বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে কোভিড রোগীকে শ্বাসরোধ বলে ছড়াল পুরনো ভিডিও
বুম দেখে রোগীকে নিগ্রহ করার ভাইরাল ভিডিওটি পুরনো ও পরস্পর সম্পর্কহীন কিছু ক্লিপ একসঙ্গে জুড়ে তৈরি করা হয়েছে।
একটি ভাইরাল ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) একটি হাসপাতালের কর্মীরা কোভিড-১৯ (COVID19) আক্রান্ত রোগীদের মেরে ফেলছেন। এই ভিডিওটি আসলে ভুয়ো এবং কিছু পুরনো এবং পরস্পর সম্পর্কহীন ক্লিপ একসঙ্গে জুড়ে এটি তৈরি করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপের শুরুতেই এক রোগীর মেয়েকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করছেন যে, বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে সাত জন রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে।
ওই মহিলার দাবিকে সঠিক প্রমাণ করতে দুটি সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত ক্লিপ একসঙ্গে জুড়ে ভিডিওতে দেখানো হয়েছে। এই ক্লিপদুটির একটিতে এক বয়স্ক রোগীর উপর হাসপাতালের বেডে এক ব্যক্তিকে চড়াও হতে দেখা যাচ্ছে, আর অন্য ক্লিপে হাসপাতালের পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে এক রোগীর উপর আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটির শুরুতে ওই শোকাহত মহিলা বলছেন, "একজন রোগী মারা গেলে হাসপাতালকে আট লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সাতজন করে রোগীকে মেরে ফেলা হচ্ছে, তাঁদের খুন করা হচ্ছে। তাঁরা স্বাভাবিকভাবে মারা যাচ্ছেন না, তাঁদের মেরে ফেলা হচ্ছে। দয়া করে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দয়া করে মানুষগুলোকে বাঁচান! আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি।"
তারপর ভিডিওটিতে রোগীদের উপর আক্রমণ হতে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে কন্নড় ভাষায় লেখা, "দেখুন, করোনার নামে কী ভাবে রোগীদের মেরে ফেলা হচ্ছে।"
কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে দাঁড়িয়ে যখন ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখনই এই ক্লিপটি ভাইরাল হল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ কমাতে বেশিরভাগ রাজ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
হাসপাতালে রোগীদের মেরে ফেলা হচ্ছে, এই একই বক্তব্যের সঙ্গে বিভিন্ন হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপেও এই একই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নীচে দেখতে পাবেন। সতর্ক করা হচ্ছে যে, এই ভিডিওতে অস্বস্তিকর দৃশ্য রয়েছে।
আরও পড়ুন : আবার ভুয়ো খবর: করোনা ব্যাক্টেরিয়া, ৫ জি বিকিরণ ও ব্যাথার ওষুধে সারে
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে, নিউজফার্স্ট কন্নড়ের বুলেটিনে দুটি পরস্পর সম্পর্কহীন ভিডিও একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বুলেটিনে দেখা যাচ্ছে যে, এক মহিলা তাঁর বাবার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বুলেটিনটি ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতাল থেকে নিউজফার্স্ট কন্নড় চ্যানেলে দেখানো হয়। নীচে বুলেটিনটি দেখতে পাবেন।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা এক রোগীর উপর এক ব্যক্তির আক্রমণ করার ভিডিও
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে ২০২০ সালের মে মাসে। এই ভিডিওতে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা এক রোগীর উপর চড়াও হতে দেখা যায়। বুম দেখে যে, ২০২০ সালের ১৩ মে সত্যের পথে নামে একটি ফেসবুক পেজ একই ঘটনার অন্য দুটি ভিডিওর সঙ্গে এই ক্লিপটিও পোস্ট করে। এখানে পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে পাবেন।
ক্যাপশন অনুসারে ঘটনাটি ব্লক এ'র মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘটে। আমরা ওই ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাদের জানানো হয় যে, ক্লিপটি ত্রিপুরার আগরতলার জিবি হাসপাতালের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি তাদের হাসপাতালের নয় জানিয়ে ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন।যদিও ভিডিওটি কোথাকার, তা ঠিক পরিষ্কার নয়, তবে ২০২০ সালের মে মাস থেকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, ঘটনাটি বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ঘটেনি।
এক রোগীর উপর হাসপাতালের কর্মীর আক্রমণের সিসিটিভি ফুটেজ
দ্বিতীয় ক্লিপে যে সিসিটিভি ফুটেজে এক রোগীর উপর এক হাসপাতাল কর্মীকে আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে, সেটি ২০২০ সালের অগস্ট মাসের। আমরা দেখতে পাই যে, ক্লিপটির উপরে বাঁ দিকে পাতিয়লা প্লেস লাইন লেখা আছে। দ্য ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে পাতিয়ালার এক হাসপাতাল কর্মীর এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগীর উপর অত্যাচারের ঘটনা জানা যায়। ২০২০ সালের ২৪ অগস্ট ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৩ এবং ৩৪২ ধারায় এই বেসরকারি হাসপাতালের দুই কর্মীকে জেলা পুলিশ গ্রেফতার করে।
কর্ণাটক পুলিশের তথ্য যাচাই ওয়েবসাইট এই একই ভাইরাল ভিডিওর তথ্য যাচাই করে। ভিডিওটি মহানায়ক_কন্নড় নামে একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট প্রথম শেয়ার করা হয়। এখন এই পোস্টটি মুছে দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টের অ্যাডমিনও জানিয়েছেন যে, ভিডিওটি কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য এডিট করেছে।
আরও পড়ুন : অক্সিজেন প্ল্যান্টের জন্য রাজ্যগুলি কী পিএম কেয়ার্স থেকে টাকা পেয়েছিল?