মণিপুরের ভিডিও ছড়িয়ে বলা হল কোচবিহারে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে তাণ্ডব
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৯ সালের যখন মণিপুরের কিয়ামেগি এলাকার জনতা একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে হামলা করে।
২০১৯ সালে মণিপুরের (Manipur) কিয়ামেগি এলাকায় জনতা একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছে, এমন একটি ভিডিওকে কোচবিহারে (Cooch Behar) বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সমর্থকদের তাণ্ডব বলে চালানো হচ্ছে।
গত ১০ এপ্রিল কোচবিহারে চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ চলার সময় একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যে অশান্তির ঘটনা ঘটে, তার প্রেক্ষিতেই এই ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে। এদিন কোচবিহারের শীতলকুচিতে দুটি আলাদা ঘটনায় মোট ৫ জন ভোটার নিহত হন। তার মধ্যে ৪ জন শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে সিআইএসএফ-এর গুলিতে মারা যান, আর ২৮৫ নম্বর বুথে অন্য একটি ঘটনায় আরও একজন মারা যান। ঘটনার পরে কে প্রথম হামলা চালায়, তা নিয়ে দাবি, পাল্টা দাবি শোনা যেতে থাকে। তৃণমূল কংগ্রেস ঘটনার তদন্ত এবং ১২৬ নম্বর বুথে গুলিচালনায় জড়িত জওয়ানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, এক দল লোক একটি বুথে হাঙ্গামা চালাচ্ছে, যার কিছুক্ষণের মধ্যেই বুথের ভিতর কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তাদের খেদিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে।
ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে— "মমতা ব্যানার্জির সমর্থক জনতা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে একটি বুথে হামলা চালাচ্ছে। নিরাপত্তা রক্ষীরা চমৎকারভাবে হামলাকারীদের অপপ্রয়াস বানচাল করে দিচ্ছে।"
ফেসবুকেও ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
ইউটিউব চ্যানেল আরামবাগ টিভি (Arambag TV) বিভ্রান্তিকর দাবি সহ প্রচার করে এই ভিডিও। ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে। সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম বলেন, "ভিডিওটি অনেকে বলার চেষ্টা করছেন এটি শীতলকুচি এলাকার। সেখানের সকালের দিকের ভিডিও বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। আমরা এখনও নিশ্চিত নই এটি সত্যিই ওই বুথের ঘটনা বলে।"
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে খোঁজখবর করে দেখেছে, এই একই ভিডিও ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ইন্ডিয়া টুডে-র ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছিল। সেই ভিডিওর বিবরণ ছিল— "পূর্ব ইম্ফলের মুসলিম অধ্যুষিত কিয়ামেগি মাখা লেইকাই এলাকায় জনতা ভোটপ্রক্রিয়ায় হামলা চালায় এবং বুথে ঢুকে ইভিএম মেশিন ভেঙে দেয়"।
ইউটিউবে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা ১৮ এপ্রিলেই দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর আপলোড করা অন্য একটি ভিডিও দেখতে পাই, যার ক্যাপশন ছিল, "ভারতের নির্বাচন ২০১৯: মণিপুরে হিংসাদীর্ণ ভোটগ্রহণ। বিবরণ অনুযায়ী সিআরপি হিংসা নিয়ন্ত্রণে লাঠি-চার্জ করে এবং শূন্যে গুলি ছোঁড়ে। জনতা মণিপুরের কিয়ামেগি মাখা লেইকাই বুথে ঢুকে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা চালায়।"
এছাড়াও ভাইরাল হওয়া ভিডিও-র একটি ফ্রেমে আমরা "কিয়ামেগি মুসলিম" কথাটি লেখা রয়েছে দেখতেও পেয়েছি। ১৮ এপ্রিল ২০১৯-এই ঘটনাটির দীর্ঘতর একটি ভিডিও ইম্ফল ফ্রি প্রেস-এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়েছিল।
সে সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ইনার ইম্ফল সংসদীয় আসনের নির্বাচনে ব্যাপক গোলমাল ও হিংসা হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের সময়।
ইস্টমোজো-এর প্রতিবেদনের একটি অংশে লেখা হয়েছিল, "ইভিএম খারাপ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় বুথের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় এবং তারা ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্র ভাঙচুর করে। বুথে কর্মরত পোলিং এজেন্টদের তোলা ছবি থেকে দেখা যায়, ক্রুদ্ধ ভোটাররা পোলিং অফিসারদের লক্ষ্য করে ইঁট-পাথর ছুঁড়ছে এবং ভাঙচুর চালাচ্ছে, যদিও নিরাপত্তা কর্মীরা প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই প্রথমে লাঠি-চার্জ করে ও পরে শূন্যে গুলি চালিয়ে উন্মত্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনে।"
আরও পড়ুন: হরিয়ানায়ার পঞ্চকুলায় ২০১৭ সালে হিংসার ছবি ছড়াল শীতলকুচির বলে