ভুয়ো দাবিতে ছড়ালো তামিলনাডুতে গণেশ মূর্তি বাজেয়াপ্ত করার ভিডিও
বুম দেখে সাম্প্রদায়িক কারণে নয়, নিষিদ্ধ পদার্থ ব্যবহারের জন্যে বাজেয়াপ্ত করা হয় তামিলনাড়ুতে গণেশ মূর্তি
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিওতে একটি মালগুদাম বন্ধ ও সীল করার সময় কয়েকজন মহিলাকে কাঁদতে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে ভিডিওতে তামিলনাড়ু সরকারের প্রতিনিধিরা অবৈধ রাসায়নিক ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগে তামিলনাড়ুর করুরে একটি মূর্তি কারিগরের কাছ থেকে গণেশ মূর্তি বাজেয়াপ্ত করছে। ভিডিওটির সাথে শেয়ার করা ভাইরাল ক্যাপশনে আরও দাবি করা হয়েছে গণেশ প্যান্ডেল এবং মূর্তি তামিলনাড়ু সরকার নিষিদ্ধ করেছে।
বুম দেখে এই দাবিগুলি ভুয়ো। আমরা মূর্তি কারিগর সাত্রা রামের সাথে যোগাযোগ করেছি যার মূর্তিগুলি ভাইরাল ভিডিওতে বাজেয়াপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেছেন সে আসলে প্রতিমা তৈরিতে প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহার করেছিলেন, যা রাষ্ট্র দ্বারা নিষিদ্ধ রাসায়নিকগুলির মধ্যে একটি। এছাড়া, আমরা এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পাইনি যাতে বলা হয়েছে গণেশ মূর্তি এবং প্যান্ডেলগুলি তামিলনাড়ু সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
একজন ডানপন্থী এক্স ব্যবহারকারী (প্রাক্তন টুইটার) মেঘআপডেটস ভিডিওটি শেয়ার করেছেন এবং ক্যাপশনে লিখেছেন, "করুর, তামিলনাড়ু- গণেশ মূর্তি কারিগরদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের লোকদের কাছে তাদের গোডাউন সিল না করার জন্য ভিক্ষার এই হৃদয়বিদারক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগ, এই মূর্তিগুলোতে ‘সিন্থেটিক’ রং করা হয়েছে। কারিগররা এটি অস্বীকার করে। তারা হাত জোড় করে এবং চোখের জলে অনুরোধ করেছিল, তারা এগুলো ধার নিয়ে তৈরী করেছে এবং এটিই একমাত্র সময় যেখানে তারা তাদের কাজ বিক্রি করতে পারে। এই দরিদ্র মানুষরা এমনকি প্রমাণ সহ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিল যে কোনো সিন্থেটিক ব্যবহার করা হয়নি কিন্তু লাভ হয়নি। নোট: কোটি টাকার রাজস্ব 38000 সনাতন মন্দির এবং তাদের জমি থেকে নেওয়া হয়েছে।"
এই টুইটের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা হোয়াটসঅ্যাপেও একই ভিডিও সহ একই রকম ক্যাপশন পেয়েছি। এই ক্যাপশনে আরও যোগ করা হয়েছে, "এখন গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে তামিলনাড়ু সরকার দ্বারা গণেশ প্যান্ডেল এবং মুর্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এই ধরনের মুর্তি তৈরি করে তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং রাসায়নিক এবং সিন্থেটিক রং ব্যবহার করা বলে তাদের সামনে মূর্তি ভাঙা হয়।"
ফেসবুকে কয়েকটি পোস্টে ভাইরাল ভিডিওটির সাথে এই ক্যাপশনটিও উপস্থিত রয়েছে।
সেই পোস্টের লিংক এখানে এবং এখানে দেখা যাবে।
অনেক ভাইরাল ক্যাপশন ইঙ্গিত দেয় এই বাজেয়াপ্ত করার পিছনে একটি হিন্দু-বিরোধী সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ছিল।
