জনমতে রাজ্যে এগিয়ে তৃণমূল, গ্রাফিকটি ভুয়ো জানাল হেডলাইনস ত্রিপুরা
বুম হেডলাইনস ত্রিপুরা ওয়েবপোর্টাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জনমত সমীক্ষার ভাইরাল গ্রাফিকটি ভুয়ো বলে জানান।
২০২৩ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে (Tripura Assembly Election 2023) কোন রাজনৈতিক দল ভোট সমীক্ষায় (Opinion Poll) এগিয়ে রয়েছে এই দাবি সহ সংবাদ ওয়েবসাইট হেডলাইনস ত্রিপুরার (Headlines Tripura) নামে একটি ভুয়ো গ্রাফিক্স সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। ওই ভুয়ো গ্রাফিক্সে ২৫ টি আসন দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস দলকে এগিয়ে রাখা হয়েছে।
বুমের তরফে হেডলাইনস ত্রিপুরার সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান ভোট সমীক্ষার গ্রাফিক পোস্টটি ভুয়ো।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া গ্রাফিক পোস্টটিতে হেডলাইনস ত্রিপুরার লোগো ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ত্রিপুরার ভোট সমীক্ষায় ফলাফল দেখানো হয়েছে। ওই গ্রাফিক পোস্টে দেখানো জনমত সমীক্ষার ফলাফল হিসেবে লেখা হয়েছে, বিজেপি ৭ টি, কংগ্রেস ২ টি, তৃণমূল ২৫ টি, সিপিআইএম ১০ টি, আইপিএফটি ২ টি, আইএনপিটি ৩ টি এবং টিআইপিআরএ ১১ টি আসন।
সোশাল মিডিয়ায় গ্রাফিকটি বিজেপি নেতা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে নিশানা করে শেয়ার করা হচ্ছে। গ্রাফিক পোস্টটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হচ্ছে, " এই opinion poll টা যদি শেষ অবধি একই রকম থাকে, তবে বিপ্লবের কপালে দুঃখ আছে।"
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
টুইটেও একই প্রায় একই রকম ক্যাপশন সহ গ্রাফিক পোস্টটি শেয়ার করা হচ্ছে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আগেই জানানো হয়েছে বুমের তরফে ত্রিপুরা হেডলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ এই গ্রাফিককে ভুয়ো বলে আমাদের জানান। পরে ত্রিপুরা হেডলাইনস ফেসবুককে এই গ্রাফিকটির ব্যাপারে পোস্ট করে জানান, "ত্রিপুরা হেডলাইনসের নাম ব্যবহার করে সোশাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।"
ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাম্প্রতিক রাজনীতি প্রসঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে জয়ের পাওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেস আরেকটি বাংলাভাষা প্রধান রাজ্য ত্রিপুরায় রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দিয়েছে। ২ অগস্ট ত্রিপুরা সফরে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হন। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর কনভয়ে হামলা করেছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস। ৭ অগস্ট তৃণমূলের যুব মোর্চার সদস্য দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা, জয়া দত্ত ত্রিপুরায় গেলে তাঁদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস। মহামারী বিধি-ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ ত্রিপুরার খোয়ায় থানায় আটক করা হয় তাঁদের। খোয়ায় থানায় যুব তৃণমূব কংগ্রেস কর্মীদের ছাড়াতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু ও কুনাল ঘোষ প্রভৃতি প্রথম সারির তৃণমূল কংগ্রেস নেতা হাজির হন। ১২ জন তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য জামিন নেন। এর আগে জুলাই মাসে তৃণমূলের ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাকের কর্মীরা সমীক্ষায় গেলে ত্রিপুরা পুলিশ মহামারী বিধি-ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ আটক করে। আগাম জামিন নেয় আইপ্যাক কর্মীরা।
সম্প্রতি শিলচরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। সুস্মিতা দেবের বাবা প্রয়াত সন্তোষ মহন দেব কংগ্রেস জামানার প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী যিনি ত্রিপুরা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে দু'বার নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় যান। অসমে বাঙালি রাজনীতির অন্যতম মুখ দেব পরিবারকে কৌশলে ত্রিপুরায় ব্যবহার করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস এমনটা ধরণা করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। অন্যদিকে ত্রিপুরার প্রাক্তন স্পিকার, বর্তমানে বিজেপি নেতা জিতেন সরকার তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসে বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের পুত্র আশীষ লাল সিংহ।
১৯৯৩ সাল থেকে সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন সরকারকে হারিয়ে ২০১৮ সালে বিজেপি ক্ষমতা দখল করে ত্রিপুরা রাজ্যের। একটি কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী মারা যাওয়ায় ৬০ বিধানসভা আসনের মধ্যে ভোট হয় ৫৯ আসনে। ভোটের ফলাফলে বিজেপি পায় ৩৬ টি আসন। সিপিএম ও আইপিএফটি পায় ১৬ ও ৮ টি আসন। বিজেপির সঙ্গে জোটে আইপিএফটি সরকারে যোগ দেয়। সম্প্রতি, ত্রিপুরা বিজেপি বিধায়ক অরুন চন্দ্র ভৌমিক রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের তালিবানি কায়দায় আক্রমণের প্রসঙ্গ তুললে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁথির উক্তি "বাপকে গিয়ে বল" জুড়ল ত্রিপুরা সফরের সঙ্গে