাপশনের অনুবাদ করলে তা হয়, "কালই এদের বিয়ে হয়ে যাওয়া উচিত!! মেয়েগুলর কোন লজ্জা নেই! ওনাম পালন করতে আসা মুসলিম বাচ্চাদের স্থানীয়রা তাড়িয়ে দেয়! পোস্টারে লেখা ওনাম মুসলিমদের পালন করা হারাম।
আরও পড়ুন: হামজা বেনদেলাজের ফাঁসির ভুয়ো দাবিতে ফের ছড়াল মাজিদ কাভোওসিফারের ছবি
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, কেরালার পালিকেরে সরকারি স্কুল থেকে মুসলিম ছাত্রীদের ওনাম উৎসব পালন করার জন্য বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার খবরটি ভুয়ো। জেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ, উভয়েই জানিয়েছে যে স্কুলের ইউনিফর্ম না পরে আসার জন্যেই তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ভাইরাল ভিডিওটি চালিয়ে শোনার সময় বুম মুসলিম ছাত্রীদের লক্ষ্য করে নারীবিদ্বেষী হেনস্থামূলক মন্তব্য শুনতে পায়, "আজ বাদে কাল তোমাদের বিয়ে হবে, তখন কে তোমাদের বিয়ে করতে আসবে, তোমাদের কোনও লজ্জাও নেই, সংকোচও নেই!" কিন্তু 'ওনাম' কিংবা 'হারাম' — এই শব্দ দুটি উচ্চারিত হতে শোনা যায়নি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় উল্লিখিত স্কুলের নাম অনুসরণ করে আমরা পালিকেরের সরকারি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলের এক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি এই খবরের সত্যতা অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক জানান যে কেবল ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ওনাম উৎসব পালিত হয় এবং সেখানে কেবল একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ইচ্ছামত পোশাক পরার অনুমতি দেওয়া হয়, বাকিদের জন্য কঠোরভাবে স্কুল ইউনিফর্ম পরে আসার নির্দেশ থাকে। কিন্তু নবম ও দশম শ্রেণির কিছু ছাত্রী ইউনিফর্ম না পড়ে আসায় প্রধান শিক্ষক তাদের গেটেই আটকে দেন এবং বাড়িতে থেকে ইউনিফর্ম পড়ে আসতে বলেন।
"ওই ছাত্রীরা যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তখনই স্থানীয় কোনও বাসিন্দা ওই ভাইরাল ভিডিওটি তুলেছে ও ছাত্রীদের অপমান করেছে। বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাত্রীদের মধ্যে কিছু ছাত্রী আবার ইউনিফর্ম পরে স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফিরেও এসেছিল।"
বুম কাসারগড় জেলার কালেক্টর ভাণ্ডারি স্বাগত রনবীরচাঁদ-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করে, এবং তিনিও জানান ওনাম উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য সরকারি স্কুল থেকে ছাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়ার গুজবটি ভুয়ো।
তিনি আরও বলেন, "এটা আসলে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা, না-পরা নিয়ে একটা নিয়মমাফিক বিচ্যুতি, এর সঙ্গে ধর্ম কিংবা সম্প্রদায়ের অথবা ওনামের কোনও সম্পর্কই নেই। জেলার পুলিশ প্রধানও আমাকে জানিয়েছেন খবরটি ভুয়ো।"
৫ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ জেলা শাসকও ফেসবুকে একটি পোস্ট মারফত জানিয়ে দেন যে, মুসলিম ছাত্রীদের ওনাম পালনে অংশ নেওয়ার জন্য স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার খবরটি ভুয়ো।
পোস্টটির লেখা অনুবাদ করলে হয়, "সোশাল মিডিয়ায় প্রচার চলছে যে কাসারগড় জেলার একটি প্রতিষ্ঠানে ওনাম উদযাপন করতে আসা কিছু ছাত্রীদের হেনস্থা ও অসম্মান করা হয়েছে খবরটি মিথ্যা। যারা ভুয়ো এবং ঘৃণাসূচক মনোভাব ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
কাসারগড় পুলিশের তরফে থেকেও এই দাবিটিকে ভুয়ো বলা হয়ছে। পুলিশের তরফ থেকে করা পোস্টটির লেখা অনুবাদ করলে হয়, জেলা পুলিশ সুপার লক্ষ্য করেছেন সমাজ বিরোধীরা সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো প্রচার করে জেলার শান্তিপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক আবহাওয়া নষ্ট করতে চাইছে। সাইবার সেল কড়া নজর রাখছে এই ধরণের লোকের উপর। জেলা পুলিশ সুপারের তরফে সাইবার সেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই ধরনের পোস্টের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে।
আরও পড়ুন: শিকারের এই ছবি তোলার পর চিত্রগ্রাহকের মানসিক অবসাদে যাওয়ার দাবিটি ভুল