মুসলিম এলাকায় দোকান খোলার দায়ে এক হিন্দুকে মারধর বলে ছড়াল অসম্পর্কিত ভিডিও
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের কুমিল্লার একটি মসজিদ থেকে জলের মোটর চুরির দায়ে ধরা পড়া এক যুবককে মারধরের। ভুক্তভোগীও মুসলিম সম্প্রদায়ের।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক যুবককে মারধর করার একটি ভিডিও ভুয়ো সাম্প্রদায়িক (communal) দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে। ব্যবহারকারীদের একাংশ ভিডিওর ঘটনাস্থল পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) বলে দাবি করেছেন।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের কোনও যোগ নেই। ভিডিওটি বাংলাদেশের এবং সেটিতে কুমিল্লার একটি মসজিদ থেকে জলের মোটর চুরি করার অভিযোগে ধরা পড়া ব্যক্তিকে প্রহারের দৃশ্য দেখা যায়। অভিযুক্ত ব্যক্তিও মুসলিম সম্প্রদায়ের।
দাবি
ভাইরাল ভিডিওটি এক ফেসবুক ব্যবহারকারী শেয়ার করে তার ক্যাপশনে লেখেন, ">এই ছেলেটিকে বেঁধে মারধর করা হচ্ছে কারণ এটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা এবং তাদের বাজার। এই হিন্দু ছেলেটি এখানে তার সবজির গাড়ি রেখেছিল...>এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীরা হিন্দু ছেলেটিকে বেঁধে মারধর করে এবং বলে, "তোমরা কাফেরদের এখানে কোন স্থান নেই।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এক ব্যবহারকারী ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের বলে দাবিও করেছেন। পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলামঃ
১. ঘটনাটা বাংলাদেশের: বুম ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ভাইরাল ভিডিওসহ একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্ট দেখত পাই, বিশেষত এবছরের অক্টোবর মাসের। এক ব্যবহারকারীর ১৪ অক্টোবর, ২০২৫-এর পোস্টের ক্যাপশন অনুসারে, "মসজিদের মটর চুরি করে কট।" অন্য এক ব্যবহারকারীর ফেসবুক পোস্ট অনুসারে, ঘটনাটি কুমিল্লার লাকসাম পোরসভা এলাকার।
এছাড়াও, অনুসন্ধানে আমরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লাকসাম টিভির ফেসবুক পেজে একই ঘটনার কিছু ছবি দেখতে পাই। পোস্টের ক্যাপশন থেকে জানা যায়, লাকসাম জংশন মসজিদের থেকে জলের পাম্প চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে দুই ব্যক্তি।
ভিডিওয় যে খুঁটির সুঙ্গে ভুক্তভোগীকে বেধে রাখা হয়েছিল তার উপরে গাউছিয়া রেস্তরাঁ লেখা একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য থেকে ইঙ্গিত নিয়ে আমরা গুগল ম্যাপে সার্চ করে ঘটনাস্থলটি বাংলাদেশের কুমিল্লার লাকসাম স্টেশন রোডে জামে মসজিদ এলাকার ঘটনা বলে নিশ্চিত হতে পেরেছি।
২. ঘটনার কোনো সাম্প্রদায়িক দিক নেই: আমরা ফেসবুকে এই ঘটনা সংক্রান্ত ওমর ফারুক নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর একাধিক ভিডিও পোস্ট দেখতে পাই যেখানে অভিযুক্তদের মসজিদ থেকে জলের মোটর চুরি করার কথা স্বীকার করতে শোনা যায়। এছাড়াও, ভিডিওটি থেকে স্পষ্ট হয় চুরি করতে আসা তিন ব্যক্তিই মুসলিম সম্প্রদায়ের— আফজাল, সাক্ষু এবং ফারুক। বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়ার পর আফজাল ও সাক্ষু নিজেরাই নিজদের পরিচয় স্বীকার করে। দুজনকে স্থানীয় বাসিন্দারা পাকরাও করলেও, তৃতীয় অভিযুক্ত ফারুক পালিয়ে যায়।
এর থেকে আমরা নিশ্চিত হই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই।







