বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার সঙ্গে জড়াল ধর্ষণ ও খুন হওয়া নির্যাতিতার ছবি
বুম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জনান, দু'জন নির্মানকর্মীর লালসার শিকার হয় মেয়েটি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা (Pingla) অঞ্চলে ধর্ষণের পরে নিহত এক তরুণীর ছবি ভাইরাল হয়েছে। অনেক নেটিজেনই দাবি করছেন যে, নিজের রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণেই খুন হতে হল তরুণীকে। যদিও, তাঁর বাড়িতে কাজ করতে আসা দুই রাজমিস্ত্রির হাতেই এই তরুণী নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
বুম পিংলা থানার অফিসার-ইন-চার্জ শঙ্খ চ্যাটার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, এই ঘটনার যে আখ্যান ভাইরাল হয়েছে, তা একেবারেই ঠিক নয়। আমরা নিহতের পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি জানান যে, ওই তরুণী কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি আরও বলেন যে, সোশাল মিডিয়ায় এটিকে মিথ্যে ভাবে রাজনৈতিক খুন বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জয় লাভ করার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের (poll violence) খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় দু'দিনে ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘটা হিংসার ঘটনায় অবিলম্বে লাগাম টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ৪ মে জরুরি বৈঠক করেন।
আরও পড়ুন: পিস্তল, তরোয়াল নিয়ে তৃণমূলের বিজয় উৎসব বলে ভাইরাল বিকৃত ভিডিও ক্লিপ
নেটিজেনদের দাবি: 'টিএমসির গুন্ডারা' ওই তরুণীকে খুন করেছে
বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ সমেত বহু নেটিজেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর ছবি টুইট করেছেন এবং উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাথরসে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়।
সৌমিত্র ওই কোলাজ ছবিটির সঙ্গে ক্যাপশন দেন, "ক্ষমা করে দিস রে বোন। হাথরসে রস ছিল (রাজনীতির)। মেদিনীপুরে নেই? কোথায় কোলকাতার এলিট ক্লাস? আপনাদের মোমবাতিগুলো কোথায়? মেদিনীপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী **** কে গতকাল কিছু দুষ্কৃতি মিলে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করেছে"।
নোট: ভারতীয় আইনে কোনও ধর্ষিতার পরিচয় প্রকাশ করা নিষিদ্ধ
ভাইরাল হওয়া টুইটে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, ওই তরুণী বিজেপি সমর্থক ছিলেন এবং তৃণমূলের ছয় দুষ্কৃতী তাঁকে খুন করে এবং তাঁর বাড়ির সামনে দেহ ঝুলিয়ে দেয়।
নিহতের ছবিও ফেসবুকে ঘুরছে এবং কিছু নেটিজেন অভিযোগ করেছেন যে দুষ্কৃতীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের।
মেদিনীপুর পুলিশ ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হল যে, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই
বুম নিহতের কাকার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তিনি জানান যে, ৩ মে ঘটনাটি ঘটে। তিনি আরও জানান যে, বাড়ির একটি মাটির ঘরে রাজমিস্ত্রিরা কাজ করছিল। সেখানেই ওই তরুণীর উপর অত্যাচার করা হয়। নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করে যে, দুই রাজমিস্ত্রি যখন ওই তরুণীর উপর আক্রমণ করে, তখন অভিযুক্ত এক মহিলা তাদের পাহারা দিচ্ছিল।
নির্যাতিতার কাকা বুমকে বলেন, "আমার ভাইঝি বিজেপি কর্মী ছিলেন বলে সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে যে দাবি করা হয়েছে, তা মিথ্যা। ৩ মে যেখানে মেরামতির কাজ হচ্ছিল, আমার ভাইঝি সেখানে গিয়েছিল। তখন তাকে ওই মহিলা বলে যে, ভিতরে সাপ থাকতে পারে। তার পরই তাকে ভিতরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং যে দু'জন শ্রমিককে মেরামতের কাজে লাগানো হয়েছিল, তারা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। পরে মাটির বাড়ির পেছনে উঠোনে তাঁর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।" ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা ৪ মে ডেবরা সবং রোড অবরোধ করে। ছবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে মহিলার যে ছবি দেখা যাচ্ছে, তা ওই দিনের প্রতিবাদের।
বুম পিংলা থানার অফিসার ইনচার্জ শঙ্খ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, "এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। ওই পরিবার তাঁদের একটি মাটির ঘরে মেরামতির কাজ করানোর জন্য দু'জন রাজমিস্ত্রিকে কাজে লাগিয়েছিলেন। ওই দুই রাজমিস্ত্রি তরুণীর উপর অত্যাচার করে এবং তাঁকে খুন করে। এই ঘটনায় জড়িত থাকায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।"
এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক বিষয় জড়িয়ে থাকার ব্যাপারটিও তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "নির্যাতিতার বাবার করা এফআইআরের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।" বেলদার বিজয় মুর্মু (মেদিনীপুর), ঝাড়খণ্ডের ছটু মুন্ডা এবং সবং-এর তপতী পাত্র নামে তিনজনকে অভিযুক্ত হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছে। চ্যাটার্জী জানান, "বিজয় এবং ছটু মুন্ডা রাজমিস্ত্রি। তপতী পাত্র মেরামতির জায়গায় সাহায্যকারী হিসাবে কাজ করছিল। তিন অভিযুক্তের কেউই কোনও ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়।"
আরও পড়ুন: পিস্তল, তরোয়াল নিয়ে তৃণমূলের বিজয় উৎসব বলে ভাইরাল বিকৃত ভিডিও ক্লিপ