আমেরিকার দাবানলের সঙ্গে ভুয়ো দাবিতে জুড়ল কম্পিটারে তৈরি পাখির ভিডিও
বুম দেখে পাখির চারপাশে আগুন ধরে যাওয়ার দৃশ্যটি কম্পিটারে তৈরি এর সঙ্গে আমেরিকার দাবানলের কোনও সম্পর্ক নেই।
আরবি ভাষার এক ইসলামি বক্তা এবং কম্পিউটার সাইমুলেশনে (Simulation Video) তৈরি একটি পাখির ভিডিও (Bird) কোলাজ করে সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, ১৪০০ বছর আগে ইসলামে দাবানল সৃষ্টির জন্য যে আগুনে পাখির কথা বলা হয়েছিল, সেটাই আমেরিকার এই দাবানলের (wildfires) কারণ।
ভিডিওটিতে দুটি ফুটেজ পরস্পরের সমান্তরালে দেখানো হয়েছে— যার একটিতে আবদুল দায়েম আল-কাহিল আরবিতে বক্তৃতা দিচ্ছেন আর অন্যটিতে একটি পাখি তার ঠোঁট দিয়ে নিজের চারপাশে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
হিন্দিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "আপনারা কি আমেরিকার জঙ্গলে আগুন লাগার কথা শুনেছেন? এখন তারা জেনেছে যে, এই ভিডিওতে দেখা যে পাখিটি আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, আল্লার পয়গম্বর সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৪০০ বছর আগেই তার কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং সাহাবা-ই-ইক্রামও তাতে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন! এখন সেটাই সারা দুনিয়ায় মান্যতা পাচ্ছে।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
(হিন্দিতে ক্য়াপশন: अमरीका में आप हमेशा जंगलो में आग लगने की खबर सुनते थे ? अब जाकर उन्हें पता चला है कि यह विडियो में देखा गया पक्षी आग लगा रहा है,अल्लाह के नबी सल्ललाहु अलयही वस्सलम ने 1400 साल पहले इस पक्षी का जिक्र कीया था,तब सहाबा ए इक्राम भी ताज्जुब करते थे , दुनिया में अब जाकर पृष्ठी हुई!)
ভিডিওটি একটি ইংরেজি ক্যাপশন সহও ঘুরছে, যাতে লেখা, "পাশ্চাত্য দেশগুলোয় সব সময়েই শোনা যায় জঙ্গলে আগুন লেগে যাওয়ার কথা। এখন ওরা আবিষ্কার করেছে যে ওই পাখিটাই আগুন লাগায়। অথচ ১৪০০ বছর আগেই নবি মহম্মদ এই পাখিটি সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। আজ শ্বেতাঙ্গরাও এই পাখিটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েছে।"
ইংরাজি ক্যাপশন সহ ভিডিওটি বুম-এর হেল্পলাইন নম্বরেও সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ সহ এসে পৌঁছেছে—
তথ্য যাচাই
বুম দুটি ভিডিওকেই মূল ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে দেখেছে, প্রথমটিতে পাখিটির আগুন লাগানোর দৃশ্যটি পুরোপুরি সাইমুলেট করা অর্থাৎ কম্পিউটার প্রযুক্তির কৌশলের খেলা।
প্রথম ভিডিও
প্রথম ভিডিওটি ভেঙে আরবি ভাষ্যকারের ইসলামি বক্তৃতার খোঁজ করে ইউটিউবে একটি ভিডিও ৭ নভেম্বর, ২০১৯ আপলোড হতে দেখি। আরবি ভাষায় লেখা ভিডিওটির শিরোনামের অনুবাদ হলো: "অস্ট্রেলিয়ায় ঘন-ঘন জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনায় বিজ্ঞানীরাও এত কাল বিভ্রান্ত হয়েছেন, এখন তাঁরা জেনেছেন যে একটি পাখিই এর কারণ।"
(আরবিতে মূল শিরোনাম: ظاهرة حرائق الغابات في استراليا حيرت العلماء ثم اكتشفو انها بسبب طائر !)
ভিডিওটির বিবরণ অংশে ইসলামি বক্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে— ডঃ আবদুল দায়েম আল-কাহিল বলে। এই সূত্র অনুসরণ করে আমরা ইউটিউবে ডঃ আল-কাহিল-এর নিজের চ্যানেলে একই ভিডিও আপলোড হয়েছে খুঁজে পাই, যা ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়।
ইউটিউব চ্যানেলটির ডঃ কাহিল সম্পর্কিত বিবরণে তাঁকে কোরান এবং সুন্নার বৈজ্ঞানিক চমৎকারের গবেষক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ভিডিও
পাখিটির ভিডিওর মূল ফ্রেমগুলির সার্চ করে আমরা ইউটিউবে ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে ফাব্রিচিও রাবাচিম চ্যানেলে আপলোড হতে দেখেছি, কোয়েরো-কোয়েরো পাওয়ার নাম দিয়ে। এই ভিডিওটিতে বেশ কাছ থেকেই পাখিটাকে দেখা যাচ্ছে এবং প্রথমে সেটার রঙ নীল হয়ে যায়, তারপর তার ঠোঁট থেকে এক ধরনের আগুন বেরয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই আগুন থেকে বেরনো ধোঁয়ার ভিতর থেকে পাখিটা জীবন্তই বেরিয়ে আসে।
চ্যানেলের বর্ণনা অনুযায়ী ফাব্রিচিও রাবাচিম হলো একটি স্বশিক্ষিত পেশাদার সংস্থা, যারা বিগত ১৫ বছর ধরে চলচ্চিত্র ও কম্পিউটার গ্রাফিক্সে হাত পাকিয়েছে।