১৯৮৮ সালের ‘দ্য বিয়ার’ সিনেমার গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে মনোনয়ন বলা হল
বুমকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তরফে নিশ্চিত করা হয়, ‘দ্য বিয়ার’ সিনেমার নামে কোনও মনোনয়ন নেই।
১৯৮৮ সালে তৈরি 'দ্য বিয়ার' (The Bear) চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে যে, এটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে (Guinness World Records) স্থান পেয়েছে। দৃশ্যটিতে একটি ভালুক ছানাকে (bear cub) এক সিংহীর তাড়া করার ঘটনা দেখানো হয়েছে।
বুম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, এ রকম কোনও দৃশ্য গিনেস বুকে স্থান পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়নি। আমরা আরও দেখতে পাই যে ভিডিওর দৃশ্যটি একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের। তাতে এক সিংহীকে দেখানো হয়েছে পাহাড়ি জায়গায় এক ভালুকছানাকে তাড়া করতে। এই ফরাসি সিনেমাটির নির্মাতা অস্কারজয়ী পরিচালক জাঁ জ্যাক্স আনাউ।
ইংরাজিতে ফেসবুকে ভিডিওটির ক্যাপশন লেখা হয়েছে, “এই ভিডিওটি গিনেস বুক অফ রেকর্ডস-এর জন্য মনোনীত। ভিডিওগ্রাফারের দুর্ধর্ষ চিত্রগ্রহণ!”
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে এবং এখানে।
সোশাল মিডিয়ায় মালয়ালি ভাষায় একটি ক্যাপশন সহ ভিডিওটি ছড়াচ্ছে, যার অনুবাদ হল, “এই ভিডিওটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর জন্য মনোনীত হয়েছে। চিত্রগ্রাহকের দক্ষতা ও প্রয়াস চমকপ্রদ! মা-ভালুকের সাহসও দেখবার মতো!”
(মালায়লি ভাষায় মূল ক্যাপশন: ഗിന്നസ് ബുക്ക് ഓഫ് വേൾഡ് റെക്കോർഡിലേക്ക് നാമനിർദ്ദേശം ചെയ്യപ്പെട്ട വീഡിയോ! വീഡിയോഗ്രാഫറുടെ കഴിവും പരിശ്രമവും അദ്ഭുതകരം തന്നെ ധീര മാതാവ്.)
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬৫৮৮) ভিডিওটি জমা পড়েছে সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ সহ।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির কয়েকটি মূল ফ্রেম ভেঙে নিয়ে খোঁজ লাগিয়ে ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি ভিয়েতনামি প্রতিবেদনের সন্ধান পেয়েছে।
সেখানেও স্পষ্টই লেখা রয়েছে, এই ভিডিওটি ১৯৮৮ সালে তৈরি একটি ফরাসি চলচ্চিত্র ‘দ্য বিয়ার’-এর অংশ, যার নির্মাতা জাঁ জ্যাক্স আনাউ।
খোঁজখবরে আমরা আরও জানতে পারলাম যে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর ভিডিওটির ৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি দীর্ঘতর অংশ ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল, যার মূল শিরোনাম ছিল— “L’Ours—(1988) – the Cougar scene.”
আইএমডিবি অনুযায়ী অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা আনাউ এই ফরাসি সিনেমাটির পরিচালক, সেটি জেমস অলিভার কারউড-এর উপন্যাস ‘দ্য গ্রিজলি কিং’-এর অবলম্বনে তৈরি হয়।
এক পিতৃমাতৃহীন ভালুকছানা কী ভাবে এক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ভালুকের বন্ধু হয়ে উঠল এবং কী ভাবে তারা দুজনে শিকারী মানুষদের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচল, তাই নিয়েই এই সিনেমা।
ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফির কাজ করেন ফিলিপ্পে রুসেলত। তাঁর অনবদ্য সিনেমাটোগ্রাফির জন্য বাফটা পুরস্কার, একাদেমি পুরস্কার এবং আমেরিকান সোসাইটি অফ সিনেমাটোগ্রাফার্স পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিল এই ছবিটি।
তবে বুম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর মিডিয়া বিভাগে খোঁজ নিয়ে জেনেছে সেখানে এটি কোনও রকম মনোনয়ন পায়নি।
পরিচালক আনাউ-এর ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ছবিটির দৃশ্যগ্রহণ হয়েছে ইতালি, জার্মানি, কানাডা ও অস্ট্রিয়ায়। এ জন্য ভালুক-প্রশিক্ষকদের সাহায্য যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি, অ্যানিমেশন এবং স্পেশাল এফেক্টও ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু অনুপম চিত্রগ্রহণের জন্য গিনেস রেকর্ডে মনোনীত হওয়ার কথা সেখানেও উল্লেখিত নেই।
২০২১ সালের ২৪ জুন ইউটিউবে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওতে “দ্য বিয়ার” সিনেমাটির চিত্রগ্রহণ পর্বের একটি ঝলক রয়েছে, তাতে আমরা পরিচালক আনাউ ও তাঁর অন্যান্য সহযোগীদের শনাক্ত করতে পারি।