বাংলাদেশে পুজোয় হিংসা: না, ইনি ইসকন বাংলাদশের নিহত সন্ন্যাসী নন
নদীয়ার মায়াপুর ইসকনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম জানতে পারে যে, ভাইরাল ছবির ব্যক্তি জীবিত, বর্তমানে তিনি ক্রোয়েশিয়াতে রয়েছেন।
![বাংলাদেশে পুজোয় হিংসা: না, ইনি ইসকন বাংলাদশের নিহত সন্ন্যাসী নন বাংলাদেশে পুজোয় হিংসা: না, ইনি ইসকন বাংলাদশের নিহত সন্ন্যাসী নন](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/10/22/960503-iskcon-temple-priest-killed-west-bengal-durga-puja-pandals-vandalised-communal-violence-bangladesh.webp)
একটি পুরনো ছবিতে এক সন্ন্যাসীকে মুসলমান পুরুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের (Bangladesh Violence) সাস্প্রতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ওই সন্ন্যাসী নিহত হয়েছেন।
বুম দেখে, ভাইরাল ছবিটি ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস-এর (ইসকন) (ISKCON) কেন্দ্রে তোলা হয়। ইসকন মায়াপুরের (Mayapur) যোগাযোগ ব্যবস্থার জাতীয় পরিচালকের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উনি নিশ্চিত করে বলেন যে, ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, উনি জীবিত আছেন।
ঢাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লায় একটি দুর্গা পুজো মন্ডপে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায়, বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। ১৮ অক্টোবর, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিগত কয়েক দিনে ৬ জন মারা যান। এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মস্থানগুলি আক্রমণ করে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশের ওই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, নোয়াখালি জেলায় এক উন্মত্ত জনতা ইসকনের মন্দিরে ভাঙ্গচুর ও সেখানকার পুণ্যার্থীদের আক্রমণ করলে, দু'জন হরে কৃষ্ণ ভক্ত মারা যান। ইসকনের ওয়েবসাইটে ওই দুই নিহত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। প্রান্ত চন্দ্র দাস ও যতন চন্দ্র সাহা বলে শনাক্ত করা হয় তাঁদের। ওই ওয়েবসাইটে আরও বলা হয় যে, নিমাই দাস নামের আরও এক ভক্তের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ছবিটি এই পরিপ্রেক্ষিতে ভাইরাল হয়েছে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি শেয়ার করেছেন। সেই সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ইনি হলেন নিতাই দাস প্রভু। বাংলাদেশে ইসকন মন্দিরের ওপর হামলায় উনি মারা যান। রমজানের সময় উনি ৩০ দিনই রোজা ইফতারের আয়োজন করতেন।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: ये हैं स्वामी निताई दास प्रभु जो बंगलादेश में इस्कॉन के मंदिर पर किये गये हमले में मारे गये. इन्होंने पिछले रमजानों में लगातार तीसों दिन रोजा इफ्तार आयोजित कराया था)
![](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/10/22/960504-960351-nitayi-das.webp)
একই দাবি সমেত ছবিটি একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টগুলি দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
একই ক্যাপশন সমেত ছবিটি টুইটারেও শেয়ার করা হয়েছে।
![](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/10/22/960505-ashok-pundit-nitai-das.webp)
তথ্য যাচাই
ভাইরাল ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বুম দেখে যে, ৪ জুলাই, ২০১৬ ইউসিএনিউজ.কম-এ প্রকাশিত এক খবরে ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়।
ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "২২ জুন, হিন্দু গোষ্ঠী ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস-এর একজন সন্ন্যাসী তাঁদের মায়াপুর মন্দিরে মুসলমানদের মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন। (ছবি: রঘু নাথ)।"
ওই খবর অনুযায়ী, ২০১৬ সালে, ইসকনের মায়াপুর কেন্দ্রে (পশ্চিমবঙ্গ) মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। রমজানের উপবাস শেষ করার জন্য মুসলমান পুরুষেরা ওই মন্দির চত্বরেই প্রার্থনা করেন।
২০১৬ সালে ওই একই ছবি অন্যান্য ওয়েবসাইটেও ব্যবহার করা হয়। দেখার জন্য এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
ওই সূত্র ধরে, বুম ইসকনের মায়াপুর কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বুমের সঙ্গে কথা বলার সময়, ইসকনের জাতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিচালক যুধিষ্টির গোবিন্দ দাস নিশ্চিত করে বলেন যে, ছবিটি ইসকনের মায়াপুর কেন্দ্রেই তোলা হয়।
"২০১৬ সালে ইসকনের মায়াপুর কেন্দ্রে আয়োজিত ইফতারে আমি উপস্থিত ছিলাম। ছবিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন ইভান অ্যান্টিক। উনি ক্রোয়েশিয়ার পুলা'র বাসিন্দা। দীক্ষা নেওয়ার পর ওঁর নাম হয় নিতাই দাস," বুমকে বলেন যুধিষ্টির গোবিন্দ দাস।
উনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস অতিমারি শুরু হওয়ার আগে, উনি ক্রোয়েশিয়া ফিরে যান। সেখানে তিনি জীবিত ও নিরাপদে আছেন, বলেন দাস।
বুম ক্রোয়েশিয়ার পুলা'তে ইসকন মন্দির ও ইভান অ্যান্টিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে, এই প্রতিবেদন সংস্করণ করা হবে।
আরও পড়ুন: জমি বিবাদ ঘিরে কুপিয়ে খুনের ভিডিও ছড়াল বাংলাদেশের হিংসা বলে