গুজরাতের ছবিকে মুলায়ম সিংহ জামানায় উত্তরপ্রদেশের ঘটনা বলে চালনো হল
বুম দেখে ছবিটি গুজরাতে পুলিশের তল্লাশির পর আসারাম বাপুর অনুগামীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা।
একজন পুলিশ অফিসার গুজরাতে (Gujarat) আসারাম বাপুর অনুগামীকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, ২০০৯ সালের এ রকম একটি ছবিকে ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, এটি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) ঘটনা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিংহ যাদবের (Mulayam Singh Yadav) সমাজবাদী পার্টির সরকার হিন্দু সাধু-সন্তদের (Hindu monk) হেনস্থা করতো।
২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মুলায়ম সিংয়ের ছেলে অখিলেশ যাদব (Akhilesh Yadav) শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে এই বলে তোপ দেগেছেন যে, বিজেপির নীতি হল, 'হত্যা করো এবং শাসন করো'। সেই সঙ্গে তিনি জনসাধারণের ওপর নির্যাতন চালানোর ক্ষেত্রে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে এই বিজেপি সরকারের তুলনাও টেনেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষই এই শাসনে সমস্যায় পড়েছেন।
ভাইরাল করা ছবিটির হিন্দি ক্যাপশনের মর্মার্থ, "হে উত্তরপ্রদেশের বন্ধুরা! আমাদের সাধু-সন্তদের চুলের মুঠি ধরে টানবার জন্য ওখানে কোনও জেহাদির দরকার হয়নি। অখিলেশ যাদবের আব্বাজানই এ জন্য হাজির ছিল। তাই আর তিন মাস পরে যখন ওরা ভোট চাইতে আসবে, তখন এই কথাটা মনে রেখো।"
এই টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার দৃশ্য বলে ছড়াল সিরিয়ার ভিডিও
তথ্য যাচাই
বুম ইয়ান্ডেক্স সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ছবিটির খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, এটি আসারাম ডট অর্গ নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর পর ইন্টারনেট আর্কাইভ ঘেঁটে আমরা পুরো প্রতিবেদনটি পাই, যেখানে ভাইরাল হওয়া ছবিটা প্রকাশ হয়েছিল।
এই যোগসূত্রটি অনুসরণ করে আমরা দেখি, এটি ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রেস বিবৃতি, যাতে ওই বছরেরই ২৭ নভেম্বর আসারাম বাপুর আশ্রমে তাঁর শিষ্যদের ওপর গুজরাত পুলিশের হামলার কথা রয়েছে।
এর পর আমরা আসারাম ডট অর্গ ওয়েবসাইটটিতে যাই, যেটা আবার আমাদের আসারামের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল সন্ত শ্রী আসারামজি বাপু-তে পৌঁছে দেয়। এই ইউটিউব চ্যানেলের পরিচিতি অংশেও যোগাযোগের উৎস হিসাবে একই ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে।
এই সূত্র ধরে আমরা ২০০৯ সালের ২৮ নভেম্বর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের খোঁজ পাই। সেখানে লেখা— "বৃহস্পতিবার গাঁঁধীনগরের হিংসায় আসারাম বাপুর ২৩৬ জন সমর্থককে খুনের চেষ্টা, দাঙ্গা করা এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার দায়ে গ্রেফতার করার পর পুলিশ আজ তাঁর মোতেরার আশ্রম থেকে আরও ১৫০ জন অনুগামীকে গ্রেফতার করেছে।"
গান্ধীনগর রেঞ্জের আই-জি এ কে শর্মা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "শুক্রবার সকালে আশ্রমে তল্লাশি চালাবার সময় এই লোকগুলিকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে ওদের বিরুদ্ধেও দাঙ্গা করা এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হবে।"
২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর আমরা আজ তক-এর ইউটিউব চ্যানেলেও একই দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও রিপোর্ট প্রকাশিত হতে দেখেছি।
স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু আসারাম বাপু বর্তমানে যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তিনি ২০১৩ সালে ১৬ বছর বয়সের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার দায়ে অভিযুক্ত হন। ২০১৪ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: রাম মন্দিরের সমালোচনা জন্য ইমরান খানকে বাদ দিল ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা?