উত্তরপ্রদেশে যুবকের উপর নির্যাতনের ভিডিও দাবি করে বিহারের ভিডিও ভাইরাল
বুম দেখে ভিডিওটি বিহারের কিশানগঞ্জের বাহাদুরগঞ্জ থানা এলাকার, যেখানে চুরির অভিযোগে ওই যুবককে মারধর করা হয়েছিল।

এক যুবককে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর (beaten) করার সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিও শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) যেখানে চোর সন্দেহে হিন্দু রক্ষক বাহিনী (Hindu rakshak vahini) ওই হিন্দু যুবকের (Hindu youth) উপর অত্যাচার করেছে।
বুম দেখে ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের নয়, বরং বিহারের কিশানগঞ্জের বাহাদুরগঞ্জ থানা এলাকার। ঘটনায় পীড়িত এবং অভিযুক্ত উভয়ই মুসলিম সম্প্রদায়ের। কিশানগঞ্জ পুলিশও এবিষয়ে বুমকে নিশ্চিত করে।
ভাইরাল দাবি
সমাজমাধ্যমে ভাইরাল এই ১:৩০ মিনিটের ভিডিওয় কয়েকজন ব্যক্তিকে এক যুবককে একটি বৈদ্যুতিক পোস্টের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করতে দেখা যায়। ভিডিওয় ভুক্তভোগীকে একাধিকবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতেও শোনা যায়।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেন, "কোন শূয়ো------বা/চ্চা যেন উত্তরপ্রদেশ কে সেরা রাজ্য বলে?? ((শু/ভেন্দু)) ।।। বাংলায় বুলডোজার আনবে বলে হম্বিতম্বি করে?? দেখ আইনের তোয়াক্কা না করে উত্তরপ্রদেশে চোর সন্দেহে হিন্দু যুবক কেই পেটাচ্ছে স্বঘোষিত হিন্দু রক্ষক বাহিনী। ২০২৬ নির্বাচনের পর শুভেন্দু আর নৌশাদ সি/দ্দি/কীর মতো ধান্ধাবাজদের যেন এই হাল হয়।"
সতর্কতা: ভাইরাল ভিডিওর বিষয়বস্তু বিব্রতকর
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম:
১. ভিডিওটি বিহারের কিষাণগঞ্জের: আমরা ভিডিওতে Masroorkishanganj লেখা একটি জলছাপ লক্ষ্য করি এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে একই নামের একটি ফেসবুক পেজও খুঁজে পাই। ওই পেজে আমরা ভাইরাল ভিডিওসহ একটি পোস্ট দেখি যেখানে ঘটনাস্থল কিশানগঞ্জ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এর থেকে ইঙ্গিত নিয়ে, আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক ভাস্কর এবং প্রভাত খবরের প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদনগুলি থেকে জানা যায়, ভিডিওয় দৃশ্যমান ঘটনাটি কিশানগঞ্জের বাহাদুরগঞ্জ থানা এলাকার। ওই এলাকায় ১৬ অগাস্ট, ২০২৫-এ চুরির অভিযোগে ১৮ বছর বয়সী মাসুম রাজা নামের এই যুবককে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে মারধর করা হয়। রিপোর্টে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিবেদনগুলিতে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়।
রিপোর্ট অনুসারে, ভুক্তভোগী মাসুম রাজা জানিয়েছেন চুরির অভিযোগ করে ওয়ার্ড নম্বর ১৩ এর মজম, তাকি এবং মোহাম্মদ ইজহার আশরাফ সহ ১০-১৫ জন তাকে ধরে নিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। ভিডিওটি ওই সময়ই তোলা হয়।
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ তৎপর হয়। বাহাদুরগঞ্জ পুলিশ লোহাগড়া হাটের বাসিন্দা নূর আলমের ছেলে মাসুম রাজার অভিযোগের ভিত্তিতে পরিচয় উল্লেখ করে চারজন এবং ১০ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
২. বাহাদুরগঞ্জ পুলিশের বক্তব্য
ভাইরাল ভিডিও পোস্ট করা এক এক্স ব্যবহারকারীর পোস্টের উত্তরে কিশানগঞ্জ পুলিশের এক্স হ্যান্ডেল থেকে লেখা হয়, "বাহাদুরগঞ্জ থানার অন্তর্গত এলাকার ঘটনায় ৩৬৯/২৫ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত করছে।" এছাড়াও, আমরা এই ঘটনার এফআইআর কপিও পেয়েছি যেখানে পরিচয় দেওয়া অভিযুক্তদের নাম এবং ভুক্তভোগীর নাম দেখে আমরা বুঝতে পারি, ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তরা সকলেই মুসলিম।
আরও জানতে বুম কিশানগঞ্জ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে। কিশানগঞ্জ পুলিশের এসপি সাগর কুমার জানান, " এই ঘটনায় কোনও জাতিগত বৈষম্যের দিক ছিল না। চুরির অভিযোগে যুবককে মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।"