ভুয়ো দাবি: ৮ বছরের মেয়ের সাথে ২৮ বছরের ছেলের বিয়ে হল বিহারের নওদাতে
বুম বিহারের নওদা জেলার জেলাশাসক যশপাল মীনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন, "এটা সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর"।
কপালে ধ্যাবড়ানো সিঁদুর ও লাল পোশাকে নববধূর বেশে থাকা গাড়িতে বসে থাকা বিহারের (Bihar) নওদার (Nawada) এক প্রাপ্তবয়স্ক যুবতীর ছবি সোশাল মিডিয়ায় বাল্যবিবাহের (child marriage) মিথ্যে দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে, ভাইরাল ছবিটি ৮ বছরের এক নাবালিকার (minor) এবং ওই নাবালিকার সঙ্গে ২৮ বছরের এক যুবকের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুম বিহারের নওদার জেলাশাসক যশপাল মীনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন, "এটা সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর"।
পরিসংখ্যান সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট ইন্ডিয়া স্পেন্ডের ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে ভারতে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ নাবালক-নাবালিকার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বহু কমবয়সী তরুণীদের বলপূর্বক বিবাহ ও অনিশ্চিত কাজের জগতে ঠেলে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষিতেই অনেকে ভাইরাল ছবিকে সত্য ঘটনা বলে ভুল করছেন।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে কপালে ধ্যাবড়ানো সিঁদুর ও টুকটুকে লাল নববধূর বেশে এক তরুণী বসে রয়েছেন গাড়ির ভেতর। ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "এটা কোন ভারত ৮ বছরের মেয়ের সঙ্গে ২৮ বছরের ছেলের বিয়ে হলো বিহারের নবাদায় (নওদা) এটাই কি এনডিএ জোটের 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া'?"
ফেসবুক পোস্টটিকে দেখতে পাওয়া যাবে এখানে। এরকম একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভাইরাল তামিলনাড়ুর মহিলা দাহ-কর্মী পি জয়ন্তীর ছবি
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবির ওই যুবতীর বাল্যবিবাহ হয়নি, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক।
ছবিটিকে রিভার্স সার্চ করে বুম ২৮ মে, ২০২১ প্রকাশিত নিউজ-১৮ হিন্দির একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বিহারের নওদার (Nawada) ওই তরুণীর নাম তনু কুমারী। তনু কুমারীর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ২০০২। তনু জানান, তাঁর মামী প্রথমে তাঁকে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বাল্যবিবাহের ভুয়ো দাবি সম্পর্কে অবহিত করেন।
নিউজ ১৮ বিহার একই দিনে একটি ভিডিও টুইট করে। ওই ভিডিতে তনুকে বলতে শোনা যায় সাল সহ তাঁর জন্ম তারিখ। বর ও কন্যাপক্ষ উভয়ের পারিবারিক সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে বলে ওই ভিডিওতে জানান তনু।
বিহারের স্থানীয় ওয়েব পোর্টাল বিহার সুপার ফাস্ট খবর-এর প্রতিবেদনে তনু কুমারীর আধার কার্ডের ছবি প্রকাশ করা হয়।
নওদা জেলাশাসকের কার্যালয়ের টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও এবিষয়ে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়, দাবিটি ভিত্তিহীন। জেলাপ্রশাসন বিষয়টি যাচাই করে দেখেছে বলে জানানো হয় ওই টুইটে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন
পরাধীন ভারতে বাল্যবিবাহ রুখতে সর্বপ্রথম আইন পাশ করা হয় ১৯২৯ সালে। ২০০৬ সালে নতুন করে এই আইন সংশোধন করে অন্যান্য নাবালক-নাবালিকাদের সুরক্ষার বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয়। ১০৯৮ দেশব্যাপী শিশু সুরক্ষা সহায়তা প্রদানকারী ফোন নম্বর, স্থানীয় থানা ও রাজ্যের ক্ষেত্রে স্কুল স্তরে গড়ে তোলা কন্যাশ্রী ক্লাবে জানিয়ে বাল্যবিবাহ রোখা যায়।
আরও পড়ুন: ২০১৮ সালে ঢাকার মিরপুরে জলমগ্ন রাস্তায় নৌকা চলার ছবি ছড়াল কলকাতার বলে