"এ লং ওয়ে হোম" লেখকের ছবিকে বিজেপি বলল আবাসন প্রকল্পের উপভোক্তা
বুম দেখে ছবিটি সারু ব্রিয়ার্লির যিনি শৈশবে হারিয়ে যাওয়ার পর তাঁর ভারতীয় পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন করছেন।
দিল্লির (Delhi) বস্তিবাসীদের জন্য তৈরি আবাসনের উদ্বোধন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Home Minister) অমিত শাহ (Amit Shah) ভারতীয় জনতা পার্টির (Bharatiya Janata Party) দিল্লি শাখা এবং বিজেপির অন্য কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা একটি পোস্টারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় ব্যবসায়ী (Australian Businessman) সারু ব্রিয়ার্লির (Saroo Brierly) ছবি ছেপে দিয়েছেন।
২ নভেম্বর দিল্লির কালকাজিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল বস্তিবাসীদের জন্য তৈরি ৩০২৪টি ফ্ল্যাটের আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং প্রাপকদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেন।
বুম যাচাই করে দেখে সারু ব্রিয়ার্লি একজন লেখক, যিনি তাঁর স্মৃতিকথায় শৈশবে ভারতীয় এক পরিবার থেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিবরণ নথিভুক্ত করেছেন।
অমিত শাহ একটি পোস্টার টুইট করে হিন্দিতে ক্যাপশনে লিখেছেন "নরেন্দ্র মোদি সরকার কেবল প্রতিশ্রুতি দেয় না তা পূরণ করেও দেখায়। দিল্লির বস্তিতে যে সব মানুষ বাস করতেন, আজ মোদিজি এ রকম ৩০২৪ জনের হাতে সুখের চাবিকাঠি তুলে দেবেন।"
টুইটটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বিজেপির দিল্লি শাখা তাদের যাচাই করা হ্যান্ডেলেও একই পোস্টার টুইট করেছে।
টুইটটি দেখা যাবে এখানে।
একই পোস্টার তাঁদের যাচাই করা হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিঃশঙ্ক, সাংসদ হরদোয়ার দুবে এবং রাজস্থানের বিজেপি সহ-সভাপতি চন্দ্রকান্ত মেঘওয়ালের মতো নেতারা।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল ২০১৬ সালে রোহিত শর্মার অস্ত্রোপচারের ছবি
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটি টিনআই-এ রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ডেইলি মেইল এ একটি প্রতিবেদনের সঙ্গে ওই একই ছবি দেখতে পায়। যার ক্যাপশনে লেখা "যে-বন্ধন ছিন্ন হওয়ার নয়। সারু তার মা ফাতিমা মুন্সি এবং তার ভারতীয় পরিবারের সাথে"।
সারু ব্রিয়ার্লির লেখা প্রতিবেদনে তাঁর ৫ বছর বয়সে পরিবার থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর 'গুগল আর্থ' (Google Earth) মারফত আবার তাকে খুঁজে পাওয়ার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। অস্কারের জন্য মনোনীত নিকোল কিডম্যান এবং দেব পটেল অভিনীত 'লায়ন' চলচ্চিত্রটি সারুর স্মৃতিকথা "এ লং ওয়ে হোম"-কে ভিত্তি করেই তৈরি হয়।
আমরা অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে তাঁর ঘর ও স্বজন-পরিবারকে খুঁজে-ফিরে পাওয়ার এই গল্প ২০১৩ সালে হিন্দুস্তান টাইমস ও মিন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে ছবিটি দেখতে পাই।
এই সূত্র ধরেই আমরা তাঁর জীবনী "এ লং ওয়ে হোম" বইটির খোঁজখবর করি এবং বইটির প্রকাশক পেঙ্গুইন বুকস-এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাই।
তাঁর জীবনীতে বলা হয়েছে, "সারু ব্রিয়ার্লি ভারতের মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়ায় জন্মেছিল। ১৯৮৬ সালে, যখন তার বয়স ৫ বছর, তখনই সে তার দাদার সঙ্গে যাওয়ার সময় একটা রেলওয়ে স্টেশনে হারিয়ে যায়। দাদাকে আর কোনদিনই সে দেখেনি। নিজের পরিবারের নাম কিংবা কোথায় তার বাড়ি কিছুই সে বলতে না পারায়, একটি অনাথ-আশ্রমে আশ্রয় পাওয়ার আগ পর্যন্ত কলকাতা শহরের রাস্তায়-রাস্তায় কোনমতে টিকে থাকে। পরে অনাথ-আশ্রম থেকে এক অস্ট্রেলীয় পরিবার তাকে দত্তক নেয়।
"পরবর্তী ২৫ বছর সারু তার নতুন পালক পিতা-মাতার কাছেই তাসমানিয়ার হোবার্টে বড় হতে থাকে। সারুর হারানো পরিবার দেশের বাড়ি ও মাকে খুঁজে বেড়ানোর যাত্রা ২০১২ সালে সারা বিশ্বেই সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে। তার আত্মজীবনী "এ লং ওয়ে হোম" একটি আন্তর্জাতিক সর্বাধিক বিক্রিত আত্মজীবনী হয়ে ওঠে। এই কাহিনীর ওপর ভিত্তি করেই 'লায়ন' চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয় ২০১৬ সালের নভেম্বরে এবং ৪টি গোল্ডেন গ্লোব এবং ৬টি অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য ও অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।"
সারু ব্রিয়ার্লির এই অভিযাত্রা নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন নীচে দেখতে পারেন।
অমর উজালার সাংবাদিক প্রদীপ পান্ডেই সর্বপ্রথম বিজেপির পোস্টারে সারু ব্রিয়ার্লির ছবি ব্যবহার করার জালিয়াতির পর্দা ফাঁস করেন।
আরও পড়ুন: মহীশূরের রাস্তায় চিতাবাঘের ভিডিও ভুয়ো দাবিতে পশ্চিমবঙ্গের বলে ছড়াল