বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভাইরাল তামিলনাড়ুর মহিলা দাহ-কর্মী পি জয়ন্তীর ছবি
বুম দেখে তামিলনাড়ুর সেন্থামঙ্গালমের নারী দাহ-কর্মী পি জয়ন্তী কোভিড-১৯ অতিমারির আগে থেকেই ওই বৈদ্যুতিন চুল্লিতে কর্মরত।
সোশাল মিডিয়ায় তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) মহিলা (woman) দাহ-কর্মী (crematorium) পি জয়ন্তীকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হচ্ছে। ফেসবুকে পি জয়ন্তীর (P Jayanthi) ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, "করোনা আতঙ্কে কেউ কাজ করতে না চাওয়ায় বৈদ্যুতিক শ্মশান এ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মৃতদেহ পোড়ান পি জয়ন্তী।"
বুম দেখে ২০১৩ সাল থেকে পি জয়ন্তী তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলার সেন্থামঙ্গালমের ওই বৈদ্যুতিন চুল্লিতে দাহ কাজ করছেন।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায় বৈদ্যুতিন চুল্লির সামনে শবদেহ বহনের ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মহিলা। ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "ইনি জয়ন্তী একজন ব্রাহ্মণ পরিবারের শিক্ষিত মহিলা যিনি ফিজিক্স এ মাস্টার্স (এম.এস. সি) পাস করেছেন চেন্নাই এর ইউনিভার্সিটি থেকে। এনার বাবা তামিলনাড়ুর শিব মন্দিরের পুরোহিত। কিন্তু করোনা আতঙ্কে কেউ কাজ করতে না চাওয়ায় ইনি বৈদ্যুতিক শ্মশান এ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মৃতদেহ পোড়ান। অন্তর থেকে শ্রদ্ধা ম্যাডাম। আমাদের অন্তিম যাত্রার এই কাণ্ডারীর জন্য, এই মায়ের জন্য শত কোটি কোটি নমন আর ভালোবাসা থাকলো...মা_তুঝে_সালাম "মানুষের আর -- একটা প্রাণ আছে, যেটা শরীর, প্রাণের চেয়ে বড়, সেটা মনুষ্যত্ব।"
বুম দেখে একই ক্যাপশন সহ ফেসবুকে ছবিটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে ২০১৫ সালের ৫ মে তামিল গণমাধ্যম ভিকাতন-এর একটি প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পায়।
ওই প্রতিবেদন অনুবাদ করলে জানা যায় পি জয়ন্তীর বাবার মৃত্যুর পর আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কোনও পুরুষ অন্তিম সৎকারে এগিয়ে আসেনি। ২০০৩ সালে নিজের হাতে পিতৃদেবের শেষ-যাত্রার আচার পালন করেন তিনি।
২০১৬ সালের ১৬ অগস্ট প্রকাশিত দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে পি জয়ন্তী তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলার সেন্থামঙ্গালমের ওই বৈদ্যুতিন চুল্লিতে দাহ-কাজ করছেন। ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তামিলনাড়ু সরকারের জয়ন্তীকে স্বাধীনতা দিবসের দিন ছক ভাঙার জন্য কল্পনা চাউলা পুরস্কারে সন্মানিত করে।
নামাক্কাল জেলার কুলিপট্টির কাছে এক গ্রামে জন্ম জয়ন্তী জাতিতে ব্রাহ্মন হয়ে গোন্ডার জাতিভুক্ত পাত্রকে বিয়ে করার সিন্ধান্ত নিলে পারিবারিক বয়কটের সম্মুখীন হন। সে সময় তাঁর পেশায় মন্দিরের পুরহিত বাবা পাশে এসে দাঁড়ান।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১২ সালে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়ন্তী। তিন মাস ধরে অসুস্থাবস্থায় থাকার পর কাজের সন্ধানে ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে মালি হিসেবে বাগান পরিচর্যার কাজে যোগ দেন। আস্তে আস্তে দাহকাজে হাত লাগাতে লাগাতে ১ জানুয়ারি ২০১৩ খাতায় কলমে দাহকর্মী হিসেবে ওই বৈদ্যুতিন চুল্লির কার্যভার নেন।
বিবিসির আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী চেন্নাই শহরে প্রবীন সলমন নামে আরেকজন মহিলা দাহঘাট তত্ত্বাবধায়ক রয়েছেন।
আরও পড়ুন: না, ভাইরাল ছবিটি সাম্প্রতিক ভারত-মার্কিন যৌথ মহড়ার যুদ্ধ-জাহাজ নয়