ভারতের জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করার ভুয়ো দাবি ছড়াল
ভারতের জিডিপি ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করে দাবিতে ইউটিউবের এক ভিডিওর স্ক্রিনশট ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আইএমএফ বুমকে জানায় জিডিপির বিষয় তৎক্ষণাৎ তথ্য প্রকাশিত করেনা এবং অর্থনীতিবিদরা জানান তথ্যের আসল সূত্র শুধুমাত্র জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর।
১৯ নভেম্বর তারিখে ভারতের জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার বিষয় অসংখ্য পোস্ট ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সংবাদমাধ্যমে।
লাইভস্ট্রিম ০৭ নামক একটি জিডিপি ট্র্যাক করার লাইভ ইউটিউব ভিডিওতে দেখানো হয় ভারতের জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করে। দাবি করা হয় এই ভিডিওর তথ্য নেওয়া হয় সরাসরি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ নামেও পরিচিত) থেকে।
যদিও এই তথ্য সঠিক নয় কারণ আইএমএফ তরফে বুমকে জানানো হয় তারা এভাবে তৎক্ষণাৎ তথ্য প্রকাশিত করেনা। এছাড়াও এই বিষয়ে কোন সরকারি তথ্য প্রকাশিত করা হয়নি।
এই দাবি প্রথমে কিছু ডানপন্থী এক্স ব্যবহারকারীদের করতে দেখা যায় এবং তারপরে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতাদের পোস্টে ও সংবাদমাধ্যমের শিরোনামেও দেখা যায়।
বুম লক্ষ্য করে ঋষি বাঘ্রী এই সংক্রান্ত নিজের এক্সের পোস্ট পরে মুছে দেন।
মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডনবীসও এই বিষয় নিজের এক্স প্রোফাইলে পোস্ট করে লেখেন,"গতিশীল, দূরদর্শী নেতৃত্বের এটাই পরিচয়! আমাদের নতুন ভারতের দিকে সুন্দরভাবে অগ্রসর হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে! আমাদের দেশ জিডিপিতে $৪ ট্রিলিয়ন দলের পেরিয়ে যাওয়ায় সকল ভারতীয়দের অভিনন্দন......আপনাকে আরও শ্রদ্ধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জি!"
এই টুইটের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
এছাড়াও, বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি এম চুবা আও, বিজেপি নেতা যেমন অন্ধ্রপ্রদেশের দগ্গুবতী পুরন্দেশ্বরী এবং কর্ণাটকের সিটি রবিও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশংসা করেন।
এবিষয়ে একজন ব্যবহারকারী ফেসবুকে বাংলায় লেখেন,"ভারতের জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পেরিয়ে গেছে। বিশ্বকাপ হারার পর যারা খুশি হয়েছিলেন, একবার মুখ লুকিয়ে কেঁদে আসুন। মনটা হাল্কা হবে।"
সংবাদমাধ্যমদের মধ্যে ফার্স্টপোস্ট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, মিন্ট, জি বিজনেস, ইংলিশ জাগরণ, দ্য ইন্ডিয়া সাগা এবং অন্যান্যরা এই বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত করে।
তথ্য যাচাই
এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি এবং জাপানের পরে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। ভারতের জিডিপি ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করার দাবিগুলি ভুয়ো। সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয় কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য বা বিবৃতি দেখা যায়নি। বুম জিডিপি সংক্রান্ত তথ্যের বিষয় আইএমএফের সাথে যোগাযোগ করে। তারা বুমকে বলেন, "ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুককে সূত্র হিসেবে রেখে ইউটিউব ভিডিওতে যে তথ্য প্রকাশিত করা হয়েছে, আমরা সেবিষয়ে জানাতে চাই যে আমাদের তরফে তৎক্ষণাৎ তথ্য একত্রিত করা হয় না এবং শুধুমাত্র অনুমান বা অতীতের তথ্য প্রকাশ করা হয়।"
কারা ভারতের জিডিপির তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশিত করেন?
