ভুয়ো দাবি: উত্তরপ্রদেশের ছাত্রী ও পঞ্চায়েত প্রধান বৈশালী যাদব গ্রেফতার
বুম স্থানীয় পুলিশ এবং সদ্য ইউক্রেন ফেরত বৈশালী যাদবের বাবা, দু'জনের সঙ্গেই কথা বলে জেনেছে ভাইরাল দাবি সত্যি নয়।
পিছনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশদের সামনে একটি মেয়ে মেঝেতে বসে রয়েছে, এমন একটি ছবি শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে, মেয়েটি নাকি উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির (Samajwadi Party) এক নেতার কন্যা বৈশালী যাদব (Vaishali Yadav), যে ইউক্রেন থেকে ভারতে ফেরার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়ে এই ভিডিওটি রেকর্ড করেছে।
বৈশালীর তৈরি এই ভিডিওটি সম্প্রতি সংবাদের শিরোনামে এসেছে, যেখানে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বৈশালীকে তাঁর বাবা ভিডিওটি তৈরি করিয়েছে, যে জন্য তাঁকে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ নাকি গ্রেফতারও করেছে।
বুম বৈশালীর বাবার সঙ্গে কথা বলে জেনেছে যে, তিনি সত্যি-সত্যিই যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনে আটকে পড়েছিলেন এবং ৩ মার্চ তিনি স্বদেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এবং উত্তরপ্রদেশের পুলিশ উভয়েই ভাইরাল হওয়া এই ভুয়ো দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন এবং আমরা এটাও দেখেছি যে, ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে, সে বৈশালীই নয়।
রাশিয়ার সঙ্গে বর্তমানে চলতে থাকা যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকে পড়া হাজার-হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী দেশে ফিরে আসতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। ৪ মার্চ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এ পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ভারতীয় ছাত্রকে দেশে ফিরিয়ে আনা গেছে। এই প্রেক্ষাপটেই এই ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে।
একটি ফেসবুক পোস্টে ছবিটি শেয়ার করে হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সবচেয়ে দুরন্ত! হরদোই-এর সমাজবাদী পার্টির গ্রাম-প্রধানের মেয়ে বৈশালী যাদব ইউক্রেনে আটকে পড়া নিয়ে একটা ভুয়ো ভিডিও-আবেদন বানানোর পর পুলিশ তাকে পত্রপাঠ গ্রেফতার করেছে।"
একই ধরনের ক্যাপশন দিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
এই ভিডিওটি টুইটারেও ভাইরাল হয়েছে।
এর আগে বৈশালী যাদবের একটি ভিডিও ভুয়ো ক্যাপশন দিয়ে ভাইরাল হয়েছিল যে, তিনি নাকি মোদি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে বাড়িতে বসেই ভিডিওটি বানিয়েছিল।
দিল্লির বিজেপি মিডিয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দল তাঁর যাচাই-করা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন দিয়েছিলেন, "সমাজবাদী পার্টির নেতা মহেন্দ্র যাদবের মেয়ে বৈশালী যাদব বাড়িতে বসেই তাঁর বাবার নির্দেশে মোদি সরকারকে হেয় করতে এই ভিডিও বানিয়েছিল। লাল টুপি মানেই লাল সতর্কতা!"
ডেইলিআপডেটস৬৯ হ্যান্ডেল থেকেও একই ভিডিও টুইট করে ক্যাপশন দেওয়া হয়, "এই ভিডিওটি বৈশালী যাদবের তোলা, যে ইউক্রেনের এক ডাক্তারি পড়ুয়া এবং ভারত সরকারের কাছে কোনও রকম সাহায্য না পেয়ে সে ইউক্রেনে আটকে রয়েছেl উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দেশের ভাবমূর্তি কলংকিত করার দায়ে হরদোইয়ে তাকে আটক করেছে। এখন সে বলছে, সমাজবাদী পার্টির নেতা তার বাবা মহেন্দ্র যাদবের কথাতেই নাকি সে এটা করেছেl"
বৈশালী যাদব এবং সমাজবাদী পার্টির যোগসূত্র
বুম বৈশালী যাদব বিষয়ে খোঁজ করে কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদন পেয়েছে।
২ মার্চ হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ভিডিওর মেয়েটিকে বৈশালী যাদব রূপেই শনাক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে পাঠানো বৈশালীর এই ভিডিওটি তাকে বেশ সমস্যায় ফেলে দিয়েছে, যেহেতু সে হরদোই জেলার টেরা পুরসৈলি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধানও বটে। একই সঙ্গে সে ইউক্রেনে তৃতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীও বটে।
বৈশালীর বাবা মহেন্দ্র যাদব সমাজবাদী পার্টির নেতা এবং প্রাক্তন ব্লক-প্রমুখও। তিনি হিন্দুস্তান টাইমস-কে জানান, গত বছর যখন বৈশালী হরদোইতে এসেছিল, তখনই তিনি গ্রাম-প্রধান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও জয়লাভ করেন। সে এমনকী একটি গ্রাম-সভার বৈঠকেও হাজির থেকেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হরদোই প্রশাসন বৈশালীর নামে একটি শো-কজ নোটিশও জারি করেছে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর কাজকর্ম বিষয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশালী যেহেতু একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তাই পঞ্চায়েতি রাজ আইন অনুসারে তাঁর বিষয়ে পদ্ধতিগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভিয়েনার প্রতিবাদের ভিডিও ছড়াল ইউক্রেনীয়দের ভেকধরা মৃতদেহ বলে
বৈশালী যাদবের গ্রেফতারি: তথ্য যাচাই
বুম হরদোই জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেl এস-পি-র দফতর থেকে জানানো হয়েছে—"বৈশালীকে গ্রেফতারের খবরটি ভুয়ো। যখন শেষ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন বৈশালী ইউক্রেনে ছিলেন। বৈশালীর গ্রেফতার হওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।"
হরদোই জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ দ্বিবেদীও এক বিবৃতিতে বৈশালীর গ্রেফতারির খবর ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন।
বুম এর পর বৈশালীর বাবা মহেন্দ্র যাদবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও মেয়ের গ্রেফতারির খবর ভুয়ো বলে নস্যাৎ করে দেন। জানান—বৈশালী গত ৩ মার্চ নিরাপদে ইউক্রেন থেকে ভারতের বাড়িতে এসে পৌঁছেছেন এবং ভাইরাল পোস্টগুলিতে যেমনটা দাবি করা হচ্ছে, তেমন কোনও পুলিশি ব্যবস্থা তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি। বৈশালী যে টেরা পুরসৈলি গ্রামের নির্বাচিত গ্রাম-প্রধান, সে কথাও তিনি জানান আমাদের।
ভাইরাল ছবি
বুম ভাইরাল এই ছবিটির খোঁজখবর করে হিন্দি দৈনিক অমর উজালার একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি খুঁজে পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট ছবিতে মেয়েটিকে কমলা চৌধুরী বলে শনাক্ত করা হয়েছে, যাকে রাজস্থানের নগৌর-এ অস্ত্র আইন এবং তথ্য-প্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে।
টুইটারে খোঁজ-খবর করেও বুম নগৌর পুলিশের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে ওই ছবিই পোস্ট হতে দেখেছে।
অভিযুক্ত মহিলা একটি আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নিজে গুলি চালানোর ভিডিও আপলোড করেছিল।
আরও পড়ুন: ২০১৮ তে মার্কিন নৌ-সেনার প্রথমবার পুত্রের মুখ দেখা ছড়াল ইউক্রেনের বলে