ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল গদর ২ চলাকালীন সিনেমা হলে মারপিটের ভিডিও
বুমকে কোতয়ালী থানার পুলিশ নিশ্চিত করে জানায় মারপিটের ঘটনাটি পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ার জন্য ঘটেনি।
সম্প্রতি বলিউড (Bollywood) সিনেমা গদর ২ (Gadar 2) চলাকালীন সিনেমা হলে মারপিট হওয়ার এক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দাবি করা হয় সিনেমা চলাকালীন হলে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দেওয়ার জন্য মারধরের ঘটনাটি ঘটে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি ভুয়ো। ওই সিনেমা হলের এলাকার কোতয়ালী থানার পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করে জানায় অন্ধকার হলে একজন ব্যক্তির ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বলে ওঠা নিয়ে বচসার কারণে মারপিটের ঘটনা ঘটে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গদর ২ ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। অনিল শর্মা পরিচালিত এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে বলিউড অভিনেতা তথা বিজেপি সাংসদ সানি দেওলকে দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা এই ছবিতে অভিনেত্রী আমিশা প্যাটেলকেও দেখতে পাওয়া যায়।
গদর ২ সিনেমা চলাকালীন কিছু ব্যক্তির হাতাহাতির সেই ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়,"গদর-২ মুভি চলাকালীন কোনো একজন সংখ্যালঘু পাকিস্তান জিন্দাবাদ" বলে ফেলেছিলো....বাকিটুকু জনগণ ক্যালেন্ডার বানিয়ে দিয়েছে"।
পোস্টটির লিংক এখানে ও আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' সংক্রান্ত কীওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ভিডিওটি ইংরেজি ক্যাপশনে একই দাবিসমেত ভাইরাল হয়েছে।
এমনই এক পোস্টের উত্তর অংশে নেটিজেনদের একজন দাবি করেন ঘটনাটি মদ্যপ অবস্থায় বচসা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে প্রসাদ টকিজ নামক সিনেমা হলে ঘটেছে।
এর থেকে সূত্র ধরে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করে ১৩ অগাস্ট, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত ফ্রি প্রেস জার্নালের এক প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাতের একটি শো চলাকালীন সিনেমা হলে মারপিটের ঘটনাটি ঘটে।
তাছাড়া ওই প্রতিবেদনটিতে মারধরের ঘটনায় জড়িত দুজন ব্যক্তিই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে রিপোর্ট করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও ঘটনাটি পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ার কারণে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়নি।
এই বিষয় নিয়ে ১৫ অগাস্ট ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত ইন্ডিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানেও এই ঘটনার সাথে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" স্লোগান দেওয়ার সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর আমরা বিষয়টি নিশ্চিত করতে কোতয়ালী থানার এস.এইচ.ও ধর্মেন্দ্র সিংহের সাথে যোগাযোগ করি। সিংহ বুমকে বলেন, "ঘটনাটি ঘটে রাতের এক শো চলাকালীন। পুলিশ আসার আগেই যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা পালিয়ে যায়। হলের ভেতর একজন ব্যক্তির ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বলে ওঠা নিয়ে ওই বচসার সূত্রপাত হয়। এটি কোনও সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। তাছাড়া, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ার জন্যও এই ঘটনার সূত্রপাত হয়নি।"