না, মাস্ক-বিরোধী ডাঃ তরুণ কোঠারি মুম্বইয়ের নায়ার হাসপাতালের ডিন নন
বুম যাচাই করে দেখে মুম্বইয়ের বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের ডিন হলেন ডাঃ রমেশ ভারমাল, তরুন কোঠারি নন।
কোভিড-১৯ রুখতে, মাস্ক ও ভ্যাক্সিন ব্যবহারের ঘোর বিরোধী ডাঃ তরুণ কোঠারির একটি ভিডিও বার্তাসহ ভাইরাল হয়েছে। তাতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, উনি হলেন মুম্বাইয়ের নায়ার হাসপাতালের ডিন। ডাঃ কোঠারি একজন রেডিওলজিস্ট যিনি নিজের মতো প্র্যাক্টিস করেন দিল্লিতে। উনি কোভিড-১৯'র প্রভাব লঘু করে দেখিয়ে, মাস্ক-পরা ও ভ্যাক্সিন নেওয়ার বিরুদ্ধে ভিডিও দেখিয়ে চলেছেন।
মুম্বাইয়ের পৌরসভা পরিচালিত হাসপাতালটির বর্তমান ডিন হলেন ডাঃ রমেশ ভারমাল।
যাচাই করে দেখার অনুরোধ সমেত ভিডিও ও তার সঙ্গে দেওয়া বার্তাটি আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে আসে। ০১.৩৪ মিনিটের ভিডিওটিতে কোঠারিকে বলতে শোনা যায় যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেও, কেউ যেন মাস্ক না পরেন, কারণ তাহলে অক্সিজেন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ভ্যাক্সিন নেওয়ারও বিরোধিতা করেন।
ওই ভিডিওটির মাধ্যমে মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করার অভিযোগে, ক্রাইম ব্রাঞ্চ বা অপরাধ দমন শাখার সাইবার সেল, ২৩ জুলাই ২০২১, কোঠারির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ টিকার পর অ্যানাস্থেসিয়া কি ক্ষতিকর? প্রমাণ নেই মত চিকিৎসকদের
তথ্য যাচাই
একটি আগের সাক্ষাৎকারে ডাঃ কোঠারি বুমকে বলেছিলেন যে, তিনি স্বাধীনভাবে প্র্যাক্টিস করেন ও মুম্বাইয়ের বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন। তাছাড়া, উনি হলেন একজন রেডিওলজিস্ট; টিবি বিশেষজ্ঞ নন, যেমনটি দাবি করা হয়েছে ভিডিওটির ক্যাপশনে।
এ ছাড়াও, ক্যাপশনটিতে 'ডিন' ও 'নায়ার', এই দু'টি শব্দের বানান ভুল লেখা হয়েছে।
মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ও টিকা নেওয়া সম্পর্কে যে সব তত্ত্ব ইতিমধ্যেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কোঠারি সেগুলিকেই পুনঃপ্রচার করেছেন ভিডিওটিতে। কোঠারি কোভিড-১৯ কে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে, রোগটির গুরুত্ব লঘু করে দেখানোর জন্য, মার্চ ২০২০ থেকে সব ক'টি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চলেছেন।
জানুয়ারি ২০২১-এ, যে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি প্রকাশ করেন, ডাঃ কোঠারি হলেন তাঁদের একজন। তিনি এবং চিকিৎসকদের অন্য একটি দল, মাস্ক ব্যবহার ও টিকার বিরুদ্ধে জোর প্রচার করে যাচ্ছেন। তিনি এই বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন যে, অবিবাহিত মহিলা, যাঁদের স্নায়ুর সমস্যা আছে, ডায়েবিটিস আছে এবং যাঁরা মদ বা সিগারেট খান, টিকা নেওয়াটা তাঁদের পক্ষে ঠিক নয়।
বুম 'নবভারত টাইমস'-এর একটি রিপোর্ট দেখতে পায়। তাতে বলা হয়, ২৩ জুলাই, দিল্লির ক্রাইম ব্রাঞ্চের সাইবার সেল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কোঠারির বিরুদ্ধে এফআইআর করে। ২০ জুলাই, সাইবার সেলের প্রধান কনস্টেবল নরেশ কুমার দেখেন, আইটিও সার্কেলে লোকে ভিড় করে একটি ভিডিও দেখছেন। তাতে কোঠারি মিথ্যে দাবি করেন যে, মাস্ক শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ও রোগটির চেয়ে ভ্যাক্সিনের কারণে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন।
কোঠারির দাবিগুলি চমকপ্রদ হলেও সেগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কোনও গবেষণায় এ কথা বলা হয়নি যে, মাস্ক পরলে বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে সমস্যা দেখা দিতে পারে বা টিকা নেওয়ার ফলে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন। গত এক বছরে, সোশাল মিডিয়ায় কোঠারির এক দল অনুগামী তৈরি হয়েছে এবং তিনি 'করোনা প্যান্ডেমিক স্ক্যান্ডাল' নামে একটি বইও লিখে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: বিহারে ফাঁকা সিরিঞ্জ দিয়ে টিকা দিলেন এক নার্স: এটা কী বিপজ্জনক?