ওড়িশার ভিডিও ছড়াল পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনা বলে
ওড়িশার ভদ্রকে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এক স্থানীয় অভিযুক্তের পুলিশের হাতে মৃত্যু হলে উত্তেজিত জনতা পুলিশ ভ্যানে আগুন ধরায়।
অপরাধী সন্দেহে পুলিশের হাতে নিহত এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজিত জনতার একটি পুলিশ ভ্যানকে আক্রমণ এবং এক পুলিশ আধিকারিককে তাড়া করার জানুয়ারি মাসের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) নির্বাচন পরবর্তী হিংসার (poll violence) ছবি।
রাজ্যে সদ্য-সমাপ্ত ভোটের ফলপ্রকাশের পর শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের বিরুদ্ধে বিজেপি ও সিপিআইএম সহ বিরোধী দলগুলি যে হিংসা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে, তার ঘটনার প্রেক্ষিতেই এই ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল করা হয়েছে। ২ এপ্রিল প্রকাশিত ভোটগণনার ফলাফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস দল বিরাট সাফল্য অর্জন করে বিধানসভায় ২১২টি আসন দখল করে নেয়। বুধবার রাজভবনে তৃতীয় বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে— বেশ কয়েকজন লোক একটি পুলিশ ভ্যানের উপর হামলা চালাচ্ছে, একজন পুলিশ অফিসারকে তাড়াও করছে। ক্লিপটি শেয়ার করার সময় তাতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে: "পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলে টিএমসি-র গুণ্ডারা পুলিশ ভ্যানটিতে হামলা চালায় এবং পুলিশ অফিসারকে তাড়া করে ।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি দেখুন এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকেও ভাইরাল
একই ক্যাপশন ব্যবহার করে আমরা খোঁজ চালিয়ে দেখেছি, ভুয়ো পোস্টটি ফেসবুকেও অনেকেই শেয়ার করেছেন।
আরও পড়ুন: 'অক্সিজেন এক্সপ্রেস' ট্রেনের ভিডিও পাকিস্তানের সাহায্য বলে শেয়ার হল
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, ভাইরাল হওয়া পোস্টটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের, এবং এটি ওড়িশার ভদ্রক জেলার ঘটনা। সেখানে এক সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীর মৃতদেহ স্থানীয় একটি পুকুরে ভাসতে দেখে উত্তেজিত জনতা একটি পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে সেটি জ্বালিয়ে দেয়।
আমরা বেশ কয়েকটি জবাবি টুইটে দেখি, ঘটনাটি যে নির্বাচনোত্তর পশ্চিমবঙ্গের নয়, ওড়িশার ভদ্রকের, সে ব্যাপারটা উল্লেখ করা হয়েছে। 'ওড়িশায় পুলিশ আক্রান্ত'—এই মূল শব্দগুলি বসিয়ে অনুসন্ধান করেও আমরা ঘটনার কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদনও পাই।
কলিঙ্গ টিভির একটি প্রতিবেদনে নিহত ব্যক্তিটিকে ভদ্রক জেলার নয়ানন্দ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হাতুয়ারি গ্রামের বাপি মহালিক নামে সনাক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মহালিক তাঁর বোনের বাড়িতে গিয়েছিলেন, যেখানে একটি পুরনো মামলার সূত্রে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যায়। পুলিশকে দেখেই মহালিক ভয় পেয়ে পালাতে শুরু করেন আর পুলিশও তাঁর পিছু ধাওয়া করে। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে প্রকাশ, পালাতে গিয়ে মহালিক কাছাকাছি একটি পুকুরে পড়ে যান এবং তাতেই ডুবে মারা পড়েন। আর এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আলিনগর বাগে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ ভ্যানটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
স্থানীয় সংবাদ-প্রতিবেদনে জানুয়ারি মাসে আপলোড হওয়া ভিডিওতে ঘটনাস্থল এবং সেখানে দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যানটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সঙ্গে সংবাদ-চ্যানেলে আপলোড হওয়া ভিডিওর তুলনা করলে দুইয়ের মধ্যে অনেক সাদৃশ্যই চোখে পড়বে, তাড়া-খাওয়া পুলিশ অফিসার এবং জ্বলন্ত পুলিশ ভ্যান সহ।