সুইজারল্যান্ডের ভিডিও মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল কলকাতার ঘটনা বলে
বুম দেখে ভিডিওটি সুইজারল্যান্ডে লুসার্ন ও ব্যাসেল-এর মধ্যে ফুটবল ম্যাচের পর উন্মত্ত জনতার গাড়ি ভাঙচুর করার দৃশ্য।
একটি পুরনো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সুইজারল্যান্ডে (Switzerland) একটি ক্লাব স্তরের ফুটবল ম্যাচের পর হাঙ্গামাকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করছে। কিন্তু সেটি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় (Kolkata) একটি সাম্প্রদায়িক আক্রমণের দৃশ্য সেটি।
ভিডিওটি রাতে তোলা। তাতে মুখ ঢাকা ও সাদা সুরক্ষা-পোশাক পরা এক দল মারমুখি লোককে গাড়ির পেছনে ধাওয়া করতে দেখা যাচ্ছে। পরমুহূর্তেই সেগুলি এক হিংসাত্মক আক্রমণের শিকার হয়। ভিডিওটির হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনটি এই রকম, "বলা হচ্ছে ভিডিওটি কলকাতার। বাংলার পরিস্থিতি পাকিস্তানের মতো। এবং যারা গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গছে তারা বিধর্মী। কেউ জানে না যে, ৭০ বছরে, ৮ রাজ্যে হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এবার আপনাদের অন্যভাবে ভাবতে হবে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: वीडियो कलकत्ता का बताया जा रहा है बंगाल में हालात एकदम पाकिस्तान जैसे बने हुए हैं, और ये जो गाड़ियों के शीशे तोड़ रहे हैं वो विधर्मी हैं। 70वर्षो में हिन्दू 8 राज्यों में अल्पसंख्यक हो गये किसी को पता भी नहीं चला, अब सोचना पड़ेगा नहीं तो.........?????????)
পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: ওড়িশার পুরনো ভিডিও ছড়াল বীরভূমের বগটুইয়ে হিংসার দৃশ্য বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি সম্পর্কে যে দাবি করা হয়েছে, সেটি মিথ্যে। ভিডিওটি প্রায় চার বছরের পুরনো। এবং ঘটনাটি ঘটে সুইজারল্যান্ডে।
ভিডিওটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা সেটির প্রধান ফ্রেমগুলি আলাদা করে, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি। তার ফলে, ২২ মে, ২০১৮ '২০ মিন' নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসে। তাতে ওই একই ভিডিওটি ছিল, যেটিকে এখন কলকাতার বলে চালানো হচ্ছে।
ওই জার্মান রিপোর্টটিতে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যায়, সেন্ট জেকব স্টেডিয়ামের কাছে, প্রায় ৯০ জন গুন্ডা মারপিট করে। সাদা সুরক্ষা-পোশাক পরা, ব্যাসেল-এর প্রায় ৩০ জন লোক ব্রিসস্ট্রাসে'র অটোবান বা হাই রোডের ওপর ব্রিজের থাম রঙ করছিলেন। রাত ১১টা নাগাদ আনুমানিক ৬০ জনের একটি দল তাঁদের আক্রমণ করে। স্টেডিয়ামের উত্তর দিকে একটি কালো জিপ থেকে চালককে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু চালক গাড়ি ঘুরিয়ে পালাতে সক্ষম হন। ওই মারমুখি জনতার আক্রমণের দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায়।
তথ্য-যাচাই করতে গিয়ে আমরা দেখি, বেশ কয়েকটি জার্মান সংবাদ ওয়েবসাইট ঘটনাটি সম্পর্কে খবর করে। খবরে বলা হয় ১৮ মে, ২০১৮ সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেল-এ ব্রিসস্ট্রাসে'র একটি স্টেডিয়ামের কাছে, ব্যাসেল ও লুসার্ন ক্লাবের মধ্যে ফুটবল চ্যাম্পিয়ানশিপ ম্যাচের পর হিংসাত্মক সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
খবরে বলা হয়, ওই সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। মনে করা হয়, প্রায় ৯০ জন জড়িয়ে পড়েন ওই হাঙ্গামায়। যে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁদের ফোনে ঘটনাটির ভিডিও তোলেন, পুলিশ তাঁদেরও খোঁজ করে।
এই সূত্র ধরে, আমরা ইউটিউব-এ সার্চ করি। তার ফলে, ওই ঘটনার ওপর তোলা বেশ কিছু ভিডিও দেখতে পাই আমরা। ভাইরাল ভিডিওতে যে রকম দৃশ্য আছে, সে রকম দৃশ্যই দেখা যায় সেগুলিতে। ২১ মে, ২০১৮, ইউটিউব চ্যানেল 'হুলিগ্যানস টিভি'তে আপলোড করা একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল: "সুইজারল্যান্ডে লড়াই: ব্যাসেল বনাম জুরিখ ও কার্লস্রুহে। ১৯.০৫.২০১৮।"
ইউটিউবে, ১৮ মে, ২০১৮ আপলোড হওয়া ঘটনার ভিডিও দেখা যাবে এখানে ও এখানে ।
এর আগে ২০১৮ সালে ভিডিওটি অন্য ভুয়ো দাবি সমেত ভাইরাল হলে বুম তার তথ্য যাচাই করে।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের ছবি