পুরনো ছবি ছড়িয়ে মিথ্যে দাবি করৌলি দাঙ্গার শিকার দাঙ্গাকারী নিজেই
বুম দেখে দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৬ সাল থেকে অনলাইনে রয়েছে, এর সঙ্গে করৌলির সাম্প্রতিক হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই।
ভারতীয় জনতা পার্টির (Bharatiya Janata Party) গুজরাত শাখার একজন কর্মকর্তা দু'টি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করেছেন। একটিতে, রাজস্থানের করৌলিতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার, এমন এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। অন্যটিতে, ফেজ টুপি পরা এক ব্যক্তিকে পাথর ছুঁড়তে দেখা যাচ্ছে। কোলাজটি শেয়ার করার সঙ্গে তিনি এও দাবি করেছেন যে, ও দুই ছবির ব্যক্তি একই। এবং ওই দাঙ্গায় উনি সহিংস ভাবে জড়িত ছিলেন।
বুম দেখে দাবিটি মিথ্যে। ফেজ টুপি-পরা এক ব্যক্তির পাথর ছোঁড়ার ছবিটি ২০১৬ থেকে ইন্টারনেটে আছে। এবং সেটির সঙ্গে করৌলিতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনও যোগ নেই।
গুজরাত বিজেপির কর্মী দীনেশ দেশাই ছবি দু'টি টুইট করেন। সঙ্গে ক্যাপশনে উনি হিন্দিতে লেখেন 'সচ্চাই' বা সত্য। যে ব্যক্তি করৌলি দাঙ্গার শিকার, তাঁর ছবির ওপরে লেখা 'অন ক্যামেরা' (ক্যামেরার সামনে)।আর ফেজ টুপি পরে যে ব্যক্তিকে পাথর ছুঁড়তে দেখা যাচ্ছে, তাঁর ছবির ওপর লেখা 'অফ ক্যামেরা' (ক্যামেরার বাইরে)।
দেশাইয়ের টুইটের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের সাজা ফাঁসি, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ভিডিও বিভ্রান্তি সহ ফের ভাইরাল
তথ্য যাচাই
করৌলি দাঙ্গার ছবিগুলি দেখে বুম। তার মধ্যে ছিল ফেজ টুপি-পরা, কান্নায় ভেঙ্গে পড়া ব্যক্তিটির ছবি, বা কোলাজের প্রথম ছবিটি। চিত্রসাংবাদিক মির ফইজল সেটি তোলেন।
আমরা ফইজলের সঙ্গে কথা বলি। উনি আমাদের বলেন ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল করৌলিতে ছবিটি তিনি তোলেন। উনি আরও বলেন, ওই ব্যক্তিটির নাম নাজমুদ্দিন।
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সমৃদ্ধি সুকানিয়া'র লেখা করৌলি নিয়ে প্রতিবেদনেও ওই একই ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৫ বছর বয়সি নাজমুদ্দিন একটি 'ড্রাই ফ্রুট' ও মশলার দোকান চালাতেন। রিপোর্টটিতে বলা হয়, দাঙ্গার সময় তাঁর দোকান ভস্মীভূত হয়ে যায়।
এরপর আমরা, ফেজটুপি-পরা, পাথর ছুঁড়তে থাকা, লোকটির ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। এর ফলে, ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি করা একটি টুইট আমদের সামনে আসে।
টুইটটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
টুইটার ব্যবহারকারী @jitsamar14-এর কথা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩ জানুযারি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়চকে ঘটা দাঙ্গার ছবি সেটি। আমরা ওই ছবিটির উৎস নিজস্ব উপায়ে নির্ণয় করতে পারিনি।
কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ২০১৬ সাল থেকে সেটি ইন্টারনেটে আছে। এবং তার ফলে, সেটির সঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া করৌলির দাঙ্গার কোনও যোগ থাকতে পারে না।
আরও পড়ুন: পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে দাবি ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক মুসলিম-বিরোধী মিছিল