বিহারে দ্বারভাঙ্গায় কেন্দ্র এইমস খুলেছে? প্রধানমন্ত্রী মোদীর দাবি ভুয়ো
প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভা ও দলের তার সদস্যরা এইমস ক্যাম্পাস না খোলার জন্য বিহার সরকারের বিলম্ব করাকে দায়ী করে।
এবছরের ১২ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত রাজ পরিষদে একটি অনলাইন বক্তব্য রাখবার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) দাবি করেন তার ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব ভারতে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS)-এর একাধিক ক্যাম্পাস খুলেছে যার মধ্যে একটি হলো বিহারের দ্বারভাঙ্গায়।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি মিথ্যে। বিজেপি নেতা এবং বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর এক বিবৃতি অনুসারে, কেন্দ্রীয় সরকার বিহার সরকারের বরাদ্দ করা জমিটি নতুন এইমস ক্যাম্পাসের জন্য অনুপযুক্ত বলে মনে করে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য নিজেও বিষয়টি নিশ্চিত করে ২৬ মে ২০২৩ তারিখের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের এক চিঠি প্রকাশ করেন যা বিহার সরকারের প্রস্তাবিত জমি নিয়ে কেন্দ্রের অসম্মতির কারণটি নিশ্চিত করে।
মোদীর দল এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিবৃতিগুলি নিশ্চিত করে যে দ্বারভাঙ্গায় প্রস্তাবিত এইমস ক্যাম্পাস এখনও তৈরী করা হয়নি।
"স্বাস্থ্যসেবার জন্য আমরা আসামের গুয়াহাটি থেকে বাংলার কল্যাণী এবং ঝাড়খণ্ডের দেওঘর থেকে বিহারের দ্বারভাঙ্গা পর্যন্ত নতুন এইমস খুলেছি, যাতে লোকেদের চিকিৎসার জন্য ১০০ কিলোমিটার দূরে যেতে না হয়," মোদী নিজের বক্তব্যে দাবি করেছিলেন।
মোদীর এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং অনেক বিরোধী নেতা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে মোদীর বক্তব্যের এক অংশ শেয়ার করে হিন্দিতে লেখেন, "আজ আবার প্রধানমন্ত্রী মোদী মিথ্যা বলে ধরা পড়েছেন। আজ বলেছেন দ্বারভাঙ্গায় এইমস খোলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারভাঙ্গায় এইমস নেই। বিহার সরকার বিনামূল্যে ১৫১ একর জমি সংগ্রহ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, কিন্তু কেন্দ্র এখনও অনুমোদন দেয়নি। কেন প্রধানমন্ত্রী এত মিথ্যা কথা বলেন?"
বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবও মোদীর দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন,এবং প্রস্তাবিত জমি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যাখ্যানের বিষয় শ্রীনাতের বক্তব্যে সম্মতি প্রকাশ করেন। মাণ্ডব্যর কাছে পাঠানো ২০২৩ সালের ২২ জুনের এক চিঠিও তেজস্বী প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দ্বারভাঙ্গায় এইমস নির্মাণের জন্য জমির প্লট পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন।
তথ্য যাচাই
বুম এইমসের নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য অনুসন্ধান করে ২২ জুলাই, ২০২২ তারিখে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পায় যেখানে সারা দেশে এইমস ক্যাম্পাস স্থাপনের বিষয়ে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, "রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ জমি হস্তান্তর করেনি।" এছাড়াও, বলা হয়েছে সমাপ্তির সময়সীমা হবে "রাজ্য সরকার কর্তৃক দায়বদ্ধ জমি হস্তান্তরের তারিখ থেকে ৪৮ মাস"।
এছাড়াও তেজস্বী যাদবের টুইট আরও স্পষ্ট করে জানায় 'দায়বদ্ধ জমি' হস্তান্তর এখনও হয়নি, কারণ রাজ্য সরকারের সুপারিশের ১৫১ একর প্লট কেন্দ্র অনুমোদন করেনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য নিজেই যাদবের টুইটের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে দ্বারভাঙ্গা ক্যাম্পাসের জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়ে কিছু তথ্য প্রদান করেন।
মাণ্ডব্যর মতে, মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখে এইমস নির্মাণের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল এবং বিহার সরকার ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর উন্নয়নের জন্য প্রথম জমি বরাদ্দ করে। সেই সময় বিহারে দায়িত্বে ছিল বিজেপি এবং জনতা দলের জোট সরকার।
মাণ্ডব্য এও উল্লেখ করেন, জেডিইউ বিজেপির সাথে জোট ভেঙে যাদবের (যিনি তখন উপমুখমন্ত্রী হয়েছিলেন) নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাথে একটি নতুন সরকার গঠন করার পরে সরকার পরিবর্তন হয়, যার পরে নতুন একটি জমির প্রস্তাব করা হয় ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখে।
তিনি তখন বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এইমস নির্মাণের জন্য জমির নতুন জায়গাটি অনুপযুক্ত বলে মনে করে এবং ২০২৩ সালের ২৬ মে তারিখে প্ৰস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে।
মাণ্ডব্য জায়গা পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং জমি বরাদ্দে বিলম্বের জন্য নতুন সরকারকে দায়ী করেন। মাণ্ডব্যর পোস্ট করা সম্পূর্ণ টুইটারে বক্তব্য পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিজেপি নেতা এবং বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীও মাণ্ডব্যর বক্তব্যকে সমর্থন করেন এবং দ্বারভাঙ্গায় এইমস ক্যাম্পাস নির্মাণ না হওয়ার জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে দায়ী করেন।
এই দুই নেতার বিবৃতি এবং লিখিত চিঠির ভিত্তিতে দ্বারভাঙ্গায় এইমসের জন্য জায়গা নিয়ে সিদ্ধান্তের গাফিলতি দেখা যায় এবং এও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে দ্বারভাঙ্গায় এইমস খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দাবি মিথ্যা।