Covid-19 Vaccine নেওয়ার পর, মার্কিন এক নার্সের 'বেলস পালসি' হয়নি
টেনেসির স্বাস্থ্য দফতরের নথিতে খালিলা মিচেল (Khalilah Mitchell) নামের কোনও নার্স নেই।
সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছ, যেটিতে এক মহিলা নিজেকে একজন মার্কিন নার্স (Nurse USA) হিসেবে দাবি করে বলছেন যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন (Covid 19 vaccine) নেওয়ার পর উনি 'বেলস পালসি' (Bell's Pallsy) রোগে আক্রান্ত হন। তবে উনি কোথায় চাকরি করেন বা কোন ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন, সেই তথ্য দেননি।
বুম বেশ কিছু রিপোর্ট দেখে যেখানে বলা হয় যে, খালিলা মিচেল নামের যে মহিলা নিজেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি ন্যাশভিলের (Tennesse Nashvile) একজন নার্স বলে দাবি করেছেন, তিনি কোনও স্বাস্থ্য কর্মীই নন। এবং কোনও ভ্যাকসিন উনি নেননি। বেলস পালসি হল ফাইজার-এর ভ্যাকসিনের একটি পরিচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিন্তু টেনেসিতে সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার কোনও তথ্য নেই।
হোয়াটসঅ্যাপে তিনটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। সেটিতে পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে।
সেই ভিডিওটিতে একটি আধো অন্ধকার ঘরে এক মাস্ক-পরা মহিলাকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এক সময় উনি মাস্ক খুলে ফেলে নিজের মুখের এক পাশের ঝুলে-পড়া অংশটি দেখান। আর দবি করেন যে, উনি বেলস পালসিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
"আমি টেনেসির ন্যাশভিলের একজন নথিভুক্ত নার্স। আমার নাম খালিলা মিচেল। আমি কোভিড ভ্যাকসিন-১৯ সম্পর্কে সকলকে জানাতে চাই। আমি সম্প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিই। ইঞ্জেকশনটি নেওয়ার পর আমার ঠিকই লাগছিল। কিন্তু তিন দিন পর, আমার মুখে অসুবিধে হতে শুরু করায় আমি ডাক্তার দেখাই। আমার মুখের পুরো বাম দিকটাতেই অসুবিধে হয়। আমার এখন বেলস পালসি হয়েছে। প্লিজ আমেরিকা, ওরা আমাদের কথা ভাবে না। এই ভ্যাকসিন নেবেন না," উনি ভিডিওতে এ কথা বলেন।
সত্যতা যাচাই করার জন্য, ভিডিওটি তিনটি অংশে বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে আসে।
ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে বেলস পালসিতে আক্রান্ত হয়েছেন নার্স।"
আরও পড়ুন: না, এই ছবিতে জর্জ ফ্লয়েড এর মেয়ের কাছে জো বাইডেন ক্ষমা চাইছেন না
তথ্য যাচাই
খালিলা মিচেল নামের ওই মহিলা নিজেকে একজন নার্স হিসেবে দাবি করছেন। বলছেন, উনি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এবং সকলকে ওই ভ্যাকসিন না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। কিন্তু তিনি কোথায় কাজ করেন ও কোন ভাকসিনটি নিয়েছেন, সে বিষয়ে কিছুই বলেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডেরনা আরএনএ ভ্যাকসিন দুটোই অনুমোদন করেছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস টেনেসির স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে ওই মহিলার ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির তথ্য জানতে চায়। ওই দফতরের মুখপাত্র শেলি ওয়াকার এপি-কে ই-মেলে জানান, "ওই নামের কোনও স্বাস্থ্য কর্মী আমাদের কাছে নথিভুক্ত করা নেই।"
তথ্য যাচাই করার ওয়েবসাইট 'লিড স্টোরিজ', বাকি ৪৯ রাজ্য ও কলম্বিয়া জেলার তথ্য অনুসন্ধান করে। কিন্তু খালিলা মিচেল নামের কোনও নার্সের তথ্য পাওয়া যায় না।
বুম সোশাল মিডিয়াতেও ওই ব্যক্তির সন্ধান করে। ন্যাশভিল থেকে ওই নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইলের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সেটি ২০১৯ পর্যন্ত সচল ছিল। ওই প্রোফাইল থেকে জানা যায় যে, ওই মহিলা ন্যাশভিলের স্থানীয় বেকারি রাল্ফ লরেন-এ ক্যাশিয়ারের কাজ করতেন।
ভিডিওটি সকলকে ফাইজার-বায়োএনটেক এম আরএনএ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলছে। কারণ, ওই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর চার ব্যক্তির মধ্যে বেলস পালসি উপসর্গ দেখা দেয়। ওই অসুখে মুখের একটা অংশ ঝুলে পড়ে। কিন্তু চিকিৎসা করে তা আবার সারিয়ে তোলা যায়। তবে ওই চার ব্যক্তি ছাড়া ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আর কারও শরীরে বেলস পালসি দেখা দেওয়ার কথা জানা যায়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশন জানিয়েছে যে, ভ্যাকসিন ও বেলস পালসির মধ্যে কোনও কার্য-কারণ সম্পর্ক নেই। তবে বেলস পালসি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখার কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তথ্য যাচাই: ভারতে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর কেউ অসুস্থ্য হয়নি?