না, ভাইরাল ছবিটি তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের মাছ বিক্রির নয়
বুম যাচাই করে দেখে অনুব্রত মণ্ডলের মত একই দেখতে ভাইরাল ছবির ব্যক্তি সুকুমার হালদার শেওড়াফুলির এক মৎস্য ব্যবসায়ী।
দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ বীরভূমের দুঁদে তৃণমূল নেতা (Trinamool Congress) অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বর্ণময় রাজনৈতিক উত্থানের তুলনা টেনে সম্প্রতি এক মৎস্য ব্যবসায়ীর ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মৎস্য ব্যবসায়ীর (Fish Seller) সেই ছবি পোস্ট করে নেটিজেনদের অনেকে দাবি করেন ছবিটিতে অনুব্রত মণ্ডলকে বাজারে মাছ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
বুম দেখে দাবিটি ভুয়ো, ভাইরাল ছবির ব্যক্তি তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল নন। তিনি হুগলির শেওড়াফুলির (Sheoraphuli) এক মৎস্য ব্যবসায়ী সুকুমার হালদার (Sukumar Halder)।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এককালে মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেছিলেন বর্তমানের এই তৃণমূল নেতা। পরবর্তীকালে অনুব্রত পা রাখেন রাজনীতির আঙিনায়, একের পর এক ধাপ পেরিয়ে হয়ে ওঠেন বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। প্রভাব-প্রতিপত্তির পাশাপাশি দুর্নীতির সাথেও নাম জড়ায় তার। সম্প্রতি গরুপাচার কাণ্ডে অনুব্রতকে ইডি গ্রেফতার করলে ভাইরাল ছবিটি পোস্ট করে কিভাবে তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী থেকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠলেন তার কাহিনী নিয়ে জল্পনা ছড়ায়।
ছবিটি পোস্ট করে একজন লেখেন, "বীরভূমের হাটশেরান্দি গ্রামের ছেলে অনুব্রত মণ্ডলের। সাধারণ পরিবার, আর্থিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিল না বলেই শোনা যায়। পরিচিতরা বলতে শোনা যায় , তিনি নাকি টাকা ধার করে চলতেন। বর্তমানে সিবিআই সূত্রে তাঁর সম্পত্তির হিসেব সামনে এসেছে ১০০০ কোটি টাকা। তা শুনলে এ সব অলিক বলেই মনে হবে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা , প্রথম জীবনে মাছ বিক্রি করতেন তিনি। সেখান থেকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ হেভিওয়েট নেতা ও এতো বিষয় সম্পত্তির হওয়ার পেছনে সবকিছুই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অনুপ্রেরণা। বর্তমানে CBI ও EDর জালে বন্দী। বাঁচার আর কোন উপায় নেই , ঠিকানা হতে চলেছে দিল্লির তিহার জেল। সত্য সামনে আসবে, টাকার উৎস কোথা থেকে ও ৭৫% টাকা কার কাছে পৌঁছেচে সেটাও পরিস্কার হয়ে যাবে।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
অন্য এক ফেসবুক পোস্টে ছবিটির বিষয়ে লেখা হয়, "মাছ বিক্রেতা অনুব্রত মন্ডল (কেষ্ট) অতীত আর আজ জেলে"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি আরামবাগ টিভি প্লাস ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতেও ছবিটি ব্যবহার করে একই দাবি করা হয়।
আরামবাগ টিভি প্লাস চ্যানেলের সঞ্চালক সফিকুল ইসলাম ছবিটি দেখিয়ে ভিডিওর একাংশে বলেন তার 'মনে হচ্ছে' ছবিটিতে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ছবিটি কারসাজি করা না তা সত্যিই অনুব্রত মণ্ডলের মাছ বিক্রির ছবি - সেই সিদ্ধান্তের ভার তিনি দর্শকের হাতে ছেড়ে দেন।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনে প্রকাশিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের অতীত ও সাম্প্রতিক কিছু ছবির সাথে ভাইরাল ছবিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তির তুলনা করে।
ওই তুলনায় আমরা ভাইরাল ছবিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তির বাম গালে আঁচিলের উপস্থিতি দেখতে পাই যা অনুব্রত মণ্ডলের ছবিগুলিতে অনুপস্থিত।
নিচে সেই ছবিগুলির তুলনা দেখতে পাওয়া যাবে।
এরপর আমরা ফেসবুকে কিছু পোস্ট দেখতে পাই যেখানে ভাইরাল ছবিতে উপস্থিত ব্যক্তিকে হুগলির শেওড়াফুলির (Sheoraphuli) এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলে দাবি করা হয়। আমরা লক্ষ্য করি, শেওড়াফুলির এক ফেসবুক ব্যবহারকারীও সেরকম এক পোস্ট শেয়ার করে ছবিতে উপস্থিত ব্যক্তিকে তার পরিচিত এক মৎস্য ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ভুল তথ্য না প্রচার করার অনুরোধ জানান।
এমনই এক ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়, "ইনি শেওড়াফুলি এলাকার একজন সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী যার সাথে অনুব্রতর চেহারার মিল থাকলেও তার নানাবিধ ক্রাইমের কোন মিল নেই। সকলে ভুল ভেবে এনার ছবি শেয়ার করছে, এতে এনার ও তাঁর পরিবারকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। শুধুমাত্র চেহারায় মিল থাকার জন্য কাউকে এভাবে অজ্ঞানত হেনস্থা করাটা অনভিপ্রেত।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
এই সূত্র ধরে বুম বাংলা শেওড়াফুলির সাংবাদিক সন্তু মুখার্জির সাথে যোগাযোগ করে। সন্তু আমাদের নিশ্চিত করে বলেন ভাইরাল ছবিটি শেওড়াফুলির একজন মৎস্য ব্যবসায়ীর।
সন্তু এছাড়াও বুম বাংলাকে সুকুমার হালদার (Sukumar Halder) নামের ওই মৎস্য ব্যবসায়ীর এক বক্তব্যের ভিডিও পাঠান। সুকুমার তাঁর ছবি ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, "আমি অনুব্রত মণ্ডল? আমি তো সুকুমার হালদার, সেটা সবাই জানে। আমি এখানে ২৬ বছর ধরে মাছ বিক্রি করছি।"
শেওড়াফুলির ওই মৎস্য ব্যবসায়ী তার অজান্তে ছবিটি তোলা হয়েছে বলে জানান। মৎস্য ব্যবসায়ী সুকুমার হালদারের বক্তব্য নিচে দেখুন।
(সম্পাদকীয় নোট: সুকুমার হালদারের মন্তব্য ও ভিডিও ৯ মার্চ ২০২৩ সংযুক্ত করে প্রতিবেদনটি সংস্করণ করা হয়েছে)