উত্তরপ্রদেশের ঘটনা বলে ভাইরাল রাজস্থানের বালোত্রায় মহিলা অপহরণের ভিডিও
বালোত্রা পুলিশ জানায় পরিবারের অমতে বিয়ে করার ফলে মেয়েটির বাড়ির লোক তাকে অপহরণ করে। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও মেয়েটিকে উদ্ধার করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি এক মহিলার অপহরণের (woman kidnapping) ভিডিও পোস্ট করে কিছু ব্যবহারকারী সাম্প্রদায়িক দাবি করে লেখেন, উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) অযোধ্যার (Ayodhya) সেই ভিডিওতে নিম্ন জাতের এক কিশোরীকে 'রামসেনা'দের প্রকাশ্যে অপহরণ করার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
বুম দেখে ঘটনাটি আসলে রাজস্থানের। বালোত্রা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে পরিবারের অমতে বিয়ে করার ফলে রাজস্থানের বালোত্রায় মেয়েটির বাড়ির লোক তাকে অপহরণ করে। মঞ্জু ও কূলদীপ একই ধর্মের এবং পুলিশ অপহৃত মঞ্জুকে উদ্ধারও করেছে।
২০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওয় একাধিক ব্যক্তিকে একজন মহিলাকে জোর করে অটো থেকে টেনে নামিয়ে একটি স্করপিও গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এর সাথে অটোর আরোহীদের উপর হামলাও করে দুষ্কৃতিরা। ভাইরাল সেই ভিডিওয় লেখা হয়, "উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার রাম সৈনিকরা এইভাবে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করছে।"
ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, "রাম সৈনিকরা যোগীর উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় নিম্নবর্ণের এক কিশোরীকে প্রকাশ্যে অপহরণ করে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতেছে। না জানি এই অভাগার কপালে কি হবে😥😥 এই সব রাম সৈনিকদের এনকাউন্টার বা এদের বাড়িতে বুলডোজার চালানো হবে না। কারণ এরা সবাই রাম সৈনিক, রামের মতো রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই। রাম যেমন একজন সন্ত্রাসী ছিল, সেই সন্ত্রাসী কায়দায় রামের সৈনিকরা, দেশের নিম্নবর্ণ,দলিত,আদিবাসী,সংখ্যালঘুদের এবং তাদের মা-বেটির জীবন নরক বানিয়ে দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে ও উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় মুসকান নামের এক মুসলিম মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যা করে বিজেপির এক নেতার ছেলে।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাইঃ উত্তরপ্রদেশ নয়, ভাইরাল ভিডিও রাজস্থানের
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। সার্চের মাধ্যমে জি রাজস্থানের ২৩ নভেম্বর, ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট দেখতে পাই।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় অপহরণের ঘটনাটি রাজস্থানের বালোত্রায় ঘটে, উত্তরপ্রদেশে নয় যেমন ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছিল। এক নবদম্পতি পরিবারের সঙ্গে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার সময় পাচপাদারা রোডে শনি দেব মন্দিরের কাছে একটি স্করপিও গাড়ি তাদের পথ আটকায় এবং সেখান থেকে ৩-৪জন লোক নতুন বিবাহিতা মহিলাকে অপহরণ করে। তারা মহিলার স্বামী ও তার পরিবারকেও মারধর করে। এরপর, মহিলার পরিবার বালোত্রা পুলিশের কাছে এই অপহরণের অভিযোগ জানায়।
অপহরণকারীরা ধৃত, অভিযুক্ত মহিলার পরিবার
বালোত্রায় অপহরণের বিষয় বিস্তারিত জানতে আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে এবিপি নিউজের ২৩ নভেম্বরের একটি প্রতিবেদন পাই। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিরোহী পুলিশ সুপার জানিয়েছে বালোত্রা পুলিশের কাছে খবর পেয়ে তারা আবু রোড বন্ধ করে। এর ফলে, রাজস্থান-গুজরাট সীমান্ত এলাকার মাভাল পুলিশ পোস্টে স্করপিও গাড়িসহ অপহরণকারীরা পুলিশের কাছে ধরা পরে এবং অপহৃত মহিলাকেও পুলিশ উদ্ধার করে।
সিরোহী পুলিশ অপরাধী ও উদ্ধার হওয়া মহিলাকে বালোত্রা পুলিশের কাছে তুলে দেয়।
এরপর, আমরা এক্সে কিওয়ার্ড সার্চ করে বালোত্রা পুলিশের একটি পোস্ট পাই। ওই পোস্টে পুলিশের তরফে জানানো হয় পরিবারের অমতে, ভিন্ন বর্ণের একজনকে প্রেম করে বিয়ে করাই এই অপহরণের ঘটনার কারণ। পুলিশ জানায় অপহৃত মহিলাকে নিরাপদ ভাবে উদ্ধার করা হয়েছে এবং মেয়েটির বাবা, মা, ভাই ও কাকা সহ নয় জন অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেছেন তারা। এছাড়াও, তারা অপহরণে ব্যবহৃত দুটি গাড়ি, একটি সুইফট এবং স্করপিওকে উদ্ধার করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত কোথা থেকে?
এবিপি নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১১ নভেম্বর রাজস্থানের সিওয়ানার মঞ্জু ও বালোত্রার কূলদিপ মঞ্জুর পরিবারের অমতে বিয়ে করে। এতেই ক্ষুব্ধ হয় মঞ্জুর পরিবার। প্রতিবেদন অনুসারে, বিয়ের পর কূলদীপ সুরক্ষার জন্য রাজস্থান হাইকোর্টে যান এবং পরে ১৬ নভেম্বর, কূলদীপ ও মঞ্জু দুজনেই বালোত্রা পুলিশ এসপি অফিসেও যায়। তবে, ২২ নভেম্বর মন্দিরে যাওয়ার সময় মঞ্জুকে অপহরণ করে তার পরিবারের লোক।
এবিষয়ে, আমরা এক্সে কিওয়ার্ড সার্চ করে একটি পোস্টে কূলদীপের বক্তব্য দেখতে পাই যেখানে তিনি বলেছেন পুলিশ এবং হাইকোর্টের থকে সুরক্ষা পাওয়ার পরেও, বালাজি মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার পথে মঞ্জুর পরিবার তাদের উপর হামলা করে এবং মঞ্জুকে অপহরণ করে।