বাংলাদেশের দুর্গা পুজো মণ্ডপে তাণ্ডবের ভিডিও পশ্চিমবঙ্গের বলে ছড়াচ্ছে
বুম দেখে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে বাংলাদেশের নোয়াখালির ত্রিশূল দুর্গা পুজো মণ্ডপে সংঘটিত তাণ্ডবের দৃশ্য।
বাংলাদেশের (Bangladesh) নোয়াখালিতে এক দল লোকের একটি দুর্গাপুজোর (Durga Puja pandal) মণ্ডপে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অস্বস্তিকর দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই ভুয়ো দাবি সহ যে, এটি পশ্চিমবঙ্গের দুর্গোৎসবে তাণ্ডব চালানোর ছবি।
বুম দেখেছে, আক্রান্ত যে মণ্ডপটিতে দাঙ্গাবাজরা হামলা চালায়, সেই মণ্ডপটি বাংলাদেশের নোয়াখালি জেলার (Noakhali) চৌমুহনী এলাকার (Chowmuhani) মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশে দুর্গাপূজার উৎসবের সময় বিভিন্ন স্থানে যে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে, ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরানের অমর্যাদা করা হয়েছে, এই অভিযোগে ডজন-ডজন হিন্দু মন্দিরে হামলা চালানো হয়, যা নিবারণ করতে পুলিশকে গুলি পর্যন্ত চালাতে হয়েছে। এই সাম্প্রদায়িক হিংসার তাণ্ডবে ইতিমধ্যেই অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শুক্রবার ও শনিবার ঢাকা ও নোয়াখালি জেলায় নতুন করে হামলা ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
উঁচু থেকে তোলা ভাইরাল ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, এক ক্রুদ্ধ জনতা একটি খোলা প্রান্তরে তৈরি পুজোর মণ্ডপে প্রবেশ করে সেটি ধ্বংস করে দিচ্ছে। নেপথ্যে বাংলায় মহিলা ও শিশুদের ভয়ার্ত চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। যে মহিলা ভিডিওটি রেকর্ড করছেন, তাঁকে লোকজনদের সতর্ক করতে শোনা যাচ্ছে, তারা যেন ঘরের ভিতরে থাকে এবং নিরাপদ থাকে।
ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে একটি হিন্দি ক্যাপশন সহ, "গতকাল শান্তিকামীরা বাংলার দুর্গাপুজোর মণ্ডপে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি এই সম্প্রদায়কে তোল্লা দিচ্ছেন। হিন্দুরা মুলায়ম সিং যাদব এবং মমতা ব্যানার্জিকে ক্ষমা করবে না।"
(মূল হিন্দিতে: "कल बंगाल में दुर्गा पूजा के पंडाल को तहस नहस करते शांति दूत। इन सूगरों की औलादों को समाजबादी पार्टी उत्तरप्रदेश में औऱ ममता बनर्जी बंगाल में इतना बढ़ावा दे दिए है ही ये आलम है। मुलायम सिंह यादव और ममता बनर्जी को हिन्दू कभी भी माफ नहीं करेगा।")
হোয়াটসঅ্যাপ ইংরাজিতে একই ধরনের বিবরণী সহ ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০১৮ সালে টাঙ্গাইলে মাদ্রাসা শিক্ষকের লাশ উদ্ধার জুড়ল বাংলাদেশ হিংসায়
তথ্য যাচাই
বুম খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, ১৫ অক্টোবর ফেসবুকের পেজে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা এই ভিডিও শেয়ার করেছেন। পোস্টগুলি দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
বাংলায় ভিডিওর ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে: "নোয়াখালি, ত্রিশূল, মঙ্গলা, বিজয়া প্যান্ডেলে ভয়ানক দৃশ্য...এই সব মণ্ডপ ও কোটিবাড়ি মন্দির জনতা জ্বালিয়ে দিচ্ছে, হিন্দুদের বাড়ি-ঘর আক্রান্ত হচ্ছে...একের পর এক মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে..."।
এই সূত্র অনুসরণ করেই আমরা বিজয়া দুর্গা মন্দিরটি খুঁজে বের করি, যেটি নোয়াখালির চৌমুহনীতে শ্রীশ্রী গৌরনিত্যানন্দ মন্দিরের কাছেই অবস্থিত।
এর পর আমরা বিজয়া দুর্গামন্দিরের পুজো সংগঠকদের কাছে বার্তা পাঠায়। তাঁরা নিশ্চিত করেন যে, ভিডিওটি তাঁদের এলাকারই ঘটনা। বুমকে তাঁরা আরও জানান যে, ঘটনাটি ঘটে চৌমুহনীতে লোকনাথ মন্দির লাগোয়া কলেজ রোডে ত্রিশূল পুজো মণ্ডপে।
চৌমুহনীর ত্রিশূল পুজোমণ্ডপে তাণ্ডব
ত্রিশূল সর্বজনীন পুজা উৎসব পরিষদ এ বছরের উৎসবের অনেকগুলো ছবি ও ভিডিও আপলোড করেছে।
বুম ভাইরাল ভিডিওতে দেখা দৃশ্যের সঙ্গে ফেসবুকে ভক্তদের শেয়ার করা ছবির তুলনা করেছে।
তা ছাড়া, দুর্গামণ্ডপের কাছেই স্থিত রাধাকৃষ্ণ গৌরনিত্যানন্দ মন্দিরের ব্রহ্মচারী অনুকূল গোবিন্দ দাসের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ঘটনাটি তাঁদের এলাকাতেই ঘটেছে। বাংলাদেশ বুমকে তিনি জানান, চৌমোহনির লোকনাথ মন্দিরের কাছে একটি অস্থায়ী মণ্ডপে হিংসার ঘটনাটি ঘটেl আমরা এটাও নিশ্চিত করেছি যে, তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড মণ্ডপটি গৌরনিত্যানন্দ মন্দির থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত।
নীচে ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া লোকনাথ মন্দিরের ফ্রেম এবং একটি অনলাইন ব্লগ-এর ছবির তুলনা দেওয়া হলো।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং তথ্য সুজিত এ ও মিনহাজ আমন, বুম বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পুজোয় হিংসা: ধর্মীয় দাবিতে ছড়াল ২০১৫ সালের সম্পর্কহীন ছবি