
ফল বিক্রেতা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে নাটিকা ভিডিও সাম্প্রদায়িক দাবিতে ভাইরাল
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি আসলে চিত্রনাট্য অনুযায়ী নাট্যায়িত দৃশ্য।

একটি নাট্যায়িত (Scripted Videos) ভিডিওতে এক ফল (Fruit Seller) বিক্রেতাকে তাঁর ক্রেতাদের ঠকাতে দেখা গেল। এই ভিডিওটির ক্যাপশনে মিথ্যে সাম্প্রদায়িক (Communal Claims) মোচড় দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে, এবং দাবি করা হয়েছে যে, বিক্রেতা এক জন মুসলমান (Muslims)।
বুম যাচাই করে দেখে যে, ভাইরাল ভিডিওটি আসলে এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের তৈরি, এবং ভিডিওটি শেয়ার করার সময় যে দাবি করা হয়েছে, তার সঙ্গে ভিডিওটির কোনও সম্পর্ক নেই।
এর আগেও বুম বিভিন্ন এ রকম নাট্যায়িত ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে যেগুলি সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত সাম্প্রদায়িক দাবির সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে। পড়ুন এখানে।
যদিও অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এ রকম ভিডিও আপলোড করার সময় সঙ্গে ডিসক্লেমার দিয়ে দেন যে, এটি 'শিক্ষার উদ্দেশ্যে' বানানো হয়েছে, তবুও এই ধরনের ভিডিওগুলিকে পরে খণ্ডিত করে, মিথ্যে ক্যাপশন দিয়ে ভুল ভাবে ব্যবহার করা হয় এবং মূলত সংখ্যালঘুদের নিশানা করে ভিডিওগুলি শেয়ার করা হয়। তবে এই ভিডিওটির ক্ষেত্রে কিন্তু সে রকম কোনও ডিসক্লেমার ছিল না।
ভিডিওটিতে এক ফল বিক্রতাকে ক্রেতাদের ওজনে কম দিয়ে ঠকাতে দেখা যাচ্ছে। পরে দু'জন ব্যক্তি আসেন এবং বিক্রেতাকে একটি থাপ্পড় মারেন এবং অন্যদের সামনে তার দুষ্কর্ম প্রকাশ করে দেন।
একটি ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটি শেয়ার করে তার ক্যাপশনে হিন্দিতে লেখা হয়েছে, "মুসলিম জিহাদিদের কাছ থেকে কিছু কেনার আগে এই ভিডিওটি দেখুন। ফল বিক্রেতার ভিডিও। কোনও কিছু কেনার আগে বিক্রেতার নাম জেনে নিন। নিজেরা সচেতন হন এবং অন্যদের সচেতন করুন।"
একই দাবিসমেত সত্যতা যাচাই করার জন্য বুমের হেল্পলাইনেও ভিডিওটি আসে।
তথ্য যাচাই
হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, এবং তার সঙ্গে যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে কিছু শব্দ নিয়ে বুম ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করেছে। হিন্দিতে লেখা ওই ভিডিওর ক্যাপশনের অনুবাদ, "এই জিহাদী ফল বিক্রেতার ভিডিওটি দেখুন। কিছু কেনার সময় সচেতন ভাবে দেখে কিনুন, এবং অন্যদের সচেতন করুন।"
(হিন্দি: जिहादियों का अब ये भी फल वालो की वीडियो ` देख के समान लो और जागरूक रहो औरों को जागरूक करो।)
এই একই ভিডিও দিয়ে করা একটি একটু অন্য রকম ক্যাপশন সমেত একটি ফেসবুক পোস্ট আমরা দেখতে পাই। ওই পোস্টে নোটিফিকেশনে লেখা হয়েছে, "রাজু ভারতীর তৈরি অন্যান্য অরিজিনাল ভিডিও দেখুন।"
বুম রাজু ভারতীর ফেসবুক প্রোফাইল দেখে এবং সেখানে তার টাইমলাইনে অনেক নাট্যায়িত ভিডিও দেখতে পায়। এই পেজটির সঙ্গে লিঙ্ক করা ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল এবং ইউটিউব চ্যানেলও আমরা খুঁটিয়ে দেখি এবং দেখতে পাই যে, সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে রাজু এক জন অভিনেতা ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তাঁর ফেসবুক পেজে এই কথাটি লেখা নেই।
রাজু ভারতীর ফেসবুক পেজের সঙ্গে লিঙ্ক করা ইউটিউব চ্যানেল ভারতী প্র্যাঙ্কের অ্যাবাউট সেকশনে লেখা হয়েছে, "এই চ্যানেলটি মজা এবং বিনোদনের জন্য।" চ্যানেলটির ২.৮ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার আছে।
বুম দেখতে পায় ভিডিওটি ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল দু'জায়গাতেই আপলোড করা হয়েছে।
এই একই ভিডিও রাজু ভারতীর ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ২৬ মার্চ আপলোড করা হয়, কিন্তু সেখানে সাম্প্রদায়িক দাবিসমেত কোনও ক্যাপশন ছিল না। ওই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, "ইউনাইটেড স্টেট।" ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া বিভিন্ন ক্যাপশন থেকে বোঝা যায় যে, সেটি নাট্যায়িত।
ভিডিওটি ১০৯,০০০ বার শেয়ার করা হয়েছে এবং ১৩,০০০ কমেন্ট করা হয়েছে।
ভারতী প্র্যাঙ্ক ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও ২১ মার্চ আপলোড করা হয়েছিল। সঙ্গে হিন্দিতে লেখা যে ক্যাপশন ডেওয়া হয়েছে তার অনুবাদ, "ফল বিক্রেতার এই ঘৃণ্য আচরণ দেখে আপনি স্তম্ভিত হয়ে যাবেন।"
হিন্দি: फल वाले का घिनैना हरकत देख कर आपका होश उड़ जायेगा ||)
ভারতীর টাইমলাইন খুঁজে বুম এ রকমই আর একটি ভিডিও দেখতে পায়, যাতে চিত্রনাট্যটি একটু অন্য রকম। সেখানে ফল বিক্রেতার জায়গায় এক সব্জি বিক্রেতাকে ওজনে ফাঁকি দিয়ে ক্রেতাদের ঠকাতে দেখা গেছে। এই ভিডিওতে একই ব্যক্তিকে ওই সব্জি বিক্রেতাকে ক্রেতাদের ঠকানোর জন্য ধরে ফেলতে দেখা যাচ্ছে।
২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা ভিডিওটির ক্যাপশনের অনুবাদ, "ইউনাইটেড স্টেট: সব্জি বিক্রেতা একটি মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ করল।"
(হিন্দি: united state सब्जी वाले ने लड़की साथ किया गलत काम
ভিডিওটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
বুম ই-মেইলের মাধ্যমে রাজু ভারতীর ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেলেই আমরা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেব।
আরও পড়ুন: নিউজ উইক ম্যাগাজিনের বিচারে বিশ্বের সেরা হাসপাতাল কলকাতার এস.এস.কে.এম?
Claim : ফল কেনার আগে নাম জিঞ্জেস করুন ফল বিক্রেতার
Claimed By : Facebook Post
Fact Check : False
Next Story