না, ইনি পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে গ্লাসগোয় বক্তব্য রাখা আইএএস বিজয় সিংহ নন
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওর ব্যক্তি আইএএস নন, তিনি ট্রাইকন্টিনেন্টাল ইন্সটিটিউট ফর সোশাল রিসার্চের অধিকর্তা বিজয় প্রসাদ।
পরিবেশ (climate movement) আন্দোলনকে ঔপনিবেশিকতা-মুক্ত করা এবং পরিবেশের উন্নতি সাধনে পাশ্চাত্যের ভূমিকার সমালোচনা করে গ্লাসগোর (Glasgow) পরিবেশ সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করার একটি পুরনো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে বক্তাকে বিজয় সিংহ (Vijay Sinha) নামক আইএএস (IAS) অফিসার হিসাবে শনাক্ত করে স্পষ্টবাদিতার জন্য তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে বক্তা বিজয় প্রসাদ (Vijay Prashad) গ্লোবট্রটের-এর এক সাংবাদিক এবং ট্রাইকন্টিনেন্টাল ইন্সটিটিউট ফর সোশাল রিসার্চের ডিরেক্টর। এবং ভিডিওটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের।
ভিডিওটিতে বিজয়কে বলতে শোনা যাচ্ছে, কী ভাবে পাশ্চাত্য দুনিয়া ভারতের মতো দেশ থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ক্রমাগত সম্পদ ও কাঁচা মাল লুঠ করেছে, অথচ বর্তমানে তারাই জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনামূলক মনোভাব ও অবস্থান নিয়েছে।
বিজয় প্রসাদকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “তোমরা কেবল আমাদের অনুকম্পা করতে শিখেছো...তোমরা বলতে চাও, আমরা সবাই যেন এই অবস্থার জন্য সমান দায়ী। কিন্তু মোটেই তা নয়। এই যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ৪/৫ শতাংশ, অথচ সম্পদের ২৫ শতাংশ একাই ব্যবহার করে। তোমরা উৎপাদনকারী ইউনিটগুলো সব চিনে পাঠিয়ে দিয়েছো, আর তার পর বলছো, কার্বন দূষণ হচ্ছে চিনের কারণে। তোমাদের বালতি, নাট-বল্টু, সব চিনকে দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছো, তোমাদের মোবাইল ফোনও চিনকে দিয়েই করিয়ে নিচ্ছ। ওই সব পণ্য নিজের দেশের মাটিতে উৎপাদন করে দেখো তোমাদের কার্বন দূষণের মাত্রা কোথায় পৌঁছয়!” এই সূত্রেই তিনি পশ্চিমের ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন।
এই ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে—“আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাশ্চাত্য দেশগুলির ঔপনিবেশিক ভণ্ডামি উন্মোচিত করে দেওয়া এক অসমসাহসী বক্তব্য! আইএএস বিজয় সিংকে সেলাম! অত্যন্ত সাহসী বক্তৃতা!”
পোস্টটি দেখুন এখানে।
টুইটটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি আইএএস বিজয় সিংহ নন। তিনি সাংবাদিক বিজয় প্রসাদ, যিনি আবার একই সঙ্গে ট্রাইকন্টিনেন্টাল ইন্সটিটিউট ফর সোশাল রিসার্চের অধিকর্তা। উপরন্তু তিনি চিনের চঙ-ইয়ুঙ-এ অর্থনীতি বিষয়ক চর্চার সংস্থার সিনিয়র ফেলো এবং লেফ্টওয়ার্ড বুকস প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদকও।
ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে গুগলে সার্চ করে আমরা লিঙ্কডইনের একটি পোস্ট-এর হদিশ পাই, যাতে তাঁর বক্তৃতার প্রশংসা করা হয়েছে। সেখানেও তাঁর নাম বিজয় সিংহ নয়, বিজয় প্রসাদ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।
পোস্টটি দেখতে দেখুন এখানে।
এর পর আমরা গ্লাসগোয় বিজয় প্রসাদের দেওয়া বক্তৃতার খোঁজ খুঁজি এবং ইউটিউবে তা আপলোড করা রয়েছে দেখতে পাই।
২০২১ সালের ৯ নভেম্বর বিজয় প্রসাদ জলবায়ুতে ন্যায়পরায়ণতা বিষয়ে ব্রিটেনের গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত COP26 শীর্ষ সম্মেলনে, “এখনই আমাদের সময়” শীর্ষক আলোচনায় তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। জলবায়ুতে ন্যায়বিচার সংক্রান্ত ব্রিটেনের সরকারি ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেজেও আমরা এই বক্তৃতাটি আপলোড হয়েছে দেখেছি ভিডিওটির ২৬ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের মাথায়।
বিজয় প্রসাদ নিজেও টুইটার মারফত এই ভিডিওটি পোস্ট করে জানিয়েছেন কী ভাবে এটি ভাইরাল হয়েছে।