"জিডিপির তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (এনএসও) দ্বারা সংগ্রহ এবং প্রকাশিত করা হয় এবং এই দপ্তর পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রকের অধীনে আসে। এটি ত্রৈমাসিক ভাবে প্রকাশ করা হয় এবং এগুলি একত্রিত করে একটি বার্ষিক অনুমান প্রদান করা হয়, যা সংশোধন সাপেক্ষ," অশোক কে. ভট্টাচার্য, ইন্ডিয়াস ফাইন্যান্স মিনিস্টার্স: ফ্রম ইনডিপেনডেন্স টু ইমার্জেন্সির (১৯৪৭-১৯৭৭) লেখক এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকীয় পরিচালক বুমকে বলেন।
পিআইবির তথ্য অনুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২৩ যেটি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক জিডিপি অনুমান, সেটি পরবর্তী প্রকাশ হবে ৩০ নভেম্বর তারিখে।
অর্থাৎ, এর মানে হলো জিডিপি পরিসংখ্যানকে লাইভ সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে তৎক্ষণাৎ পরিসংখ্যান হিসাবে সঠিক ভাবে দেখানও যায় না। "জিডিপি পরিসংখ্যান একটি তৎক্ষণাৎ তথ্য হতে পারে না, যদি না কেউ গড়ের মাধ্যমে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেখানোর চেষ্টা করে। এই ধরনের অনুমান সঠিক হবে না কারণ জিডিপি প্রবৃদ্ধি সেভাবে পরিসংখ্যান করা যায়না," ভট্টাচার্য আরও বলেন।
"এনএসওর তথ্য দুই মাস পিছিয়ে প্রদান করা হয়। আমরা ৩০ নভেম্বর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সংখ্যা পাব। আমি মনে করি না আইএমএফ স্বাধীনভাবে জিডিপি সংখ্যা গণনা করে। তারা এটি কেবলমাত্র সরকারী তথ্য থেকে নেয়," মদন সাভনাবিস, ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রধান অর্থনীতিবিদ বুমকে বলেন।
ক্যাপিটালমাইন্ডের সিইও দীপক শেনয়ও এক্সের ভাইরাল দাবিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেন। তার মতে, ভারতের জিডিপি এখনও $৪ ট্রিলিয়ন চিহ্ন স্পর্শ করতে পারেনি। "আমরা জুন পর্যন্ত প্রায় $৩.৩৮ ট্রিলিয়ন, এবং সম্ভবতঃ এখন $৩.৪৫ ট্রিলিয়ন।" তিনি এক্সে পোস্ট করেছেন।
জিডিপি অথবা জিডিপি ধ্রুবকের ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের মূল্য অনুমান করা যায় ৪০.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা তা ছুঁতে পারে, যা ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ছিল ৩৭.৪৪ লক্ষ্য কোটি টাকা।
মোসপির মতে,"জিডিপির ত্রৈমাসিক অনুমানগুলি সূচকভিত্তিক এবং বেঞ্চমার্ক সূচক পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়, যার অর্থ হল ত্রৈমাসিক অনুমান যেগুলি আগের বছরের তথ্য তাকে বেঞ্চমার্ক হিসেবে ধরে পূর্বানুমান করে আগামী দিনের সম্ভাব্য মূল্যায়ন করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রক, দপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থাদের তথ্যগুলি সংগ্রহ করে এই অনুমানগুলি তৈরী করা হয়। ক্ষেত্র অনুযায়ী অনুমান তৈরী করা হয় কিছু সূচক ধরে যেমন শিল্প উৎপাদনের সূচক, বেসরকারি সংস্থাদের আর্থিক প্রদর্শন তাদের ত্রৈমাসিক ফল যাচাই করে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা, পশুসম্পত্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা, মাছ উৎপাদন, সিমেন্ট অথবা স্টিলের উৎপাদন, রেলওয়ের নেট টন কিলোমিটার এবং প্যাসেঞ্জার কিলোমিটার, বেসামরিক বিমান চলাচলে প্যাসেঞ্জার এবং কার্গো ট্রাফিক, বোরো এবং ছোট সমুদ্র বন্দরের কার্গো ট্রাফিক, বাণিজ্যিক যানবাহনের বিক্রয়, ব্যাংকের আয় এবং ব্যয়ের হার, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের খরচের হিসেবে, ইত্যাদি।
ভারত জিডিপি কবে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার স্পর্শ করতে পারে?
"যদি ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ভারতের অর্থনীতির আকার ৩০১ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছায়, যা ২০২৩-২৪ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের অনুমান, তাহলে বর্তমান বছরের ডলার জিডিপি, ৮৩ টাকার বিনিময়ের হারে প্রায় $৩.৬ ট্রিলিয়ন। এই হারে, এটা অনুমান করা যায় যে ভারত ২০২৪-২৫ সালে $৪ ট্রিলিয়ন জিডিপি পেরিয়ে যাবে," ভট্টাচার্য বলেন।