KIIT কাণ্ডে অভিযুক্তর বাবা বলে ভুয়ো দাবিতে ছড়াল লখনউয়ের রাজনৈতিক কর্মীর ছবি
বুমকে ভাইরাল ছবির ব্যক্তি নিশ্চিত করেন তিনি ওড়িশায় কেআইআইটির ছাত্রী মৃত্যুতে অভিযুক্ত অদ্বিক শ্রীবাস্তবের বাবা নন।



উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক কর্মী ও একটি হিন্দুত্ববাদী দলের প্রধান মনোজ শ্রীবাস্তবের (Manoj Srivastava) একটি ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করে তাকে ওড়িশার কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির (KIIT) সাম্প্রতিক ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত অদ্বিক শ্রীবাস্তবের (Adwik Srivastava) বাবা হিসাবে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
ভাইরাল ছবির ব্যক্তি বুমকে নিশ্চিত করেছেন অভিযুক্ত অদ্বিকের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি আরও জানান, তার ছেলের বয়স ১৬ বছর এবং সে এখনও স্কুলে পড়ছে।
ওড়িশার কেআইআইটি ক্যাম্পাসে ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে হোস্টেলের ঘরে নেপাল থেকে আসা ২০ বছর বয়সী তৃতীয় বর্ষের এক বিটেক ছাত্রীর মৃতদেহ পাওয়া গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কলেজের তরফ থেকে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয় কলেজেরই এক ছাত্রের হেনস্থার শিকার হয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য নেপালি ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপকভাবে প্রতিবাদ করে উচ্চ মানের তদন্তের দাবি জানায়।
ওড়িশা পুলিশ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অদ্বিক শ্রীবাস্তবকে গ্রেফতার করেছে।
কেআইআইটি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সকল নেপালি পড়ুয়াদের রাতের মধ্যেই হোস্টেল খালি করার আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও, অনেক পড়ুয়া প্রফেসরদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও করে। এরপর, কেআইআইটির উপাচার্য সরণজিৎ সিংহ মঙ্গলবার নেপালি পড়ুয়াদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটির দুজন কর্মীকে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জন্য চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা নেপালের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলেছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি জানিয়েছেন দুজন নেপালি আধিকারিককে ওড়িশার কেআইআইটিতে পাঠানো হয়েছে সেখানের অবস্থার পর্যবেক্ষণ করতে।
ছাত্রী মৃত্যুর প্রভাব সোশ্যাল মিডিয়াতেও পড়েছে এবং একাধিক ব্যবহারকারী মনোজ শ্রীবাস্তবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ছবি শেয়ার করেছেন যেখানে তার গলায় একটি গেরুয়া স্কার্ফ দেখা যায়। ভাইরাল ছবিতে দাবি করা হয়েছে তিনি অভিযুক্ত অদ্বিক শ্রীবাস্তবের বাবা ও ভারতীয় জনতা পার্টির একটি শাখার প্রধান।
ছবিটি শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী ইংরেজিতে দাবি করেছেন, "ভাবুন কেনো এই কলেজ অদ্বিক শ্রীবাস্তবকে রক্ষা করছে?? উত্তর: " পোস্টে দেখা যায় মনোজ শ্রীবাস্তবের অ্যাকাউন্টের স্ক্রনশটটি রেডিটে পোস্ট করা হয়েছিল যা বর্তমানে মুছে ফেলা হয়েছে।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ছবির ব্যক্তি কেআইআইটি কাণ্ডে অভিযুক্ত অদ্বিক শ্রীবাস্তবের বাবা নয়।
আমাদের ওড়িশার এক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, পুলিশের কাছে করা অভিযোগে অভিযুক্তের পুরো নাম অদ্বিক মনোজ শ্রীবাস্তব হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, অভিযুক্তের বাব-মায়ের ব্যাপারে কোনও তথ্য দেওয়া নেই।
আমরা ভাইরাল পোস্টে দৃশ্যমান মনোজ শ্রীবাস্তবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুঁজে পাই যা থেকে জানা যায় তিনি একটি হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় কেশরী বাহিনীর জাতীয় স্তরের প্রধান এবং উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা।
দেখুন এখানে।
শ্রীবাস্তব বুমকে বলেন, তিনি বিজেপি এবং আরএসএস দুটি রাজনৈতিক দলের সাথেই যুক্ত তবে, তার ছেলে কেআইআইটিতে ছাত্রী মৃত্যুতে অভিযুক্ত অদ্বিক শ্রীবাস্তব নয়। তিনি জানান তার ছেলের বয়স ১৬ বছর যেখানে অভিযুক্ত ২১ বছর বয়সী। তিনি বলেন, "আমার ছেলে নয়, আমার ছেলে ওড়িশাতে পড়ে না। সে এখন লখনউয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছে, ওড়িশায় নয়।"
আমরা যাচাই করে দেখেছি শ্রীবাস্তবের ছেলের নাম ও চেহারা কোনটাই কেআইআইটি কাণ্ডে অভিযুক্তের সঙ্গে মেলে না। শ্রীবাস্তবের ছেলে নাবালক হওয়ার কারণে বুম তার তথ্য এই প্রতিবেদনে প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মনোজ শ্রীবাস্তব তার ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুকে ভাইরাল দাবি খণ্ডন করে একটি ভিডিও আপলোড করেন যা তিনি আমাদের পাঠিয়েছেন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম অভিযুক্ত অদ্বিক শ্রীবাস্তবের বাবার পরিচয় স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। তবে, আমরা নিশ্চিত হয়েছি ভাইরাল ছবির মনোজ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে অভিযুক্ত অদ্বিকের কোনও সম্পর্ক নেই।
নোট: আপনি বা আপনার পরিচিত কারো যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তবে এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করতে দ্বিধা করবেন না। AASRA: 91-22-27546669 (২৪ ঘন্টা) স্নেহা ফাউন্ডেশন: 91-44-24640050 (২৪ ঘন্টা) ভান্দ্রেভালা ফাউন্ডেশন ফর মেন্টাল হেলথ: 1860-2662-345 and 1800-2333-330 (২৪ ঘন্টা) iCall: (555)123-4567 (সোমবার থেকে শনিবার: সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা) কানেকটিং NGO: 18002094353 (দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা) দ্য সামারিটানস মুম্বাই: 91-84229 84528/91-84229 84529/91 84228 84530 (রোজ, দুপুর ৩টে - রাত ৯টা )