সিনেমার দৃশ্য ছড়াল পঞ্জশিরে স্থানীয়দের উপর তালিবানি জুলুম বলে
বুম দেখে ভিডিওটিতে আফগানিস্তানে তালিবানদের অপরাধের ঘটনা নিয়ে তৈরি একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
আফগানিস্তান নিয়ে তোলা একটি সিনেমা (Movie), যেখানে কিছু সশস্ত্র লোক এক দল মানুষকে ঠেলেঠুলে পণ্যবাহী কন্টেনারের ভিতর পুরে দিচ্ছে, সেই দৃশ্যকে কাবুল দখলের পর পঞ্জশির উপত্যকায় (Panjshir) তালিবানের (Taliban) নির্যাতন চালানোর দৃশ্য বলে প্রচার করা হচ্ছে।
বুম দেখলো, ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি ২০১৭ সালে অর্থাৎ আফগানিস্তানে বর্তমান হিংসা ও সংঘাতের অনেক আগেই ইউটিউবে আপলোড করা একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য।
তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর যে সরকার গঠন করে, তাতে নারীদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই, গোঁড়া কট্টরপন্থীরাই সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়ুক্ত হয়েছে এবং দেশটিকেও একটি ইসলামি আমিরশাহি রূপে আখ্যাত করা হয়েছেl পঞ্জশির উপত্যকা দীর্ঘ সময় তালিবানকে প্রতিরোধ করেছিল, কিন্তু গণমাধ্যমের রিপোর্ট, এই স্থানটিতেও অবশেষে তালিবানি আধিপত্য কায়েম হয়েছে। পঞ্জশির থেকে পলাতক প্রবীণ জনজাতীয় নেতাদের উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, তালিবান গোটা এলাকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে, বাসিন্দাদের খাবার-দাবার দিচ্ছে না এবং কোনও বিচার ছাড়াই শাস্তি দেওয়ার নামে লোক মারছে। রয়টার্স জানাচ্ছে, তালিবান-বিরোধী এক নেতার পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, পঞ্জশিরের দখল নেওয়ার পর তালিবান তাঁকেও হত্যা করেছে।
আর যখন পঞ্জশির উপত্যকা থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অভিযোগ ভেসে আসছে, ঠিক তখনই বাস্তব নয় এমন একটি সিনেমার খণ্ডদৃশ্যের ক্লিপিং ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, তালিবান নাকি পঞ্জশিরের বাসিন্দা আফগানদের ধরে-ধরে মাল-পাচারের কন্টেনারে ভরে তাদের না খেতে দিয়ে মারছে। মেরে ফেলার আগে তালিবান তাদের নির্যাতনও করছে বলে দাবি করা হচ্ছে, "পঞ্জশিরের শত-শত আফগানকে কন্টেনারের ভিতর পুরে না খেতে দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের মারধরও করা হচ্ছে যথেচ্ছ, যতক্ষণ না তারা মরে যাচ্ছে। অথচ এই নিরীহ মানুষগুলো কেউই ইসলামের শত্রু নয়, বরং তালিবানের তুলনায় তারা অনেক বেশি ইসলামে অনুগত।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি অর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার ৮.৩% কমেছে: ২০২০ এনসিআরবি তথ্য
তথ্য যাচাই
বুম এই ভিডিও শেয়ারকারী টুইটগুলির জবাবের জায়গা পরীক্ষা করে দেখেছে, ভিডিওটি ইউ-টিউবে আপলোড করা একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য, যার নাম "দ্য তালিবান/ দ্য ক্লাউডস", ইউটিউবে যে-কেউ তা দেখতে পারে।
একটি জবাবে একটা স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছে, যাতে আফগানিস্তান নিয়ে ওই ফিল্মটির নামও পড়া যাচ্ছেl আমরা সেই নাম সন্ধান করে দেখলাম ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ডেনিশ অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি চ্যানেলে ছবিটি আপলোড হয়েছিল।
তাতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দৃশ্যটি ৪৭ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ৪৮ মিনিটের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নিচে ভিডিওটি দেখুন।
ইউটিউবে দেওয়া ডেনিস অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে ফিল্মটির নাম 'আভারা' এবং 'তালিবান' নামেও সেটি পরিচিত। এটির লেখক ও পরিচালক সিদ্দিক আবেদি। ফিল্মটির গল্প হিসাবে ইউটিউব যা জানিয়েছে, তা হল, "ফিল্মটিতে কাবুল থেকে আমু দরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত আফগানিস্তান সীমান্তে তালিবানের বিভিন্ন অপরাধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি তালিবান আধিপত্যের অন্ধকার পর্যায়ে তাদের অত্যাচার, সন্ত্রাস ও অপরাধের বিবরণ দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছে।" বিবরণীতে একই পরিচালকের অন্যান্য কয়েকটি ছবির নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন "প্রিন্টার", "হোমলেসনেস", "রেবেলিয়ন" ইত্যাদি।
ওয়াশিংটন পোস্টে পঞ্জশির থেকে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসা এক জনজাতীয় নেতাকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, তালিবান ওই উপত্যকা দখলে নেওয়ার পর বেশ কিছু স্থানীয় লোককে হত্যা করেছে। "এই সপ্তাহেই তালিবান জঙ্গিরা পঞ্জশির অধিকার করে নিয়েছে। যখন ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছে, তখন অসামরিক নাগরিকরা যারা পারে, তারাই প্রদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, কেননা ইতিমধ্যেই শিশু সহ অন্তত ৮ জন অসামরিক নাগরিক তালিবানের হাতে খুন হয়েছে। ওই নেতাই জানিয়েছেন যে, তালিবান জঙ্গিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের খাবার-দাবার থেকে বঞ্চিত করছে এবং কোনও বিচার ছাড়াই লোকেদের হত্যা করছে।"
আরও পড়ুন: ভুয়ো খবর ছড়ানোর ঘটনা বৃদ্ধি ২১৪%: ২০২০ এনসিআরবি রিপোর্ট