না, কর্নাটকের শিবমোগায় জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরুয়া পতাকা তোলা হয়নি
বুম শিবমোগার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান কলেজের পতাকার পোলে জাতীয় পতাকা টাঙানো ছিল না।
কর্নাটকের (Karnataka) সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাপূর্ণ শিবমোগায় মঙ্গলবার হিজাব বিতর্ক হিংসাত্মক হয়ে ওঠে যখন হিজাব পরিহিত মুসলিম (Muslim) ছাত্রীদের প্রতিবাদে হিন্দু ছাত্ররা গেরুয়া শাল পরে হাজির হয়। শিবমোগার সরকারি ফার্স্ট গ্রেড কলেজে ছাত্ররা কলেজ প্রাঙ্গণে গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে দেয়।
ঘটনার ভিডিওটি সঙ্গে-সঙ্গেই ভাইরাল হয় এবং কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমার টুইট করে লেখেন, শিবমোগার ওই কলেজে জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরুয়া ঝান্ডা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টুইটটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে।
শিবকুমারের এই বক্তব্য টাইমস নাউ-এর সাংবাদিক ইমরান খান টুইট করে তাঁকে উদ্ধৃত করেন যে, 'একদল ছাত্র নাকি জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়ে তার জায়গায় গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে'।
শিবকুমার ইন্ডিয়া টুডের কাছে এক সাক্ষাৎকারে একই দাবি করেন যে, কলেজ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছে।
একই দাবি জানিয়ে ইন্ডিয়া টুডে আলাদা ভাবে প্রতিবেদন লেখে এই শিরোনাম দিয়ে "কর্নাটকের হিজাব বিতর্ক: ছাত্ররা জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়ে গেরুয়া ঝান্ডা টাঙিয়ে দিয়েছে"। পরে শিরোনামটি পাল্টে লেখা হয়, "কর্নাটকের হিজাব বিতর্ক: ছাত্ররা গেরুয়া ঝান্ডা টাঙিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে"।
এটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে।
পরে ইন্ডিয়া টুডে টুইটটি মুছে দেয়।
আরও পড়ুন: সমাজবাদী প্রার্থীর প্রচারে পাকিস্তানপন্থী স্লোগান, মিথ্যে দাবি
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওগুলি পরীক্ষা করে দেখেছে এবং কলেজ-চত্বরে কোথাওই জাতীয় পতাকার কোনও চিহ্ন দেখতে পায়নি।
এরপর আমরা কলেজের অধ্যক্ষ ধনঞ্জয় বি আর-এর সঙ্গে কথা বলি এবং তিনি আমাদের জানান- সেদিন কলেজ প্রাঙ্গণে কোনও জাতীয় পতাকা টাঙানো ছিল না যখন গেরুয়া শাল গায়ে ছাত্ররা পতাকার দণ্ড বেয়ে উঠে সেখানে গেরুয়া ঝান্ডা টাঙিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, "প্রতিবাদী ছাত্ররা যখন সেখানে হাজির হয়, তখন পতাকা টাঙানোর দণ্ডটিতে কোনও জাতীয় পতাকা লাগানো ছিল না। যদি থাকতো, তাহলে সেটা সরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আরও বড় প্রতিবাদ হতো। আমি নিজের চোখে দেখেছি, একজন ছাত্র ওই ডান্ডা বেয়ে উঠে গেরুয়া পতাকা লাগাচ্ছে।"
"সেসময় ওখানে কোনও জাতীয় পতাকা উড়ছিল না। শেষ বার ওই দণ্ডটিতে জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারিতে, আর সেদিনই বিকেল ৬টার সময় সেটি নামিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে কলেজের পতাকা-দণ্ডে কোনও পতাকাই লাগানো হয়নি।"
গেরুয়া ঝান্ডা টাঙানোর আগে পতাকা দণ্ডটির একটি ছবিও অধ্যক্ষ আমাদের পাঠিয়েছেন, যাতে দণ্ডটি পতাকাহীন দেখা যাচ্ছে।
বুম শিবমোগ্গার দুজন স্থানীয় রিপোর্টারের সঙ্গেও কথা বলেছে, যাঁরা ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরাও নিশ্চিত করেছেন যে, কোনও জাতীয় পতাকা সেখানে টাঙানো ছিল না।
"ঘটনাটি ঘটে সকাল ১০টা থেকে ১০টা ৪৫-এর মধ্যে যখন প্রতিবাদে জড়ো হওয়া ছাত্রদের মধ্য থেকে একজন একটা গেরুয়া পতাকা নিয়ে দণ্ড বেয়ে উঠে পড়ে সেটি টাঙিয়ে দেয়", বললেন একজন সাংবাদিক যিনি নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, যেহেতু অন্য সংবাদমাধ্যমকে তাঁদের কিছু জানানো বারণ।
তিনি আমাদের আরও জানান যে, গেরুয়া ঝান্ডাটি খুব বেশি হলে মিনিট দশেক টাঙানো ছিল, যারপর পুলিশ এসে সেটি খুলে নিয়ে যায়।
এ ছাড়াও আমরা ঘটনার বেশ কয়েকটি অন্য ভিডিও পরখ করে দেখেছি- কোথাওই কলেজ-চত্বরে জাতীয় পতাকার কোনও অস্তিত্ব দেখিনি।
হিজাব বিতর্ক
২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর কর্নাটকের উদুপিতে একটি সরকারি পি-ইউ কলেজ ৮ জন মুসলিম ছাত্রীকে কলেজে প্রবেশ করতে বাধা দেয় তারা হিজাব পরে ছিল, এই কারণে। ক্রমাগত প্রতিবাদ করার পর তাদের হিজাব পরেই কলেজে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু আগে তারা যে শ্রেণিকক্ষে বসতো, সেখানে তাদের বসার জায়গা হয়নি, অন্য কক্ষে বসতে দেওয়া হয় এবং তাদের জন্য কোনও লেকচার শোনার ব্যবস্থাও করা হয়নি। অচিরেই কর্নাটকের নানা জায়গায় হিজাবের প্রতিবাদে দক্ষিণপন্থীদের আন্দোলন শুরু হয় এবং উদুপি জেলার কুন্দপুরের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীরা তাদের ইউনিফর্মের ওপর গেরুয়া শাল বা স্কার্ফ জড়িয়ে 'জয়-শ্রীরাম' ধ্বনি দিতে-দিতে কলেজে ঢুকছে।
আরও পড়ুন: না, রাহুল গাঁধীকে আশীর্বাদ করতে অস্বীকার করেননি শ্রীঙ্গেরি মঠের সাধু