ছোট জাতের হিন্দু বলে পড়াশুনায় বাধা? ভুয়ো দাবিতে ছড়াল মধ্যপ্রদেশের ভিডিও
বুমকে সিধি জেলার এসপি ডঃ রবীন্দ্র ভর্মা জানান, অভিযুক্তরা নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং হামলার ঘটনাটি রাস্তা আটকানো নিয়ে বচসার কারণে ঘটে।



স্কুলভ্যানে হামলা চালিয়ে দুই যুবকের গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়ার এক ভিডিও পোস্ট করে সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে দাবি করা হয় মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) সিধি জেলায় উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নিম্নবর্ণের হিন্দু শিশুদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করতে গাড়িতে হামলাটি চালিয়েছে।
বুম সিধি জেলার এসপি ডঃ রবীন্দ্র ভর্মার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেরাই নিম্নবর্ণের হিন্দু। ভর্মা বলেন, স্কুলভ্যানের চালকের সাথে রাস্তা আটকানো নিয়ে বচসার কারণেই ওই দুই যুবক হামলা চালায় শিশুভর্তি ওই গাড়িতে।
২৯ সেকেণ্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওয় প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকা এক গাড়ির উপর দুই যুবকের হামলা চালানোর দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওর পরের অংশে হাত দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙার ঘটনায় স্কুলভ্যানে থাকা শিশুদের ভয় পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে দেখা যায়।
ভিডিওটি পোস্ট করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, "এটা আর ভারত নেই, এ যেন আতঙ্কবাদিদের পিঠ স্থান। ওহে ছোটো জাতের হিন্দু! শিক্ষা তোমার অধিকার নয়। তোমাদের বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ কর।ছোটো ছোটো শিশু ভর্তি স্কুল গাড়িতে ইঁট দিয়ে আক্রমণ !! আতঙ্কিত শিশু শিক্ষার্থীরা। বিজেপির ডবল ইঞ্জিন পরিচালিত মধ্যপ্রদেশের সিন্ধি জেলার ঘটনা।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে ভাইরাল ভিডিওটির কিছু ফ্রেমকে রিভার্স সার্চ করে মধ্যপ্রদেশ-ভিত্তিক সাংবাদিক কাশিফ কাকভির করা এক পোস্ট খুঁজে পাই। ২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখের সেই পোস্টে কাকভি ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করে ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলার বলে উল্লেখ করেন।
কাকভি লেখেন, "মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলায় দুই মাতাল দুর্বৃত্ত শিশুসমেত থাকা এক স্কুল ভ্যানে হামলা চালায়। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে এই দুই যুবক পথ আটকে রেখেছিল। চালক ওমপ্রকাশ গুপ্ত তাদের সরে যেতে বললে এরা তাকে উপর আক্রমণ করে। যখন ভ্যানের কাঁচ ভেঙে যায়, ভ্যানের ভেতরে তখন শিশুরা উপস্থিত ছিল এবং ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
ঘটনাটির বিষয়ে বিশদে জানতে বুমের তরফে কাকভির সাথে যোগাযোগ করা হয়। কাকভি বর্তমানে ভিডিওটির সাথে ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করে জানান, রাস্তা আটকানো নিয়ে বচসার কারণেই স্কুলভ্যান ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটে।
কাকভি আরও বলেন, ঘটনায় অভিযুক্তদের দুজনের পদবীই সাকেত, যার অর্থ তারা নিজেরাই তফসিলি জাতির।
বুম এরপর সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চ করে হিন্দি দৈনিক অমর উজালার প্রকাশিত ২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখের এক প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় সিধি জেলার অন্তর্গত নেবুহান গ্রামে ইন্ডিয়ান এক্সিলেন্স পাবলিক স্কুলের ভ্যানে রাজা সাকেত ও চরকু সাকেত নামের দুই মাতাল যুবক হামলাটি করে। পরে ওই ভ্যানচালক ওমপ্রকাশ গুপ্তা পুলিশের কাছে এব্যাপারে অভিযোগ জানালে জামোড়ি থানার পুলিশ মারপিট ও অন্যান্য ধারা সমেত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।
বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বুম সিধি জেলার পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডঃ রবীন্দ্র ভর্মার সাথেও যোগাযোগ করে। ভর্মাও ভাইরাল ভিডিওর সাথে করা বর্তমান দাবিটি ভুয়ো বলে খণ্ডন করেন।
ভর্মা বুমকে বলেন, "দাবিটি সম্পূর্ণরূপেই ভুল। রাজা সাকেত ও চরকু সাকেত নামের এই দুই অভিযুক্ত যুবক বাইকে করে তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিল, আর উল্টোদিক থেকে স্কুলভ্যানটি আসছিল। স্কুলভ্যানের সামনে এসে বাইকটির ভারসাম্য হারালে তারা মাটিতে পড়ে যান। এরপর স্কুলভ্যানের চালক তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে, দু'পক্ষের মধ্যে ঝগড়া ও মারপিট শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই যুবকদের একজন হাত চালিয়ে স্কুলভ্যানের জানালার কাঁচ ভেঙে দেয়। স্কুলভ্যান চালক এবং ওই দুই যুবকের একে ওপরের মধ্যে এমনিতে কোনও সম্পর্কও নেই।"
জাতপাতের দাবিটির বিষয়েও স্পষ্ট করে ভর্মা জানান, "অভিযুক্ত যুবকরা দুজনেই তফসিলি জাতির। তাই নিম্নবর্ণের হিন্দু বাচ্চাদের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বাধা দেওয়ার দাবিটাই ভিত্তিহীন কারণ অভিযুক্তরা নিজেরাই নিম্নবর্ণের।"