সাম্প্রদায়িক দাবিতে ছড়াল মির্জাপুরের দুই মুসলিম পরিবারের বচসার ভিডিও
বুম দেখে ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। পারিবারিক বচসা হয়েছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যেই।
একটি অস্বস্তিকর ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক দল পুরুষ ও মহিলা মারামারি করছে। কিন্তু সেটি এই মিথ্যে সাম্প্রদায়িক দাবি (Communal Spin) সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, জঞ্জাল ফেলা বন্ধ করতে বলায়, একজন মুসলমান (Muslim) ব্যক্তি তাঁর হিন্দু (Hindus attacked) প্রতিবেশীদের আক্রমণ করেন।
বুম দেখে, ঘটনাটির কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই। আক্রমণকারী ও আক্রান্ত উভয়ই মুসলমান।
'জি হিন্দুস্থান'-এর সাংবাদিক তুষার শ্রীবাস্তব ভিডিওটি টুইট করেন। সেটির হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে উনি লেখেন, "মির্জাপুরের কাটরা থানার অধীনস্ত এলাকায়, জঞ্জাল ফেলতে নিষেধ করায়, এক হিন্দু পরিবারের মহিলাকে মারাত্মক ভাবে আক্রমণ করে আবদুল। একে বলে সন্ত্রাস। তাই আবদুলকে কেন সন্ত্রাসবাদী বলা হবে না।"
(হিন্দিতে মূল লেখা: मिर्जापुर के कटरा थाना क्षेत्र में अब्दुल ने कचरा फेंकने को मना करने पर हिंदू परिवार की महिलाओं के ऊपर जानलेवा हमला कर दिया वीडियो में साफ तौर पर देखा जा सकता है कि किस निर्दयता से अब्दुल महिलाओं की जान लेने पर आमादा है अब क्यों न अब्दुल को आतंकी कहा जाए इसी को तो आतंक कहते है)
টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বেশ কিছু টুইটার ব্যবহারকারী একই ধরনের ক্যাপশন সমেত ভিডিওটি শেয়ার করেন।
সেই রকম একটি টুইট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের মতাদর্শী অগ্রানাইজার উইকলির নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও ভিডিওটি টুইট করা হয়।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটি ফেসবুকেও ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটি থেকে একটি স্ক্রিনশট নিয়ে ও প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে, বুম সেটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, আমরা ওই একই ভিডিও দেখতে পাই। ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, 'মির্জাপুর অফিসিয়াল' নামের এক ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
সেটির সঙ্গে দেওয়া হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়, "মির্জাপুর: জঞ্জাল ফেলা সংক্রান্ত মামুলি বিবাদের কারণে, এক ব্যক্তি লোহার রড দিয়ে মহিলাদের মারে। যে যুবক ভিডিও তুলছিলেন তাঁকেও ও রড দিয়ে আক্রমণ করা হয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। কাটরা কোতওয়ালির ইমামবারা এলাকার কুঞ্জলগির বাগ-এ ঘটনাটি ঘটে।"
ভিডিওটির বিবরণে সাম্প্রদায়িকতার কোনও উল্লেখ ছিল না। মির্জাপুর অফিসিয়াল-এর টুইটার হ্যান্ডেল ও ইউটিউব চ্যানেলেও আমরা ওই একই ভিডিও দেখতে পাই।
এরপর, ঘটনাটি সম্পর্কে আরও জানতে, আমরা মিরজাপুর অফিসিয়াল-এর প্রতিষ্ঠাতা বিশাল ইয়োমান-এর সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি আমাদের বলেন, "কাটরা কোতওয়ালির ইমামবারা এলাকায়, কুঞ্জলগির বাগ-এ, ঘটনাটি ঘটে ১৬ জানুয়ারি, ২০২২। আমরা ১৭ জানুয়ারি ভিডিওটি আপলোড করি।"
"জঞ্জাল ফেলাকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটে। এখানে দু' তরফের লোকজন একই সম্প্রদায়ের সদস্য। অভিযুক্তের নাম সম্ভবত সালমান," বুমকে বলেন বিশাল।
তাছাড়া, মিরজাপুরের এসপি সঞ্জয় ভার্মার বক্তব্যও বিশাল আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এসপিকে বলতে শোনা যায়, ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই।
এসপি সঞ্জয় ভার্মা স্পষ্ট করে জানান যে, ওই ঘটনার দু' তরফের মানুষেরাই মুসলমান। এবং একই পরিবারের সদস্য।
আমরা কাটরা কোতওয়ালি থানার সঙ্গেও যোগাযোগ করি। ঘটনাটি সম্পর্কে তাঁরাও একই কথা বলেন ও জানান এ বছর জানুয়ারি মাসে সেটি ঘটে। ১৭ জানুয়ারি ২০২২ ২০২২ 'জাগরণ'-এ ওই ঘটনাটি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
৬ এপ্রিল, ২০২২ মির্জাপুর পুলিশ তাঁদের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে একই ভিডিওর অংশ শেয়ার করে।
আরও পড়ুন: নারীবিদ্বেষী মন্তব্য সহ ছড়াল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদিত ছবি