তাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ভিক্ষুকের ছবি ভুয়ো দাবিতে ছড়াল নেপালের বলে
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি তাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ধর্মগুরু লুয়াং ফোর পিয়ান। দু'মাস পর তাঁকে কফিন থেকে তোলা হয়।
২০১৮ সালের জানুযারি মাসে তাইল্যান্ডের (Thailand) ব্যাংককে পারলৌকিক ক্রিয়ার উদ্দেশ্যে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকের (Buddhist Monk) সমাধিস্থ দেহ তুলে বের করে আনার ছবি ভুয়ো দাবি সহ সোশল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে, নেপালে (Nepal) উদ্ধার হওয়া ধ্যনমগ্ন এই ব্যক্তির বয়স ফরেন্সিক দল জানিয়েছে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ বছর।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায় এক গৈরিক বসন পরা ব্যক্তিকে দস্তানা পরে দুদিক থেকে ধরে রয়েছেন মাস্ক পরা নেভি ব্লু পোশাকে দুই ব্যক্তি।
ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "#নেপালের_কিছু আর্কিওলজিস্ট ও নেপাল পুলিশের চালানো সম্মিলিত অভিযানে হিমালয়ের অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলের এক পাহাড়ি গুহা থেকে এই প্রাচীন বৌদ্ধ ভিক্ষুকের শরীর উদ্ধার হয়েছে। মেডিক্যাল টিম পরীক্ষা করে জানিয়েছে যে শরীরের ভেতর প্রাণ এখনো বর্তমান। তবে ফরেনসিক টিমের বক্তব্য অনুযায়ী এই বৌদ্ধ ভিক্ষুক বর্তমানে সজ্ঞানে নেই। ধ্যানরত অবস্থায় তিনি সমাধি লাভ করেছেন, অর্থাৎ শরীরের ভেতর প্রাণ থাকলেও জ্ঞান নেই। নেপালের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী এই অবস্থাকে "দাচোকাবো" বলা হয়ে থাকে। ফরেনসিক টিম আরো জানায় যে এই ব্যক্তির বয়স প্রায় 250 থেকে 300 বছরের মধ্যে হতে পারে। তাদের অনুমান এই ব্যক্তি প্রায় দুশো বছরের ওপর ধরে এইভাবে ধ্যানরত অবস্থায় রয়েছেন।"
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
বুম দেখে হিন্দিতে প্রায় একই দাবি সহ ছবিটি টুইটারে শেয়ার করা হয়েছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: না, ভিডিওটি দিল্লিতে সরকারি স্কুলকে মাদ্রাসায় রূপান্তরিত করার দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে একই ছবি সহ ২০১৮ সালের একাধিক প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ছবিটি নেপালের কোনও ২৫০-৩০০ বছর বয়সী বৌদ্ধ ভিক্ষুকের ছবি নয়।
২২ জানুয়ারি ২০১৮ প্রকাশিত মিরর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ছবিটি তাইল্যান্ডের ব্যাংককের বৌদ্ধ ধর্মগুরু লুয়াং ফোর পিয়ান ( Luang Phor Pian)-এর। পিয়ান ৯২ বছর বয়সে মারা যান ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর। পরের বছর জানুয়ারি মাসে বৌদ্ধ ধর্মের রীতি মেনে পিয়ানের দেহ যখন দু়'মাস পর কফিন খুলে তোলা হয় দেখা যায় তিনি যেন হাসছেন। রীতি অনুযায়ী নতুন পোষাক বদলের জন্য তাঁর দেহ কফিন থেকে খোলা হয়।
দেহত্যাগের পর ১০০ দিন ধরে পিয়ানের অনুগামীরা প্রার্থনা করে তাঁর অন্তিম সমাধির কাজ সম্পন্ন করেন। পিয়ানের জন্ম কম্বোডিয়ায় হলেও জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি তাইল্যান্ডের লোপবুড়িতে জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু হিসেবে অতিবাহিত করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে পিয়ানের ছবি সহ ডেইলি মেল, ডেইলি স্টার ও এক্সপ্রেস-এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গো-মূত্র পানের ছবি ভুয়ো