বর্ধমানের দাবি করে ছড়াল হরিয়ানার অম্বালায় শিশু উদ্ধারের ঘটনার ছবি
বুম দেখে এবছরের এপ্রিল মাসে হরিয়ানায় এক ট্রেন থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
বর্ধমান (Bardhaman) রেল স্টেশন থেকে সম্প্রতি লাল জামা পড়া ফুটফুটে এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে সম্প্রতি কিছু পোস্ট ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
নেটিজেনদের অনেকে শিশুটির সেই ছবি পোস্ট করে লেখেন অচেনা কয়েকজন ব্যক্তি বর্ধমান রেলস্টেশনে শিশুটিকে ট্রেনে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীদের তৎপরতায় ধরা পরে যায়। তাদের সেই পোস্ট যাতে শিশুটির পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছয় এবং তার পরিবার যাতে তাকে খুঁজে পায় - এমন আবেদন জানিয়ে পোস্টগুলি শেয়ার করার অনুরোধও করা হয় সমাজমাধ্যমে।
বুম যাচাই করে দেখে শিশু উদ্ধারের এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের নয়। এবছরের এপ্রিল মাসে হরিয়ানার অম্বালায় এক ট্রেন থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
সম্প্রতি ছেলেধরার বাচ্চা চুরির গুজবের আতঙ্কে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে সন্দেহের বশে গণপিটুনির ঘটনা। গুজব রোখা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পথে নামেন খোদ বারাসাত পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া, গুজবে কান না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে করেন লিফলেট বিলিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর কারণে ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে কয়েকজনকে।
এমতাবস্থায় শিশুটির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশন হিসেবে লেখা হয়, "এই ছোট্ট শিশুটিকে বর্ধমান রেলস্টেশনে ট্রেনে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল অচেনা কয়েকজন। যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্দেহে এই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এই ছবিটি সকল সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে ফরোয়ার্ড করুন। যাতে এই শিশুর পরিবারের সদস্যরা বর্ধমান রেলস্টেশনে যোগাযোগ করতে পারে। শিশুটিকে রেলস্টেশনে নিরাপদে রাখা হয়েছে.... বেশি বেশি করে Post টা Share করুন এবং বাচ্চাটাকে তার পরিবারের কাছে পাঠাতে সাহায্য করুন।"
ভাইরাল সেই পোস্টে শেয়ার করার আবেদনের পাশাপাশি যোগাযোগের জন্য দুটি ফোন নম্বরের উল্লেখও করা হয়।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে বিশদে বিষয়টি জানার জন্য ভাইরাল পোস্টে থাকা দুটি নম্বরে যোগাযোগ করলেও সেখান থেকে কোনও প্রত্যুত্তর পায়নি।
এরপর আমরা নম্বরগুলি সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পাই এবছরের এপ্রিল মাসে বেশ কয়েকজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী শিশুটি হরিয়ানার বরারা স্টেশনে উদ্ধার হয়েছিল দাবি করে একই নম্বরসমেত শিশুটির ছবি পোস্ট করেছিল।
এমনই এক পোস্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ওই পোস্টে হিন্দিতে থাকা ক্যাপশনের অনুবাদ, "আজ বরারা স্টেশনে এই ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে যাচ্ছিল অচেনা কয়েকজন! বরারার মানুষ ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে!! অনুগ্রহ করে এই ছবিটি সকল হোয়াটস্যাপ গ্রুপে ফরোয়ার্ড করুন!!! যাতে এই শিশুর পরিবারের সদস্যরা বরারা রেলস্টেশনে যোগাযোগ করেন!!! ৮৮১৮০৭০০৮০, ৮৩৯৬৯২২৭২৫"।
এরপর আমরা শিশুটির ছবি রিভার্স সার্চ করে ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ভাস্করের এক প্রতিবেদন পাই। ওই প্রতিবেদনে শিশুটির ছবি ব্যবহার করে লেখা হয় হরিয়ানার অম্বালার কাছে ট্রেন থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, "হরিয়ানার অম্বালায় ভ্রমণের সময় যাত্রীরা অপহরণের সন্দেহে ট্রেনে ৬ মাস বয়সী এক শিশুকে বহনকারী যুবককে ধরে ফেলে। যাত্রীরা ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। সেখানে যুবককেও মারধর করা হয় এবং তারপর রেল পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। শিশুসহ ওই যুবককে বরারা রেলস্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়াও, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, খবর পেয়ে জিআরপি পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা দফতরের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শিশুটিকে তাদের হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা করায়।
প্রতিবেদনটিতে যাত্রীরা অভিযুক্ত যুবককে মদ্যপ অবস্থায় দেখে সন্দেহ করে শিশুটিকে নিজেদের কাছে নেন বলে রিপোর্ট করা হয়। অভিযুক্ত যুবক নিজেকে শিশুটির বাবা বলে পরিচয় দেন, তিনি যমুনানগরে ভাড়া বাড়িতে থাকার কথা জানান ও বাড়ি থেকে না বলে চলে আসা স্ত্রীর খোঁজে অম্বালায় এসেছেন বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) চেয়ারপারসন রঞ্জিতা এবিষয়ে তখন জানান কাগজপত্র ছাড়া শিশুকে হস্তান্তর করবেন না।