এই ভিডিওটি বাংলা ক্যাপশন সহ বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। তাদের মধ্যে একজন ব্যবহারকারী ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লিখেছেন, "অভিনব পক্রিয়া সনাতনী সংস্কৃতি ধংস করার তামিলনাড়ু সরকারের সামনে গণেশ চতূর্দশী গ্রাহক দের অর্ডার করে থাকা মূর্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পাবন্ধি লাগান হল।"
এই ধরণের পোস্টের লিংক দেখা যাবে এখানে, এখানে এবং এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম "তামিলনাড়ু ব্যান গণেশ মূর্তি প্যান্ডেল" শব্দগুলি ব্যবহার করে একটি কীওয়ার্ড সার্চ করে, কিন্তু রাজ্যে গণেশ মূর্তি এবং প্যান্ডেল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
আমরা করুরের কালেক্টর অফিসের অফিসিয়াল এক্স (প্রাক্তনে টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে এই বিষয়ে একটি টুইট পেয়েছি, যেখানে বলা হয়েছে প্লাস্টার অফ প্যারিসের মতো উপকরণ ব্যবহারের কারণে মূর্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, কারণ এগুলি করা "কঠোরভাবে নিষিদ্ধ"।
আমরা আরও লক্ষ্য করি ভাইরাল ভিডিওটির ফ্রেমে স্থানীয় তামিলনাড়ুর সংবাদমাধ্যম পলিমার নিউজের লোগো ছিল, যা আমাদের এই সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে ভিডিওটি নিউজ আউটলেটের একটি প্রতিবেদনর অংশ।
আমরা কারুরের পলিমার নিউজের সংবাদদাতা আরুল সেলভানের সাথে যোগাযোগ করি, যিনি এই ঘটনাটির প্রতিবেদন তৈরী করেছিলেন। সেলভান আমাদের জানান ভাইরাল ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি হলেন সাত্রা রাম, যার ১০ লক্ষ টাকার মূর্তি বাজেয়াপ্ত করে সিল করে সরকারি দপ্তর।
তিনি ইউটিউবে পলিমার নিউজ দ্বারা শেয়ার করা আসল ভিডিওটিও আমাদের পাঠিয়েছেন এবং বুমকে বলেছেন সাত্রা রাম প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেছেন, যেটি ভাইরাল দাবিগুলিতে উল্লেখ করা হয়নি।
BOOM তখন সাত্রা রামের সাথে যোগাযোগ করে যিনি আমাদের কাছে স্বীকারও করেন কালেক্টর অফিসের প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহারের অভিযোগ সঠিক ছিল এবং মূর্তি তৈরির আগে তাকে প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জানানো হয়নি গণেশ চতুর্থীর আগে। "লোকেরা এসে আমার কাজ পরীক্ষা করে বলে মূর্তিগুলি ভাল, কিন্তু কেউ আমাকে এটি ব্যবহার না করতে বলেনি (প্লাস্টার অফ প্যারিস)," তিনি আমাদের বলেন।
সাত্রা রাম আরও উল্লেখ করেছেন প্লাস্টার অফ প্যারিসের তৈরি মূর্তি ত্রিচি, চেল্লাম এবং মাদুরাইতে বিক্রি হচ্ছে। "আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছিলাম এই মূর্তিগুলো বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ার জন্য, কারণ এগুলো আগেই তৈরি করা হয়েছে। এই মূর্তিগুলো তৈরি করার জন্য আমি ১০ লাখ টাকা ধার নিয়েছিলাম, এবং এটি শোধ না করতে পারলে আমি রাজস্থানে আমার গ্রামে ফিরে যেতে পারবো না," তিনি আমাদের জানিয়েছেন।
বুম ত্রিচি, চেল্লাম এবং মাদুরাইতে প্লাস্টার অফ প্যারিসের তৈরি মূর্তি বিক্রি হওয়ার বিষয়ে সাত্রা রামের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
যদিও, সাত্রা রামের বিবৃতি এই দাবিকে খণ্ডন করে যে অবৈধ রাসায়নিক ব্যবহারের মিথ্যা অভিযোগে মূর্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং বুম পুরো ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক যোগ খুঁজে পায়নি।