কুম্ভ মেলায় সাধকের অগ্নিস্নান বলে ছড়াল ২০০৭ সালের অসম্পর্কিত তথ্যচিত্র
বুম দেখে ভাইরাল ক্লিপ তামিল নাড়ুর রামভাউ স্বামীর উপর তৈরি তথ্যচিত্র "দ্য ফায়ার যোগী" থেকে নেওয়া ও মহাকুম্ভের সঙ্গে যুক্ত নয়।
এক সাধুর জ্বলন্ত কাঠের উপর শুয়ে থাকার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ভিডিওটি শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করেছেন সেটি ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলায় (Maha Kumbh Mela) এক সাধকের (sadhu) গঙ্গাস্নানের আগে অগ্নিস্নান (fire bath) করার দৃশ্য যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রচার করেছে।
বুম দেখে ভাইরাল দাবি ভুয়ো। ভিডিওতে তামিল নাড়ুর রামভাউ স্বামীর উপর তৈরি "দ্য ফায়ার যোগী" তথ্যচিত্রের দৃশ্য দেখা যায়। এর সাথে বিবিসি বা মহাকুম্ভ মেলার কোনও সম্পর্ক নেই।
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা চলবে। ভারতের চারটি প্রধান ধর্মীয় স্থান— প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিকে প্রতি ১২ বছর অন্তর কুম্ভ মেলা (পূর্ণ কুম্ভ) অনুষ্ঠিত হয়। শেষ কুম্ভ মেলা (অর্ধ কুম্ভ) ২০২১ সালে হরিদ্বারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২৫ সালের প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলা ১৪৪ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত মহাকুম্ভ মেলার সঙ্গে মিলে গেছে।
৩ মিনিটের ভাইরাল ভিডিওতে গেরুয়া বসন পরা এক সাধুকে দেখা যায় যিনি জ্বলন্ত কাঠের উপর শোয়া সত্ত্বেও সুস্থ থাকেন এবং আগুনে পুড়ে জাননা। ভিডিওতে ইংরেজি ভাষায় একজনকে বলতে শোনা যায় ওই সাধুকে কীভাবে তার চুল ও কাপড়ে আগুন লাগেনি জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন আগুন তার বন্ধু ও তিনি আগুনের সাথে একাত্ম হতে সক্ষম হয়েছেন। তাই, আগুন তার ক্ষতি করেনা।
ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ববহারকারি ক্যাপশনে দাবি করেছেন, "মহাকুম্ভে সিদ্ধ সাধকে গঙ্গাস্নানের আগে অগ্নিস্নান করতে দেখে বিবিসির (আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম) প্রতিবেদক হতবাক হয়ে বলেছিলেন, এটা কি করে সম্ভব? যে বিবিসি চ্যানেল হিন্দু ধর্ম সংস্কৃতিকে অন্য ধর্মের তুলনায় ছোট করে দেখাতে অভ্যস্ত, গতকাল সেই বিবিসি চ্যানেলে সারাদিন এই ঐশ্বরিক ঘটনার প্রচার করেছে!সনাতন ধর্ম জগতের শ্রেষ্ঠ ধর্ম।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম লক্ষ্য করে ভাইরাল ভিডিওতে ওই সাধুকে "রামভাউ" নামে ডাকা হয়েছে। এর থেকে ইঙ্গিত নিয়ে আমরা গুগলে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা সংবাদমাধ্যম আজ তকের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা চারটি ভিডিও পাই যার মধ্যে ভাইরাল ক্লিপের অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়। আজ তকের আপলোড করা ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায় ঘটনাটি থানজাভুরের।
২০০৯ সালের ১৮ নভেম্বরের আজ তকের ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায় থানজাভুরের রামভাউ স্বামী কর্ণাটকের গুলবার্গের দত্তাত্রেয় মন্দিরে আগুনে শুয়ে থাকার মতো এক অলৌকিক কাজ করেন। রামভাউ স্বামী অধিক সময় ধরে আগুনের উপর শুয়ে তপস্যা করেন, কিন্তু তিনি আগুনে কোনও ভাবেই আহত হননি।
তার ভক্তরা এটিকে ওই যোগীর অলৌকিক ক্ষমতা বলে মনে করেন। তবে, আজ তকের অনুষ্ঠানে কয়েকজন ডাক্তারকে এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়।
২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর টাইমস অফ ইন্ডিয়া রামভাউ স্বামীর এই ক্ষমতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সমাজের কল্যাণের জন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন ও চার ঘণ্টা আগুনের উপর ঘুমিয়েছিলেন। তবে, চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী এবং যুক্তিবিদরা এই ঘটনাকে একটি ভ্রম বলে মনে করেছেন।
ভাইরাল ভিডিওটি একটি তথ্যচিত্রের ক্লিপ
আমরা ইউটিউব চ্যানেল ইন্ডিয়া ডিভাইনে 'দ্য ফায়ার যোগী' নামক একটি তথ্যচিত্রের ২:১৬ মিনিটের একটি ট্রেলার দেখতে পাই। ট্রেলার থেকে জানা যায় ৪৭ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি এক যোগীর সম্পর্কে তৈরি যার শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল ব্যবহার করে আগুনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
আমরা অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে বিক্রির জন্য উপলব্ধ তথ্যচিত্রটির একটি ডিভিডি খুঁজে পাই। 'দ্য ফায়ার যোগী-এ স্টোরি অফ অ্যান এক্সট্রাঅর্ডিনারি জার্নি' ছবিটি পরিচালনা করেছেন মাইক ওয়াসান। এটি ২০০৭ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তি পায়।
rudrAgni108 নামক এক ইউটিউব ব্যবহারকারী ২ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে এই তথ্যচিত্রটি ইউটিউবে আপলোড করেন। এই তথ্যচিত্রের ১৮ মিনিট থেকে ৪৫ সেকেন্ড থেকে ২১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্য দেখা যায়।
দেখুন এখানে।
থানজাভুরের রামভাউ স্বামীর সত্যিই আগুনে শুয়েছিলেন কিনা তা বুম স্বাধীনভাবে যাচাই করতে সক্ষম হয়নি। তবে, আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি ভাইরাল ভিডিও 'দ্য ফায়ার যোগী' শীর্ষক তথ্যচিত্রের অংশ এবং এর সঙ্গে মহাকুম্ভ মেলার কোনও সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও, আমরা বিবিসির চ্যানেল ও ওয়েবসাইটে সম্প্রতি কুম্ভ মেলায় অগ্নিস্নান সম্পর্কিত কোনও প্রতিবেদন পায়নি।