হায়দরাবাদে পুলিশের গণেশের মূর্তি সরানোর ভিডিও কেরলের বলে ভাইরাল
বুমকে স্থানীয় পুলিশ জানায়, পুরনো হায়দরাবাদ শহরে রক্ষাপুরম সোসাইটির এক বিতর্কিত জমি থেকে মূর্তিটি সরানো হয়।
একটি ভিডিওতে কয়েকজন পুলিশকে কিছু লোক সরিয়ে একটি গণেশের মূর্তি (Ganesh Idol) নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় এই বলে ভাইরাল হয়েছে যে, ভিডিওটি কেরলে (Kerala) তোলা।
বুম দেখে, ভিডিওটি তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে তোলা। স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায় যে, পুরনো হায়দরাবাদ শহরের রক্ষাপুরম সোসাইটির একটি বিতর্কিত জমি থেকে মূর্তিটি সরানো হয়।
কিছু লোককে একটি গণেশের মূর্তি নিয়ে একটি খোলা জায়গায় বসে থাকতে দেখা যায়। এবং সেখানে কয়েকজন পুলিশকর্মীকেও ঢুকতে দেখা যায় ভিডিওটিতে। একজন পুলিশ মূর্তিটি নিয়ে চলে যান, আর বাকিরা সমবেত ব্যক্তিদের জোর করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। গণেশ পুজোর পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়।
ভাইরাল ভিডিওটি এখানে ও এখানে দেখুন। পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ভাইরাল পোস্টটির হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়, "গণেশ উৎসবের সময়, কেরলে এই হল হিন্দুদের অবস্থা। হিন্দুস্থানে হিন্দুরা তাঁদের উৎসবও পালন করতে পারেন না।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: गणेशोत्सव में केरल में ये हालात हो गए है हिन्दुओ के हिन्दू अपना त्योहार भी नही मना सकता है अपने हिन्दुस्थान में)
একাধিক সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে, একই ধরনের মিথ্যে ক্যাপশন সমেত, ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য, জনৈক পাঠক সেটি বুমের হেল্পলাইনে পাঠান।
আরও পড়ুন: ফের বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল মধ্যপ্রদেশ সরকারের জবরদখল উচ্ছেদের ঘটনা
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখে। বোঝা যায় যে, পেছনে লোকজন তেলুগু ভাষায় কথা বলছেন। সেই সূত্র ধরে, আমরা কয়েকটি কি-ওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করি। তার ফলে, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১-এ ক্রান্তি মুদিরাজের আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওটির একটি বড় সংস্করণ আমাদের সামনে আসে।
ওই পোস্টটিতে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "গতকালে, তেলেঙ্গানা রাজ্যের হুপ্পুগুডায় পুরনো হায়দরাবাদ শহরে, রক্ষাপুরম সোসাইটির জমি থেকে গণেশ মহারাজের মূর্তি সরাচ্ছেন অতি সক্রিয় পুলিশ কর্তা।"
আরও কিছু ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। সেগুলির ক্যাপশনে দাবি করা হয় যে, ভিডিওটি পুরনো হায়দরাবাদ শহরের রক্ষাপুরম সোসাইটির। এখানে ক্লিক করুন।
ওই ঘটনা সম্পর্কে আরও জানতে, বুম সন্তোষনগর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
সেক্টর-৩'র সাব-ইন্সপেক্টর এ রাজেন্দ্র বুমকে বলেন, ঘটনাটি ১০ সেপ্টেম্বর ঘটে। "আসলে, ওটা একটি বিতর্কিত জমি – একটি পার্ক। এবং দু'টি গোষ্ঠী জমিটি তাদের বলে দাবি করছিল। আমরা স্থানীয় মানুষদের মূর্তিটি সরিয়ে নিতে বলি। এবং তাঁরা সরিয়েও নেন। কিন্তু পরে, কিছু রাজনৈতিক কর্মী এসে সেটি জোর করে পুনরায় স্থাপন করার চেষ্টা করে। তাই আমরা তাদের সরিয়ে দিই। এখন সেখানে শান্তি বজায় আছে," বলেন রাজেন্দ্র। উনি আরও জানান যে, কিছু লোককে হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও রকম সাম্প্রদায়িকতার সম্পর্ক ওই পুলিশ আধিকারিক অস্বীকার করেন।
ভাগ্যনগর গণেশ উৎসব সমিতির দক্ষিণাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি রূপরাজের সঙ্গেও যোগাযোগ করে বুম। উনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। রূপরাজ বুমকে বলেন, যে জমিতে গণেশের মূর্তি বসানো হচ্ছিল, সেটি একটি সোসাইটির পার্কের জমি। "পুলিশ মূর্তি সরাতে এলে, আমরা বাধা দিই। তখন ১০০-২০০ পুলিশ এসে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। আমাদের এক থানা থেকে আরেক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শেষমেশ রাত ১১টায় আমরা ছাড়া পাই," রূপরাজ বুমকে বলেন।
আমরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওটি রূপরাজকে পাঠাই। উনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে, ভিডিওতে যে ঘটনাটি দেখানো হয়েছে, সেটি রক্ষাপুরমেই ঘটেছিল।
আরও পড়ুন: মায়ানমারে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ বলে ছড়াল চিনা নাটকের ভিডিও