ফুচকার জলে হার্পিক মেশানো বলে একটি সাজানো ভিডিও ধর্মীয় দাবিতে ছড়াল
বুম দেখে ভিডিওটি ‘জ্ঞান ভাণ্ডার’ নামের একটি ফেসবুক পেজ, যারা নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে সাজানো চিত্রনাট্যের ভিডিও তৈরি করে।
দুই ব্যক্তি এক ব্যক্তির সম্পর্কে অভিযোগ করছে যে, সে ফুচকা বানানোর জলে শৈচাগার পরিষ্কার করার তরল হার্পিক গুলে দিচ্ছে। এমনই একটি ভিডিও সাম্প্রদায়িক রঙ লাগিয়ে ভাইরাল করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কাপড়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি ফুচকার জলে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গেই হার্পিক মেশাতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ছে। যারা ছবিটা তুলছিল, তারা যখন লোকটিকে চেপে ধরছে, তখন সে নিজের নাম বলছে 'জুবের'।
ভিডিওটিকে ভাইরাল করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "জুবের নামে এক জেহাদি হার্পিক মেশানো জল দিয়ে ফুচকা বিক্রি করছে। যদি আপনারা জেহাদিদের কাছ থেকে কিছু কেনেন, তাহলে আপনাদের প্রাণনাশের বিপদ হতে পারেl"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ফেসবুকেও এই ভাইরাল ভিডিওটি একই ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার হয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন: নাগপুরে দীর্ঘতম ডাবল ডেকার সেতু বিশ্ব রেকর্ড গড়ল? দাবি বিভ্রান্তিকর
তথ্য যাচাই
ভাইরাল ভিডিওটিতে আমরা দেখলাম, একটি দৃশ্য থেকে লাফিয়ে অন্য দৃশ্যে যাকে বলে 'জাম্প-কাট' করা হচ্ছে, যা থেকে মনে হয়, এটি একটি সাজিয়ে তোলা চিত্রনাট্যের ভিডিও রূপ। এর আগেও বুম ভুয়ো দাবি সহ পোস্ট হওয়া এই ধরনের সাজিয়ে তোলা ভিডিওর পর্দাফাঁস করেছে।
নিয়মিত এই ধরনের ভিডিও তৈরি করে বাজারে ছাড়ে, এমন একটি ফেসবুক পেজ-এ পৌঁছে আমরা দেখলাম, ভিডিওটি যে কোনও বাস্তব বা সত্য ঘটনার ছবি নয়, বরং বানানো, সাজানো চিত্রনাট্য, সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই পেজটির নাম 'জ্ঞান ভাণ্ডার', যেটি ৭ জুলাই, ২০২২ তারিখে ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে—'শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা!'
ভিডিওটির সঙ্গেই একটি ব্যাখ্যাও পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে, "দেখানো গোটা ঘটনাটাই পুরোপুরি কাল্পনিক, বাস্তব নয় এবং স্রেফ বিনোদনের জন্যই এই ভিডিওটি বানানো হয়েছে, কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে এটি তৈরি হয়নি। যদি কোনও জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সঙ্গে বা কোনও বাস্তব ঘটনার সঙ্গে এই ভিডিওয় দেখানো দৃশ্যের কোনও মিল থাকে, তবে সেটা বিশুদ্ধ সমাপতন মাত্র।"
অথচ ভিডিওটির ভিতরে কিন্তু কোনও এমন ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যাতে বোঝা যায় যে এটা সাজানো। এবং পোস্টের মন্তব্য অংশটি পড়লে বোঝা যায়, অনেকেই এটিকে সত্যি ঘটনার চিত্রায়ন ভেবে নিয়েছে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
এর বাইরেও আমরা ইউ-টিউবেও এই ভিডিওটির দেখা পেয়েছি, যেখানেও এটি বানানো নাটক বলে কিছু বলা নেইl তাতেও একই জায়গার ছবি রয়েছে, গল্পটাও একই রকম, তবে এখানে অন্যরকম কাপড়ে মুখ ঢেকে অন্য একটি ব্যক্তির আগমন ঘটেছে এবং তাদের সংলাপও অন্যটির চেয়ে আলাদা।
সামাজিক বার্তা নামের ওই চ্যানেলটি ইউ-টিউবে পোস্ট করা হয় ১২ জুলাই, ২০২২। এই পোস্টেও কোথাও বলা নেই যে এটি একটি সাজানো ঘটনার দৃশ্যচিত্র, বাস্তব নয়, এবং কেউ যদি চ্যানেলটি কাটাছেড়া না করেন, তবে ধরতেও পারবেন না যে এটি তৈরি করা সাজানো ভিডিও, সত্য ঘটনা নয়।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: ভিন্ন ভিডিও ছড়াল মুম্বইয়ের বান্দ্রায় মহিলাদের সমুদ্রে ভেসে যাওয়া বলে